• হোম
  • স্কুল ১-১২
  • সাধারণ
  • নবম-দশম শ্রেণি

মহাবিশ্ব ও আমাদের পৃথিবী

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

মহাবিশ্ব ও আমাদের পৃথিবী

নক্ষত্র (Star)

যেসব জ্যোতিষ্কের নিজের আলো আছে তাদের নক্ষত্র বলে। মহাকাশে অসংখ্য নক্ষত্র রয়েছে (চিত্র ২.১)। খালি চোখে আমরা মাত্র কয়েক হাজার নক্ষত্র দেখতে পাই। এদের কয়েকটি পৃথিবী থেকে শক্তিশালী দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে দেখা যায়। নক্ষত্রগুলো হলো জ্বলন্ত গ্যাসপিন্ড, এরা হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম গ্যাস দিয়ে তৈরি। এই গ্যাস অতি উচ্চ (প্রায় ৬০০০° সেলসিয়াস) তাপমাত্রায় জ্বলছে। সূর্যের প্রখর আলোর জন্য দিনের বেলায় অন্যান্য নক্ষত্র দেখা যায় না।

পৃথিবী থেকে দেখলে মনে হয় নক্ষত্রগুলো যেন একই সমতলে অবস্থান করছে। কিন্তু পৃথিবী থেকে এরা বিভিন্ন দূরত্বে অবস্থান করছে। পৃথিবী ও নক্ষত্রদের মধ্যে এবং নক্ষত্রদের পরস্পরের মধ্যে দূরত্ব এত বেশি যে কিলোমিটার দ্বারা এই দূরত্ব প্রকাশ করা যায় না। এই দূরত্ব আলোক বর্ষ এককে মাপা হয়। আলো প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৩ লক্ষ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে। এই বেগে এক বছরে আলো যে পরিমাণ দূরত্ব অতিক্রম করে তাকে এক আলোক বর্ষ বলে। সূর্য পৃথিবীর নিকটতম নক্ষত্র। সূর্য থেকে পৃথিবীতে আলো আসতে সময় লাগে ৮ মিনিট ১৯ সেকেন্ড। সূর্যের নিকটতম নক্ষত্র প্রক্সিমা সেন্টারাই (Proxima Centauri)। পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৪.২ আলোক বর্ষ।

নক্ষত্রমণ্ডলী (Constellation): মেঘমুক্ত অন্ধকার রাতে আকাশের দিকে তাকালে মনে হয় কয়েকটি নক্ষত্র বিশেষ আকৃতিতে মিলে জোট বেঁধেছে। এভাবে আমাদের পরিচিত আকৃতিতে দেখা নক্ষত্রদলকে নক্ষত্রমণ্ডলী বলে। প্রাচীনকালে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এক একটি নক্ষত্রদলকে কাল্পনিক রেখা দ্বারা যুক্ত করে বিভিন্ন আকৃতি কল্পনা করে বিভিন্ন নাম দিয়েছেন। এদের কোনোটা দেখতে ভল্লুকের মতো, কোনোটা শিকারির মতো। এদের মধ্যে সপ্তর্ষিমণ্ডল (Great Bear), কালপুরুষ (Orion), ক্যাসিওপিয়া (Cassiopeia), লঘুসপ্তর্ষি (Little Bear), বৃহৎ কুকুরমন্ডল (Canis Major) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

গ্যালাক্সি (Galaxy): মহাকাশে গ্রহ, নক্ষত্র, ধূলিকণা, ধূমকেতু ও বাষ্পকুন্ডের এক বিশাল সমাবেশকে গ্যালাক্সি বা নক্ষত্রজগৎ বলে। মহাকাশে একশত বিলিয়ন গ্যালাক্সি রয়েছে (চিত্র ২.২)। এদের বিভিন্ন আকার ও আকৃতি রয়েছে, তবে এদের অধিকাংশই সর্পিলাকার বা উপবৃত্তাকার। সর্পিলাকার গ্যালাক্সিগুলো বৃহৎ আকৃতির এবং উপবৃত্তাকার গ্যালাক্সিগুলো বেশি উজ্জ্বল। এরা পরস্পর ব্যাপক ব্যবধানে অবস্থিত। কোনো একটি গ্যালাক্সির ক্ষুদ্র অংশকে ছায়াপথ বলে।

নীহারিকা (Nebula): নীহারিকা হলো মহাকাশে অসংখ্য স্বল্পালোকিত তারকার আস্তরণ। এদের আকার বিচিত্র। কিছু নীহারিকার দেহ গ্যাসীয় পদার্থে পূর্ণ। এদেরকে গ্যাসীয় নীহারিকা বলে। এক একটি নীহারিকার মধ্যবর্তী দূরত্ব ব্যাপক। এক একটি নীহারিকার মাঝে কোটি কোটি নক্ষত্র থাকতে পারে। এরা যেহেতু পৃথিবী থেকে কোটি কোটি আলোক বর্ষ দূরে রয়েছে, তাই এদের মাঝে যেসব নক্ষত্র রয়েছে তাদের পৃথকভাবে শনাক্ত করা যায় না।

ছায়াপথ (Milky Way): কোনো একটি গ্যালাক্সির ক্ষুদ্র অংশকে ছায়াপথ বা আকাশ গঙ্গা বলে। অন্ধকার আকাশে এদের উজ্জ্বল দীপ্তি দীর্ঘপথের মতো দেখায়। একটি ছায়াপথ লক্ষ কোটি নক্ষত্রের সমষ্টি। শীতকালে রাত্রিবেলা পরিষ্কার আকাশে লক্ষ করলে উত্তর-দক্ষিণে বেশ বড় পরিসরযুক্ত তেজোদ্দীপ্ত স্বচ্ছ দীর্ঘ আলোর রেখা দেখা যায়। তারকা খচিত এই আলোর পথই হলো ছায়াপথ। বিজ্ঞানীরা একে বিরাট চক্রাকার মন্ডল বলে অনুমান করেন। সৌরজগৎ এরকম একটি ছায়াপথের অন্তর্গত।

উল্কা (Meteor): রাতের মেঘমুক্ত আকাশে অনেক সময় মনে হয় যেন নক্ষত্র ছুটে যাচ্ছে বা কোনো নক্ষত্র যেন এই মাত্র খসে পড়ল। এই ঘটনাকে নক্ষত্রপতন বা তারা খসা বলে। এরা কিন্তু আসলে কোনো নক্ষত্র নয়, এদের নাম উল্কা (চিত্র ২.৩)। মহাশুন্যে অজস্র জড়পিন্ড ভেসে বেড়ায়। এই জড়পিন্ডগুলো অভিকর্ষ বলের আকর্ষণে প্রচন্ড গতিতে (সেকেন্ডে প্রায় ৩ কিলোমিটার) পৃথিবীর দিকে ছুটে আসে। বায়ুর সংস্পর্শে এসে বায়ুর সঙ্গে ঘর্ষণের ফলে এরা জ্বলে ওঠে। ফলে এদের ছুটন্ত তারা বলে মনে হয়। বেশিরভাগ উল্কাপিণ্ডই আকারে বেশ ক্ষুদ্র।

ধূমকেতু (Comet): মহাকাশে মাঝে মাঝে একপ্রকার জ্যোতিষ্কের আবির্ভাব ঘটে। এদের একটি মাথা ও একটি লেজ আছে। এসব জ্যোতিষ্ককে ধূমকেতু বলে। ধূমকেতু আকাশের এক অতি বিস্ময়কর জ্যোতিষ্ক (চিত্র ২.৪)। সৌরজগতের মধ্যে ধূমকেতুর বসবাস হলেও এরা কিছুদিনের জন্য উদয় হয়ে আবার অদৃশ্য হয়ে যায়। সূর্যের চারদিকে অনেক দূর দিয়ে এরা পরিক্রমণ করে। সূর্যের নিকটবর্তী হলে এদের দেখা যায়। এরা সূর্যের যত কাছাকাছি আসতে থাকে তত এদের লেজ লম্বা হতে থাকে। অনেক দীর্ঘ কক্ষপথে সূর্যকে পরিক্রমণ করে বলে এরা অনেক বছর পর পর আবির্ভূত হয়। জ্যোতির্বিজ্ঞানী এডমন্ড হ্যালি যে ধূমকেতু আবিষ্কার করেন তা হ্যালির ধূমকেতু নামে পরিচিত। হ্যালির ধূমকেতু প্রতি ৭৬ বছরে একবার দেখা যায়। হ্যালির ধূমকেতু ২৪০ খ্রিষ্টপূর্ব অব্দ থেকে দেখা যায় এবং সর্বশেষ ১৯৮৬ সালে হ্যালির ধূমকেতু দেখা গেছে।

গ্রহ (Planet): মহাকাশে কতকগুলো জ্যোতিষ্ক সূর্যকে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট পথে পরিক্রমণ করে। এদের নিজেদের কোনো আলো বা তাপ নেই। মহাকর্ষ বলের প্রভাবে এরা সূর্যকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। এরা সূর্য থেকে আলো ও তাপ পায়। এই তাপেই উত্তপ্ত হয়। এরা তারার মতো মিটমিট করে জ্বলে না। এসব জ্যোতিষ্ককে গ্রহ বলে। আমাদের সৌরজগতের আটটি গ্রহ হলো বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস ও নেপচুন।

উপগ্রহ (Satellite): কিছু কিছু জ্যোতিষ্ক গ্রহকে ঘিরে আবর্তিত হয়, এদের উপগ্রহ বা চাঁদ বলে। মহাকর্ষ বলের প্রভাবে এরা গ্রহকে কেন্দ্র করে ঘোরে। এদের নিজস্ব আলো বা তাপ নেই। এরা সূর্য বা নক্ষত্র থেকে আলো বা তাপ পায়। চাঁদ পৃথিবী গ্রহের একমাত্র উপগ্রহ। কোনো কোনো গ্রহের উপগ্রহ আছে, কোনোটির নেই। বুধ ও শুক্রের কোনো উপগ্রহ নেই। বিজ্ঞানের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন উপগ্রহ আবিষ্কৃত হচ্ছে।