- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- অনার্স
- আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার আর্থসামাজিক পটভূমি
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার আর্থসামাজিক পটভূমি
আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার কতিপয় বৈশিষ্ট্য লিখ।
ভূমিকা: আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার জন্য কখন থেকে তা সঠিকভাবে নির্ণয় করা কঠিন। তবে সাধারণভাবে বলা যায় যে, ইউরোপীয় রেনেসাঁর সূচনালগ্নে আধুনিক রাষ্ট্র দর্শনের জন্ম। আরও স্পষ্টভাবে বলা যায় যে, সম্রাট পঞ্চম চার্লস-এর জন্মকাল (১৫০০ খ্রিঃ) অথবা মার্টিন লুথার যে সময়ে প্রটেস্ট্যান্ট আন্দোলনের নেতৃত্ব দান করেন (১৭১৫ খ্রিঃ) অথবা বিজ্ঞানী গ্যালিলিও যখন দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে মহাকাশের অপার রহস্য উদঘাটনে লিপ্ত ছিলেন (১৬০৯) তখন থেকে আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার শুরু।আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার বৈশিষ্ট্যসমূহ আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার উদ্ভব ও বিকাশ বিশ্লেষণে আমরা এর নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো খুঁজে পাই।
১. লোকায়তবাদ: লোকায়তবাদ আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার মূল বৈশিষ্ট্য। রাষ্ট্রচিন্তার ক্ষেত্রে এ মতবাদ বিপুল প্রভাব বিস্তার করে। যার ফলে মধ্যযুগীয় গির্জাকেন্দ্রিক ভাবধারা ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ে। মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তা যেখানে ঈশ্বরকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছিল আধুনিক যুগের চিন্তাধারা সেখানে বহুলাংশে ইহলৌকিক।
২. ধর্মীয় প্রভাব থেকে রাজনীতিকে পৃথকীকরণ: আধুনিক যুগে মধ্যযুগীয় ধর্মের প্রাধান্যকে খর্ব করে ধর্ম হতে রাজনীতিকে পৃথক করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এ রাজনীতি হতে ধর্মকে পৃথক করা এবং ধর্মীয় শিক্ষার বাইরের বাস্তব শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমেই আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার ঠিকানা আরম্ভ।
৩. যুক্তিবাদ বা যুক্তির প্রাধান্য: আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার আর একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো যুক্তি। পূর্বে রাষ্ট্র সম্পর্কে ধর্মীয় ব্যাখ্যা খুব কমই যুক্তির মাধ্যমে চ্যালেঞ্জ করা হতো। রেনেসাঁ, সংস্কার আন্দোলন, সর্বোপরি ইহলৌকিক ও বিজ্ঞানের বাস্তবতা মানুষের মনের ক্ষেত্রে একটি। একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গির প্রবেশ ঘটায়, তা হলো যুক্তিবাদ।
৪. রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব আধুনিক যুগের শুরুতে যখন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা ও মধ্যযুগের দ্বিতীয়ার্ধে যখন লোকায়ত শাসকগণ গির্জার সার্বভৌমত্ব অস্বীকার করেন তখন থেকেই আধুনিক সার্বভৌমত্বের ধারা গড়ে উঠতে থাকে। এ সার্বভৌমত্ব ধারা জ্যা বদিন, হবস, লক, রুশো প্রমুখের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক রূপ লাভ করেছে। তারা সার্বভৌমত্বকে নিরঙ্কুশ বলে ঘোষণা করেছেন। তবে সেটা রাজার নয়- জনতার।
৫. সর্বাত্মকবাদ: সর্বাত্মকবাদকে আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার একটি বৈশিষ্ট্য হিসেবে ধরা হয়। সর্বাত্মকবাদী প্রচেষ্টায় রাষ্ট্র বিরোধী কোনো কিছুকে সহ্য করা হয় না। এ মতবাদে রাষ্ট্রকে সকল কিছুর উপরে স্থান দেওয়া হয়।
৬. পুঁজিবাদ আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার অন্যতম আর একটি বৈশিষ্ট্য, যা মধ্যযুগের সামন্তবাদের ধ্বংসাবশেষের উপর প্রতিষ্ঠিত। এখানে জমির চেয়ে যন্ত্রের মূল্য বেশি। আর এ পুঁজিবাদের ধারা থেকেই রাষ্ট্রচিন্তায় দেখা দিচ্ছে সাম্রাজ্যবাদ। যাকে লেনিন বলেছেন, "Highest stage of capitalism".
৭. সমাজতন্ত্র: আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার অন্যতম আর একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সমাজতন্ত্রের বিকাশ। সমাজতন্ত্রবাদীরা মধ্যযুগীয় অর্থনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে নতুন শোষণহীন সমাজব্যবস্থায় বিশ্বাস করে। এ চিন্তার ফলস্বরূপ সমাজ থেকে শোষণের অবসান ঘটে এবং মুষ্টিমেয় লোক সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকদেরকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারছে না।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার ক্ষেত্রে উপরিউক্ত ধারা ও বৈশিষ্ট্যগুলো ছাড়াও যুগের ক্রমবিকাশের সঙ্গে সঙ্গে নতুনত্বের আবির্ভাব হয়। কারণ সামাজিক বিজ্ঞানের কোনো চিন্তাধারা এবং মতবাদই স্থির নয়। নতুন চিন্তাধারার ফলে সমগ্র বিশ্বের সামাজিক, রাজনৈতিক জীবনের এক বিরাট পরিবর্তন সূচিত হয়।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ