- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- অনার্স
- আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার আর্থসামাজিক পটভূমি
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার আর্থসামাজিক পটভূমি
জাতীয়তাবাদ কি আধুনিক সভ্যতার প্রতি হুমকিস্বরূপ? তোমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।
ভূমিকা: জাতীয়তাবাদ একটি মানসিক ধারণা। জাতীয়তাবাদ বিকাশের ক্ষেত্রে এর দুটি রূপ পরিলক্ষিত হয়। একটি প্রকৃত জাতীয়তাবাদ এবং অপরটি উগ্র জাতীয়তাবাদ। প্রকৃত জাতীয়তাবাদ আধুনিক সভ্যতার একটি সহায়ক শক্তি। কিন্তু জাতীয়তাবাদের নামে উগ্র জাতীয়তাবাদ আধুনিক সভ্যতার প্রতি হুমকিস্বরূপ। কারণ উগ্র জাতীয়তাবাদের মধ্যে নিহিত রয়েছে ধ্বংসের বীজ।
জাতীয়তাবাদ আধুনিক সভ্যতার প্রতি হুমকিস্বরূপ কিনা : জাতীয়তাবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে আমরা এর দুটি দিক দেখতে পাব একটি ভালো দিক এবং অপরটি খারাপ দিক। জাতীয়তাবাদ আধুনিক সভ্যতার প্রতি হুমকিস্বরূপ কিনা তা এর বিপক্ষের ও পক্ষের নিম্নোক্ত আলোচনা থেকে প্রতিভাত হয়ে উঠবে।
জাতীয়তাবাদের বিপক্ষে যুক্তি: জাতীয়তাবাদের নেতিবাচক দিকগুলো নিম্নরূপ:
১. সভ্যতার সংকট: স্বদেশ ও স্বজনের প্রতি গভীর অনুরাগের ভিত্তিতে জাতীয়তাবাদ ও জাতির মধ্যে এক অন্ধ আবেগের সৃষ্টি হয়। এর ফলে জাতির মনে নিজের সম্পর্কে গর্ববোধ এবং অপর জাতির প্রতি ঘৃণা জন্মায়। এ ধরনের জাতীয়তাবাদ বিভিন্ন জাতির মধ্যে হিংসা, ঘৃণা ও বিদ্বেষের সম্পর্ক সৃষ্টি করে বিধায় মানবসভ্যতা সংকটের সম্মুখীন হয়।
২. সাম্রাজ্যবাদের আশঙ্কা জাতির আত্মস্বার্থ ও অহংবোধ থেকে সাম্রাজ্যবাদ সৃষ্টি হয়। প্রকৃত প্রস্তাবে উগ্র জাতীয়তাবাদের চরম পরিণতি হিসেবে সামরিকতাবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ সৃষ্টি হয়। ক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে জাতীয়তাবাদ সাম্রাজ্যবাদে রূপান্তরিত হয়।
৩. অন্যায়ের উৎস: উগ্র জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী সাম্রাজ্যবাদী শক্তিসমূহ উন্মুক্ত হয়ে দুর্বল রাষ্ট্রগুলোর উপরে ক্রমান্বয়ে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে আধিপত্য বিস্তার করে। সুতরাং উগ্র জাতীয়তাবাদের কারণে বিশ্বে বিভিন্ন অন্যায়ের সূচনা হয়।
৪. অগণতান্ত্রিক: জাতীয়তাবাদের উগ্র, হিংস্র ও বীভৎস প্রকাশ গণতান্ত্রিক ধ্যান-ধারণা ও মানবিক চেতনার পরিপন্থী। জাতীয়তাবাদী বক্তব্য অনুসারে ব্যক্তিস্বার্থকে অবহেলা করা হয়। অথচ গণতন্ত্র বা উদারনীতিবাদী বক্তব্য অনুসারে ব্যক্তিস্বার্থের উপর জোর দেওয়া হয়।
৫. বিশ্বশান্তির বিরোধী: উগ্র জাতীয়তাবাদ নিজ জাতিকে অগ্রাধিকার দেয় বলে এক জাতি অন্য জাতিকে হেয় মনে করে। যার ফলে যুদ্ধ ও বল প্রয়োগের নীতি অনুসরণ করার চেষ্টা করা হয়। যা বিশ্বে অশান্তি ডেকে আনে। পর পর দুটি বিশ্বযুদ্ধ উগ্র জাতীয়বাদেরই ফসল।
৬. সংকীর্ণতা সৃষ্টি করে জাতীয় স্বকীয়তা সংরক্ষণের অত্যন্ত বাসনা বিচ্ছিন্ন বর্বরতায় পরিণত হয়। উগ্র জাতীয়তাবাদের উদ্দেশ্য হলো পরজাতি বিদ্বেষ ও সামরিকতাবাদের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ সভ্যতা, সংস্কৃতি ও মননশীলতা গড়ে তোলা যা বিশ্বশান্তি ও ভ্রাতৃত্বের পরিপন্থী।
৭. অপদার্থ শাসকদের হাতিয়ার: উগ্র জাতীয়তাবাদ জাতিকে সংকীর্ণ করে বিধায় কোনো শাসক শ্রেণির ব্যর্থতা ও অসমর্থকে আড়াল করার জন্য কৌশলে শাসক শ্রেণি সংকীর্ণ স্বাদেশিকতার উন্মাদনা সৃষ্টির চেষ্টা করে। এভাবে অপদার্থ শাসকরা জাতীয়তাবাদকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে।
৮. বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদ: প্রকৃতপক্ষে, ধনতন্ত্রের বিকাশের পর্যায়েই জাতীয়তাবাদ বিকৃত রূপ ধারণ করে। সামন্ততন্ত্রের বিরুদ্ধে ধনতন্ত্রের প্রতিষ্ঠার পূর্বে বুর্জোয়া শ্রেণি জাতীয়তাবাদকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে।
৯. সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশের পরিপন্থী সভ্যতা ও সংস্কৃতির কোনো গণ্ডি নেই, কোনো সীমানা নেই। পারস্পরিক লেনদেনের মাঝে রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে সভ্যতা ও সংস্কৃতির আদান-প্রদানও চলে। কিন্তু উগ্র জাতীয়তাবাদের ফলে সাহিত্য, সংগীত, নৃত্য, শিল্পকলা ইত্যাদি কৃত্রিম রূপে পরিণত হয়, যা আধুনিক সভ্যতার জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ।
জাতীয়তাবাদের পক্ষে যুক্তিসমূহ: জাতীয়তাবাদের পক্ষে বা এর ইতিবাচক দিকগুলো নিম্নরূপ:
১. জাতীয়তাবাদ যুদ্ধের প্রকৃত কারণ নয়। আধুনিক যুগে যুদ্ধের প্রধান কারণ হলো একচেটিয়া পুঁজিবাদ বা সাম্রাজ্যবাদ। যখন পুঁজিবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলো অপর জাতিকে পদানত করার জন্য লুণ্ঠন এবং তাদের স্বাধীনতা অপহরণ করার জন্য দেশপ্রেমের মহৎ মানসিক বৃত্তির বিকৃতি ঘটায় তখনই বিকৃত জাতীয়তাবাদের উদ্ভব ঘটে। যা মানব সভ্যতার জন্য সর্বাপেক্ষা বড় শত্রু।
২. প্রলেতারীয় জাতীয়তাবাদ সমাজে সর্বহারা শ্রেণির প্রাধান্য ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা হলে এবং সর্বহারা শ্রেণি সামাজিক সংযোগ সাধনের মাধ্যমগুলোকে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করলে প্রলেতারীয় জাতীয়তাবাদের সৃষ্টি হয় যা আন্তর্জাতিকতাবাদ, বিশ্বশান্তি ও মানব সভ্যতার নিয়ামক এবং দেশ ও জাতির স্বাধীনতা বিকাশের সমানাধিকারে বিশ্বাস। এভাবে সকল জাতির মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপিত হবে।
উপসংহার: উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে, জাতীয়তাবাদের দুটি দিক রয়েছে। যথা- সৃজনশীল বা গঠনমূলক এবং ধ্বংসাত্মক দিক। সুতরাং জাতীয়তাবাদ যখন বিকৃত রূপ ধারণ করে তখনই তা সভ্যতার পথে হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। তবে প্রকৃত জাতীয়তাবাদ মানবসভ্যতা বিকাশে সহায়ক।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ