• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
  • মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী বাঙালি ও বহির্বিশ্ব
মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী বাঙালি ও বহির্বিশ্ব

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী বাঙালি ও বহির্বিশ্ব

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারত সরকারের ভূমিকা

বাংলাদেশ ভারতীয় উপমহাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত। এর পূর্বদিকে ভারতের ত্রিপুরা, মেঘালয় ও আসাম রাজ্য, পশ্চিমে ভারতের পশ্চিম বঙ্গ, উত্তরে ভারতের কুচবিহার রাজ্য এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর অবস্থিত। ভৌগোলিক দিক থেকে ভারতের কোলঘেঁষে বাংলাদেশের অবস্থান হওয়ার কারণে একমাত্র ভারতই বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিবেশী রাষ্ট্র। সংঘত কারণেই নিকটতম প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশের প্রতি ভারতের দায়িত্ব ও কর্তব্য অনেক বেশি। মানবিক কারণে ভারত বাংলাদেশের প্রাকৃতিক বিপর্যয় কিংবা অন্য কোনো দুঃসময়ে যেমন নীরব থাকতে পারে না তেমনি নীরব থাকতে পারেনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মহাসংকটকালীন সময়ে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের অবদান অপরিসীম। ২৫ মার্চ, ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের কালরাতে গণহত্যা শুরুর পর নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৬০ হাজার শরণার্থী ভারতে পাড়ি জমায়। এদের ভরণপোষণের দায়িত্ব এবং পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে ভারত সরকার উদারতার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। কিন্তু ক্রমশ শরণার্থীর সংখ্যা বাড়তে থাকলে এত বড় সংখ্যক শরণার্থীর পুনর্বাসন ভারতের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে। তখন স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা ব্যতীত এ সমস্যা সমাধানের কোনো উপায় ভারতের ছিল না। বিরাট সংখ্যক শরণার্থীর ভরণপোষণের জন্য স্বাভাবিকভাবেই ভারত বিশ্ব দরবারে সাহায্য প্রার্থনা করল। প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায় যে, এ সময় ভারত সরকার ৭৩টি দেশের কাছ থেকে সর্বমোট ২৬ কোটি ৪৪ লক্ষ ৯৬ হাজার ৪৬২ ডলার সাহায্য লাভ করে। সর্বোচ্চ সাহায্যের দিক থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রথম (৮ কোটি ৯১ লক্ষ ৫৭ হাজার ডলার), দ্বিতীয় স্থানে ব্রিটেন (৩ কোটি ৮১ লক্ষ ৮২ হাজার ১৩২ ডলার), চার), তৃতীয় ও চতুর্থ সাহায্য দাতা ছিল যথাক্রমে কানাডা (২ কোটি ২ লক্ষ ৬০ হাজার ৩০৭ ডলার) এবং সোভিয়েত রাশিয়া (২ কোটি ডলার)। ভারত কর্তৃক বিশ্ব দরবারে সাহায্য প্রার্থনায় ৩টি ফল হয়েছিল-

(১) প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে শরণার্থীদের বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হয়েছে।

(২) মুক্তিযুদ্ধে ব্যয় করা সম্ভব হয়েছে।

(৩) বিপুল সংখ্যক শরণার্থীর খবর বিশ্ববাসী জানতে পেরে পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠীর সত্যিকার চরিত্র উন্মোচিত হয়েছে।

ভারত সরকার কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে বিশ্ব বিবেকের কাছে আবেদন জানিয়ে বলেছিলেন, অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধানের অজুহাতে বাংলাদেশে যে গণহত্যা চলছে তা প্রতিহত করা বাইরের শক্তির নৈতিক দায়িত্ব। ভারত মানবিক প্রেক্ষাপট হতেই বিষয়টি বিবেচনা করছে। এভাবে দেখা যায়, যুদ্ধের প্রথম দিক থেকেই ভারত বাঙালি শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে, খাদ্যের যোগান দিয়ে এবং কূটনৈতিক সমর্থন দিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশের নির্বাসিত সরকার গঠন, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র স্থাপন, মুক্তিবাহিনী গঠন ইত্যাদি ক্ষেত্রে ভারতের ব্যাপক সহায়তা রয়েছে। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বৈদ্যনাথতলায় আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে গঠিত বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের ব্যয়ের বড় অংশই ভারত বহন করত। কলকাতা রেডিও স্টেশনের একটি তলায় তাদের ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক কাজে লাগিয়ে "স্বাধীন বাংলা বেতার" কেন্দ্রের অনুষ্ঠানাদি প্রচার করা সম্ভব হয়। মুক্তিরাহিনীর প্রশিক্ষণ এবং অস্ত্রশস্ত্রের যোগান ভারত সরকার দিয়েছিল।

১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী মস্কো গিয়ে বাংলাদেশের যুদ্ধের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন। মুক্তিযুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে ভারত সরকার বাংলাদেশের সমস্যা সমাধানে সাময়িক হস্তক্ষেপের পক্ষে আন্তর্জাতিক সম্মতি নিশ্চিত করে। ৩০ নভেম্বর ভারতীয় সংসদে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ঘোষণা করেন, বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানি সৈন্য প্রত্যাহার করা না হলে সীমান্ত এলাকা থেকে ভারতীয় সেনা সরিয়ে নেওয়া হবে না। এ সময় ইন্দিরা গান্ধী তাঁর অল ইন্ডিয়া রেডিও'র এক ভাষণে বলেন, "গত মার্চ মাস থেকেই আমরা একটা ব্যাপক বিপদগ্রস্ত জনগণকে অত্যন্ত কাছ থেকে দেখেছি। তাদের দোষ ছিল যে তারা গণতন্ত্রের পক্ষে ভোট দিয়েছে। তাদের সমস্যা আমাদেরকে ছুঁয়েছে- ভাবিয়েছেও বটে। চেষ্টা করেছি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে এ সমস্যা সমাধানের। কিন্তু বিশ্বসভা এর মূল সমস্যাগুলোকে পাশ কাটিয়ে বাইরের দিকে সামান্য আলোচনায় এনেছে মাত্র। ফলে স্বাভাবিক নিয়মেই অবস্থার অবনতি হয়েছে। শৌর্যবান মুক্তিযোদ্ধারা জীবনকে যুদ্ধে বাজি রেখে যুদ্ধ করে যাচ্ছে এক অসীম উন্মাদনায়। আমরা তাদের সম্মান করি।" ৩ ডিসেম্বর পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলে জাতিসংঘ ও সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থন নিয়ে যৌথবাহিনী গঠন করে ভারতীয় সৈন্যবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্যে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে। ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে সর্বপ্রথম ভারতই স্বীকৃতি প্রদান করে। এরপর ভারতের নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনী ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীকে আত্মসমর্পণ করার জন্য চূড়ান্ত আহ্বান জানালে ১৬ ডিসেম্বর যৌথবাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণ করে। এই যুদ্ধে ভারতের ৪ হাজার সৈন্যসহ অনেক বেসামরিক লোক নিহত হয়। প্রচুর অর্থ ও গোলাবারুদ ব্যয় হয় এবং পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরাসহ সীমান্তর্তী এলাকায় আর্থসামাজিক ও আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থার ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হয়। এভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত সরকারের ত্যাগ অতুলনীয়।

পূর্ববর্তী

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ