- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
- মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী বাঙালি ও বহির্বিশ্ব
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী বাঙালি ও বহির্বিশ্ব
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে চীনের ভূমিকা
মার্কিন প্রশাসন নিক্সন-কিসিঞ্জারের পর বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় শত্রু হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল গণচীন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে চীনের বিপক্ষে থাকার কারণ হিসেবে বলা যায়। প্রথমত, পাকিস্তানের স্থিতিশীলতার ওপর চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যের অগ্রগতি অনেকটা নির্ভর করত। তাই অখণ্ড পাকিস্তান রাখতে চীনের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি চিয়াং কাইশেক পাকিস্তানের পক্ষ নেয়। দ্বিতীয়ত, বাঙালি জাতি যদি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করে ফেলে তাহলে সে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চীনের অভ্যন্তরেও বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী নিজেদের স্বাধীনতার জন্য উদ্বুদ্ধ হতে পারে। সুতরাং চীন তাদের জাতীয় স্বার্থরক্ষার জন্যই পাকিস্তানের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষার নীতি গ্রহণ করে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে চীনের ভূমিকাকে দুটি পর্যায়ে ভাগ করা যায়। প্রথম পর্যায়, মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকে ৩ ডিসেম্বর ভারত মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার পূর্ব পর্যন্ত। দ্বিতীয় পর্যায়, ৩ ডিসেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় লাভ পর্যন্ত। প্রথম পর্যায়, ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত চীন প্রকাশ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী কোনো মন্তব্য করেনি। তবে গোপনে ইয়াহিয়ার প্রতিটি কর্মকাণ্ডে অন্ধের মতো সমর্থন দিয়ে সাহস যুগিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধকালে ৩০ লক্ষ বাঙালিকে হত্যার জন্য যে স্বয়ংক্রিয় যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে তার অধিকাংশই চীন সরবরাহ করে (যার মূল্য ৪৫ মিলিয়ন ডলার)। সেপ্টেম্বর মাসে চীন পাকিস্তানকে এই বলে আশ্বস্ত করে যে, জাতীয় স্বার্থে চীন পাকিস্তানকে সাহায্য করবে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে চীনা অনুসারী বিপ্লবী নকশালপন্থিরা পাকিস্তানি সৈন্যদের সাথে মিলিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল। চীন নেপথ্যে এ নকশালিদের অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করেছিল।
দ্বিতীয় পর্যায়, ৩ ডিসেম্বর যখন ভারতের ওপর পাকিস্তান বিমান হামলা চালায় এবং ভারত যৌথবাহিনী গঠন করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে তখন থেকে চীন জাতিসংঘে সরাসরি বাঙালি বিরোধী ভূমিকা পালন করতে শুরু করে। পাকবাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ করার লক্ষ্যে ৫ ও ৭ ডিসেম্বর সোভিয়েত ইউনিয়ন জাতিসংঘে দুটি প্রস্তাব উপস্থাপন করলে চীন প্রস্তাব দুটির বিরুদ্ধে প্রথমত ভেটো প্রয়োগ করেন। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হলে চীন এক বিবৃতিতে তথাকথিত বাংলাদেশ সৃষ্টির জন্য সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ভারতের তীব্র সমালোচনা করে। তবে পরবর্তীতে চীন তার নীতি পরিবর্তন করে বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় (৩১ আগস্ট, ১৯৭৫ খ্রি.)।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ

