• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
  • মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী বাঙালি ও বহির্বিশ্ব
মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী বাঙালি ও বহির্বিশ্ব

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী বাঙালি ও বহির্বিশ্ব

মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি ব্যক্তিবর্গ (Foreign personalities in liberation war)

বাংলাদেশের ন্যায়সঙ্গত সংগ্রামকে বিভিন্ন দেশের কোটি কোটি জনতা সমর্থন দিয়েছিল। যুগিয়েছে আমাদের প্রেরণা, সৃষ্টি করেছে বিশ্বজনমত, দিয়েছে সেবা, দিয়েছে আর্থিক সাহায্য। ভারতে শরণার্থী শিবিরে যে মানুষটি নিজের জীবন বিপন্ন করে সেবা দিয়েছেন তিনি হলেন মাদার তেরেসা। তার মিশনারিজ অব চ্যারেটির সদস্যদের নিয়ে শরণার্থীদের সেবায় আত্মনিয়োগ করেন। তাদের চরম দুর্দশা দেখেছেন খুব কাছ থেকে এবং বিশ্বের বিবেকবান মানুষের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন। মাদার তেরেসা বলেছেন, এ সমস্যা কেবল ভারতের সমস্যা নয়, গোটা পৃথিবীর এ সমস্যা। মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখেছেন মার্কিন সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি, সানডে টাইমসের নিকোলাস টোমালিন, দ্য ডেইলি টেলিগ্রামের সাংবাদিক ক্লেয়ার ইলিং ওয়ার্থ। শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর পরে ভারতের যিনি সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছেন তিনি হলেন সমাজবাদী নেতা শ্রী জয় প্রকাশ নারায়ণ। পশ্চিম ইউরোপীয় ব্রিটিশ এম.পি স্যার লর্ড পিটার সোরের অবদানও কম নয়। তিনি একমাত্র ব্যক্তি যিনি ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তানে গিয়ে সরাসরি বাঙালির ওপর বর্বরতম গণহত্যা চালানোর জন্য নিন্দা জানিয়ে এসেছেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদান রয়েছে মার্কিন কবি অ্যানে গিন্সবার্গ-এর। কলমকেই তিনি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেন। ১৫১ লাইনে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ওপর লেখা তার বিখ্যাত কবিতা 'সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড' সর্বকালের সেরা কবিতা হয়ে বেঁচে আছে, বেঁচে থাকবে। কবিতাটির লেখার সময়কাল ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১৪-১৬ নভেম্বর। ফ্রান্সের অধিবাসী বিখ্যাত লেখক 'মশিয়ে আন্দে মালরোর' অবদানও ছিল অপরিসীম। তিনি তার লেখনীর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সাড়া যুগিয়েছিলেন। তার মতো বিখ্যাত লোক মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে দেখে পৃথিবী অবাক হয়।

Birth Name: William A. S. Ouderland
Born : December 6, 1917 Amsterdam, Netherlands
Died: May 18, 2001 (Aged 83)
Perth, Western Australia
Battles/Wars: World War II
Bangladesh Liberation War
Awards: Bir Protik

তার মতো আর একজন বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ছিলেন নেদারল্যান্ডের ডব্লিউ এ.এস ওদারল্যান্ড। তিনিই একমাত্র বিদেশি যাকে মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়। তার জন্ম ১৯১৭ সালে। ১৯৩৬ সালে তিনি ডাচ ন্যাশনাল সার্ভিসে যোগ দেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী এ কমান্ডো সেনা ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে জার্মান নাৎসি বাহিনীর হাতে আটক হয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি বাটা সু কোম্পানির এরিয়া ম্যানেজারের দায়িত্ব নিয়ে বাংলাদেশে ছিলেন। পাক হানাদার বাহিনীর বর্বরতা দেখে তিনি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। অপারেশন সার্চলাইটের ভয়াবহ দৃশ্য তিনি রাতের অন্ধকারে লুকিয়ে ক্যামেরাবন্দি করে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে পাঠান। নিজের মানবিক তাড়নাতেই সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে লড়তে থাকেন পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে। আগস্ট মাসে তিনি নিজ কর্মস্থল টঙ্গীতে বাটা সু কোম্পানির ভেতরে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করেন। টঙ্গী এর আশেপাশে কয়েকটি গেরিলা হামলায় তিনি সাফল্য অর্জন করেন। বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত এই অকৃত্রিম বন্ধু ২০০১ খ্রিষ্টাব্দের ৮ মে অস্ট্রিলিয়ার একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

আমাদের মুক্তিযুদ্ধে অবদান প্রসঙ্গে আর একজনের নাম না বললেই নয়, তিনি হলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটের এডওয়ার্ড কেনেডি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন যখন মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল সেই মুহূর্তে তিনি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। আমেরিকান ন্যাশনাল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে পাকবাহিনীর নৃশংসতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন। তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনকে বর্বর পাকিস্তান সরকারকে গোপনে অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করার জন্য সরাসরি অভিযুক্ত করেছিলেন। ভারতে অবস্থানরত এক কোটি বাঙালি শরণার্থীর চরম দুর্দশা নিজ চোখে দেখে তিনি আমেরিকার সিনেটের নিকট "ক্রাইসিস ইন সাউথ এশিয়া" নামে যে রিপোর্ট দিয়েছিলেন তার ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনেক। আমেরিকার সর্বোচ্চ ত্রাণ সাহায্যে কেনেডির অবদান অনেকখানি। বিশ্ব নেতৃবৃন্দের মনোযোগ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে তার জোর প্রচেষ্টা না থাকলে হয়তো নয় মাসে স্বাধীনতা অর্জন করা সম্ভব হতো না।

নিউইয়র্ক স্কোয়ার গার্ডেনে ভারতের ওস্তাদ রবি শংকরের উদ্যোগে ওপেন কনসার্টে লাখো মানুষের সামনে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও শরণার্থীদের নিয়ে "বাংলাদেশ" নামে গান পরিবেশন করে যিনি বিশ্ববাসীকে চমক দেখিয়েছেন এবং প্রাপ্ত অর্থ শরণার্থীদের মাঝে বিলিয়ে দিয়েছিলেন তিনি হলেন আমেরিকার বিখ্যাত গায়ক জর্জ হ্যারিসন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে তার অবদান ভোলার নয়। এভাবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সহস্র ব্যক্তি সহস্র দৃষ্টিকোণ থেকে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ তথা আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের পক্ষে নিঃস্বার্থ অবদান রেখেছেন। তাদের সকলের সম্পর্কে স্বল্প পরিসরে আলোচনা করা যায় না। আমরা তাদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞ।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ