• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
  • মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী বাঙালি ও বহির্বিশ্ব
মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী বাঙালি ও বহির্বিশ্ব

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী বাঙালি ও বহির্বিশ্ব

মুক্তিযুদ্ধে জাতিসংঘ (UNO of the war of liberation)

বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় লীগ অব নেশনের ব্যর্থতার পর ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ অক্টোবর জাতিসংঘের জন্ম হয়। বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করা জাতিসংঘের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলেও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক বাঙালি নিধনে ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে এ সংস্থাটি নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছিল। রাশিয়া, পোল্যান্ড প্রভৃতি রাষ্ট্র বাংলাদেশের গণহত্যা বন্ধের জন্য জাতিসংঘের নিকট আবেদন জানালেও নীরব থাকে। পাকিস্তানের নিশ্চিত পরাজয়ের মুখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘের নিকট যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব দিলে সোভিয়েত ইউনিয়নের হুঁশিয়ারিতে সে প্রস্তাব নাকচ করে, কিন্তু জাতিসংঘের নিজস্ব ক্ষমতা বলে নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সপ্তম নৌবহর প্রেরণ করলেও জাতিসংঘ প্রতিবাদ করেনি। জাতিসংঘ ইয়াহিয়া খানের মতোই সমগ্র বিষয়টিকে পাক-ভারত সংঘর্ষরূপে আখ্যায়িত করতে চেয়েছিল। তাতে বাঙালির মুক্তি সংগ্রাম অমীমাংসিত থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল।

২৫ মার্চের পূর্বে জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব ড. উথান্ট ঢাকা থেকে সকল জাতিসংঘ কর্মীকে প্রত্যাহার করে নেয়। কিন্তু এদেশে গণহত্যা বন্ধের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেননি। বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন জানালেও মূলত ভেটো ক্ষমতাসম্পন্ন পাঁচটি বৃহৎ রাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ জাতিসংঘের ছিল না।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যেসব ক্ষেত্রে জাতিসংঘের ভূমিকা ছিল তা নিম্নে প্রদত্ত হলো:

১। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মানবিক কার্যক্রম সংক্রান্ত তৎপরতা।

২। যুদ্ধ বন্ধ ও রাজনৈতিক সমাধান প্রশ্নে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ।

৩। মুজিবনগর সরকারের সাথে যোগাযোগ।

৪। শেখ মুজিবুর রহমানের বিচারের প্রশ্নে অবদান।

৫। বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দান প্রশ্নে জাতিসংঘ।

১। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মানবিক কার্যক্রম সংক্রান্ত তৎপরতা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মানবিক কার্যক্রম সংক্রান্ত তৎপরতা বিশেষ করে শরণার্থীদের ভরণপোষণে জাতিসংঘের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই শরণার্থী একটি বিরাট সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এটি অল্প সময়ের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সংকট থেকে আন্তর্জাতিক সংকটে রূপ নেয়। বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা যায়, স্বাধীনতার প্রশ্নে আত্মরক্ষার জন্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এত জনগোষ্ঠী কখনো বাস্তুচ্যুত হয়নি। পাকবাহিনীর নির্বিচারে গণহত্যা, জাতিগত নিপীড়ন থেকে বাঁচার জন্য লক্ষ লক্ষ মানুষ ভারতে আশ্রয় নিতে থাকে। ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী ভারতের কোল ঘেঁষে বাংলাদেশের অবস্থান বিধায় একমাত্র ভারতই বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিবেশী। তাই মানুষ দলে দলে শুধু ভারতেই আশ্রয়ের জন্য ছুটতে থাকে। ফলে ভারতে শরণার্থীদের চাপ বাড়তে থাকে। ডিসেম্বর নাগাদ প্রায় ১ কোটি শরণার্থী ভারতে আশ্রয় নেয়। এই বিপুল পরিমাণ শরণার্থীর খাদ্য, বস্ত্র, পানি, মাথা গোঁজার ঠাঁই, ঔষধপত্র ইত্যাদি ব্যবস্থা করতে এক জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ সময় জাতিসংঘ তার ত্রাণ তৎপরতা নিয়ে এগিয়ে আসে। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (UNHCR) এর প্রধান প্রিন্স সদরুদ্দিন আগাখান বাংলাদেশের শরণার্থী সমস্যাকে জাতিসংঘের এক মানবিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে অভিহিত করেন।

জাতিসংঘ ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের জুন পর্যন্ত ভারতকে শরণার্থীর সাহায্যের জন্য ৯,৮০,০০,০০০ মার্কিন ডলার অর্থ প্রদান করে। জুনের পর এই সাহায্য বাড়তে থাকে। সর্ব সাকুল্যে জাতিসংঘের সাহায্যের পরিমাণ দাঁড়ায় ২১৫ মিলিয়ন ডলার; যা টাকার অঙ্কের হিসেবে শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সহায়তা ছিল সামান্য। সদরুদ্দিন আগা খানের বিবরণ থেকে তৎকালীন সময় জাতিসংঘ কর্তৃক সাহায্যের একটি তালিকায় দেখা যায়-

ক্রমিক নং
সাহায্যের বিষয়
সাহায্যের পরিমাণ
১.
খাদ্য সাহায্য
৬২৬৭ টন
২.
ঔষধ সামগ্রী
৭০০ টন
৩.
যানবাহন
২২০০ টন
8.
আশ্রয়স্থল তৈরির সরঞ্জাম
৩০ লক্ষ শরণার্থীর প্রয়োজনীয়
৫.
নগদ অর্থ
২১৫ মিলিয়ন ডলার

সে সময় জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার সাথে বেসরকারিভাবে যেসব আন্তর্জাতিক সংস্থা কাজ করেছিল তাদের মধ্যে "ইউনিসেফ কেয়ার শিশু খাদ্য কর্মসূচি” অন্যতম। এই কর্মসূচির উদ্যোক্তাগণ পাক শাসকদের সাথে লিখিতভাবে চুক্তি করেন যে, স্কুলে উপস্থিতির পাশাপাশি অনুপস্থিতি শিক্ষার্থীদের সাহায্য দেওয়া হবে। এর ফলে যেসব শিক্ষার্থীরা ভয়ে স্কুলে যেত না তাদেরও সাহায্য পাবার উপায় হয়।

২। যুদ্ধ বন্ধ ও রাজনৈতিক সমাধান প্রশ্নে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ যুদ্ধ বন্ধ ও রাজনৈতিক সমাধান প্রশ্নে জাতিসংঘ বেশ কিছু অকার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত সংকটকে শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর প্রধানরা তাদের নিজস্ব এবং জাতীয় স্বার্থের অনুকূলে ব্যবহারের জন্য প্রকাশ্যে ও গোপনে তৎপরতা চালায়। বৃহৎ শক্তির ইঙ্গিতে জাতিসংঘ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করে। যেমন- (ক) ভারত ও পাকিস্তানের সীমান্তে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক মোতায়েন প্রস্তাব করে (১৯ জুলাই, ১৯৭১), যাতে সীমান্তে শরণার্থীদের তদারকি করা যায়। পাকিস্তান সরকার আনন্দের সাথে প্রস্তাব গ্রহণ করে কিন্তু ভারত ও মুজিবনগর সরকার প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করে। ফলে জাতিসংঘের উদ্যোগ অকার্যকর হয়। (খ) সীমান্তে পর্যবেক্ষক মোতায়েন প্রস্তাব বাতিলের পরদিন অর্থাৎ ২০ জুলাই জাতিসংঘের মহাসচিব ৯৯ ধারা অনুযায়ী নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি ও সদস্য রাষ্ট্রসমূহের বরাবর একটি স্মারকপত্র প্রদান করেন। এ স্মারক পত্রে মহাসচিব বাঙালির গণহত্যার বিষয়টি পূর্ববর্তী শত্রুতার জের হিসেবে একটি আবেগপূর্ণ প্রতিক্রিয়া হিসেবে অভিহিত করেন। (গ) বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয় যখন সুনিশ্চিত তখন জাতিসংঘ আর একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। সেটা হলো যুদ্ধ বন্ধের উদ্যোগ। ২০ অক্টোবর, ১৯৭১ জাতিসংঘের মহাসচিব উ-থান্ট ভারত ও পাকিস্তান সরকারের 'কাছে এক পত্রে তার' Good Office ব্যবহারের প্রস্তাব দেন। মহাসচিব ড. উথান্ট এর পত্রের বিষয়বস্তু ছিল- তিনি সমগ্র ঘটনাটিকে পাক-ভারত সংঘাত হিসেবে বিবেচনা করেন। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের যে উদ্দেশ্য ছিল (মুক্তিযুদ্ধকে পাক-ভারত যুদ্ধের রূপ দান) সেটাই জাতিসংঘের মহাসচিবের পত্রে উল্লেখ করা হয়। সুতরাং দেখা যায়, ইয়াহিয়া ও জাতিসংঘের মহাসচিব উভয়ই সমস্যাটিকে দেখেছেন পাক-ভারত সমস্যা হিসেবে। আর এটা বাস্তবায়ন করতে পারলেই বাঙালির মুক্তির সংগ্রাম অমীমাংসিত থেকে যেত।

৩। মুজিবনগর সরকারের সাথে যোগাযোগ মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিকে মুজিবনগর সরকারের সাথে জাতিসংঘের প্রত্যক্ষ কোনো যোগাযোগ ছিল না, তবে পরোক্ষ যোগাযোগ ছিল। মুক্তিযুদ্ধের শেষ লগ্নে যোগাযোগ বিস্তৃত হয়। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে দক্ষিণ এশিয়ায় জাতিসংঘের ত্রাণ কার্যক্রমের মূল লক্ষ ছিল মুজিবনগরের অসহায় মানুষদের সাহায্য করা। মুজিবনগর সরকারের প্রতিনিধি দলের সাথে জাতিসংঘের সরাসরি পত্র যোগাযোগ হয় আগস্ট মাসে। পাকিস্তান সরকার রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিচারে উদ্যোগী হলে ১৮ সেপ্টেম্বর মুজিবনগর সরকার জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিবের বরাবর এক পত্রে মুজিবনগর সরকারের পক্ষ থেকে জনাব মওদুদ আহমেদ ঐ মামলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আইনজীবী হওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। এর জবাবে ২৭ আগস্ট সহকারী মহাসচিবের অফিস থেকে জানানো হয় যে, আইনগত জটিলতার কারণে মওদুদকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আইনজীবী হিসেবে নিযুক্ত করতে মহাসচিব তার Good Office ব্যবহার করতে পারছে না। এর জবাবে মওদুদ আহমেদ আবার চিঠি লিখে মহাসচিবকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে যোগাযোগের অনুরোধ করেন। কিন্তু পরবর্তীতে এ পত্রালাপ বেশি দূর অগ্রসর হয়নি।

৪। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিচারের প্রশ্নে অবদান ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ৯ আগস্ট পাকিস্তান সরকার রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিচারের উদ্যোগী হলে জাতিসংঘের মহাসচিব সরাসরি হস্তক্ষেপ করে। তিনি স্পষ্টভাবে উদ্বেগের সাথে উল্লেখ করেন যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিচারের বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর বিষয়। তিনি বিষয়টিকে শুধু পাকিস্তানের বিচার ব্যবস্থার এখতিয়ারাধীন বিষয় হিসেবে না ভেবে বরং এর রাজনৈতিক গুরুত্বসহ মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে একে একটি ব্যতিক্রমী বিষয় হিসেবে বিবেচনা করেন। International commission of Jurist আগস্ট মাসে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের নিকট প্রেরিত এক টেলিগ্রামে গোপন বিচারের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। ২৭ আগস্ট মুজিবনগর সরকারের প্রতিনিধি মওদুদু আহমেদের নিকট এক পত্রে জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিবের অফিসের ডিরেক্টর ব্রায়ান জানান যে, জাতিসংঘ মহাসচিব তাঁর এখতিয়ারের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিরাপত্তার জন্য সম্ভাব্য সবকিছু করছেন এবং পরিস্থিতি যাতে অবনতি না ঘটে সে চেষ্টা করছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের 'প্রহসনমূলক' বিচার বন্ধে জাতিসংঘের মহাসচিবের উদ্বেগ ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার মুখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রাণ রক্ষা পায়।

৫। বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দান প্রশ্নে জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি নতুন রাষ্ট্রের আবির্ভাব ঘটলে প্রথমেই প্রশ্ন ওঠে স্বীকৃতি নিয়ে। মুজিবনগর সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ছিল বিশ্ব জনমত সৃষ্টি এবং বিভিন্ন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি অর্জন। এজন্য মুজিবনগর সরকারের প্রতিনিধিরা বিভিন্ন রাষ্ট্রের রাজধানী এবং জাতিসংঘ ভবনে তৎপরতা চালায়। স্বীকৃতি শুধুমাত্র একটি আইনগত বিষয় নয় বরং এর সাথে রাজনৈতিক প্রশ্ন জড়িত থাকে। কখন একটি নতুন দেশকে স্বীকৃতি দেওয়া যায়? এমন প্রশ্নের উত্তরে সমকালীন লেখকগণ মনে করেন, চূড়ান্ত স্বীকৃতি তখনই দেওয়া যায় যখন কোনো রাষ্ট্রে, রাষ্ট্র গঠনের সকল শর্ত অর্থাৎ নির্দিষ্ট ভূখণ্ড, জনসংখ্যা, সরকার ও সার্বভৌমত্ব এই ৪টি উপাদান বিদ্যমান থাকে। মুজিবনগর সরকারের রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতির উল্লিখিত ৪টি উপাদান সম্পূর্ণই ছিল। যুদ্ধকালীন নয় মাস মুজিবনগর সরকার হিলি, রৌমারীসহ কিছু কিছু এলাকা শাসন করে এবং বাংলাদেশের ভূমির ৮০ ভাগ মুজিবনগর সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকে। এ সরকারের একটি নিজস্ব সেনাবাহিনী ছিল, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র নামে একটি বেতার যন্ত্র ছিল, রাষ্ট্রীয় কোষাগার ছিল, যেখান থেকে কর্মচারীদের বেতন দেওয়া হতো। এছাড়া মুজিবনগর সরকার ছিল একটি সর্বদলীয় সরকার। একটি রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পাওয়ার সকল যোগ্যতা (আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী নির্দিষ্ট ভূখণ্ড, জনবল, সরকার ও সার্বভৌমত্ব) থাকা সত্ত্বেও এবং মুজিবনগর সরকারের কূটনীতিবিদরা নিউইয়র্কে জাতিসংঘ ভবনে যোগাযোগ করলেও জাতিসংঘ মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকার ও রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়নি।

প্রকৃতপক্ষে ভেটো ক্ষমতাসম্পন্ন পাঁচটি বৃহৎ শক্তিধর রাষ্ট্রের বাইরে জাতিসংঘের নিজস্ব কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করার ক্ষমতা ছিল না। তবে তৎকালীন জাতিসংঘের মহাসচিব বার্মার নাগরিক উ-থান্ট ব্যক্তিগতভাবে মুক্তিযুদ্ধের সহায়তা দেবার পক্ষে ছিলেন। বাংলাদেশ ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে জাতিসংঘের সদস্য পদ লাভ করে।

সুতরাং দেখা যায় যে, ত্রাণকার্য পরিচালনা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিচার প্রশ্নে ভূমিকা রাখা ব্যতীত অন্য কোনো ক্ষেত্রে জাতিসংঘের ভূমিকা ছিল না।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ