• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
  • মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী বাঙালি ও বহির্বিশ্ব
মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী বাঙালি ও বহির্বিশ্ব

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী বাঙালি ও বহির্বিশ্ব

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে আমেরিকার সরকারি নীতি ছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে (পাকিস্তানের পক্ষে)। কিন্তু মার্কিন সভা, কংগ্রেস, সিনেটের অনেক সদস্য, মার্কিন পত্র-পত্রিকা, প্রচার মাধ্যম, শিল্পী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, জনগণ এবং পাকিস্তানি কূটনৈতিক মিশনে কর্মরত বাঙালিরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিল। এই বৃহৎ অংশের চাপেই ভারতে অবস্থানরত বাঙালি শরণার্থীদের সর্বোচ্চ সাহায্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই করেছিল এবং পাকিস্তানের সামরিক সাহায্য বন্ধ করতে হয়েছিল।

তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরী কিসিঞ্জার মুক্তিযুদ্ধকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয় উল্লেখ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তাদের কিছুই করার নেই বলে অভিমত প্রকাশ করেন। এ সময় হেনরি কিসিঞ্জার 'বাংলাদেশকে একটি তলাবিহীন ঝুড়ি' বলেও উপহাস করেন। ১০ জুলাই, ১৯৭১-এর পর থেকে মার্কিন সরকার তাদের নিরপেক্ষ নীতি পরিহার করে হস্তক্ষেপের নীতি গ্রহণ করে। ভারতকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণ না করার জন্য আহ্বান জানান। পাকিস্তানকে সামরিক সাহায্যের লক্ষ্যে ৯ ডিসেম্বর, ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সপ্তম নৌবহর (পারমাণবিক অস্ত্রে সুসজ্জিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি জাহাজ সমন্বয়ে গঠিত নৌবহর) ভারত মহাসাগরে পাঠায়। অবশ্য সোভিয়েত ইউনিয়নের হুঁশিয়ারে সপ্তম নৌবহর দাঁড়িয়ে থেকে ফিরে আসতে বাধ্য হয়।

পাকিস্তানের পরাজয়ের মুখে যুদ্ধ বিরতি ঘটিয়ে আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে ভণ্ডুল করতেও জাতিসংঘে কূটনৈতিক তৎপরতা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। সোভিয়েত ইউনিয়নের বাধার মুখে সে প্রচেষ্টা সফল হয়নি। মার্কিন সরকারি নীতি মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে থাকলেও মার্কিন সংবাদ মাধ্যম এবং কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী ছিল বাংলাদেশের পরম সুহৃদ। মার্কিন সংবাদপত্রসমূহের মধ্যে ওয়াশিংটন পোস্ট, নিউইয়র্ক টাইমস, ম্যানচেস্টার গার্ডিয়ান, ওয়াশিংটন ইভনিং স্টার, ওয়ার্ল্ড স্ট্রিট জার্নাল ইত্যাদি সংবাদপত্র বাংলাদেশে পাকবাহিনীর তাণ্ডব এবং মুক্তিযুদ্ধের বিষয়সমূহ নিয়ে বিস্তারিত সংবাদ পরিবেশন করে। 'ওয়াশিংটন পোস্ট' এক সম্পাদকীয় নিবন্ধে স্বদেশের নাগরিক হত্যার জন্য ইয়াহিয়াকে দায়ী করে।

মুক্তিযুদ্ধে মার্কিন শিক্ষিত ও বুদ্ধিজীবীগণও সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন। 'এসোসিয়েশন ফর এশিয়ান স্টাডিজ'-এর বার্ষিক সম্মেলনে প্রায় দু'হাজার শিক্ষাবিদ অবিলম্বে গণহত্যা বন্ধের জন্য আবেদন জানান। এ সম্মেলনে জরুরি ভিত্তিতে বাংলাদেশে ত্রাণ সামগ্রী পাঠানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাকে অনুরোধ করে। ৩০ জন বুদ্ধিজীবী দলবদ্ধভাবে ঘোষণা করেন যে, "পূর্ব পাকিস্তানে ন্যায়সংগত দাবিকে শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে উপেক্ষা করার কোন অধিকার পাকিস্তানের নেই।" এছাড়া হার্ভার্ড ও শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকবৃন্দ অত্যন্ত ইতিবাচক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত জর্জ হ্যারিসনের 'বাংলাদেশ কনসার্ট' ছিল মুক্তিযুদ্ধে এক বিরাট অনুপ্রেরণা। মার্কিন রাজনীতিবিদ বিশেষ করে সিনেটের এডওয়ার্ড কেনেডির অবদান প্রশংসনীয়। তিনি সরকারের বিপক্ষে গিয়ে ভারতে শরণার্থীর সমস্যা নিয়ে ২৮ জুন, ২২ জুলাই এবং ৩০ অক্টোবর তিনটি শুনানির ব্যবস্থা করেন। তার এবং কংগ্রেসম্যান হেনরির প্রচেষ্টাই নিক্সন প্রশাসন ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ৪ এপ্রিল বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করেছিল। আমেরিকার বাঙালি প্রবাসী সর্বতোভাবে মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করে। পাকিস্তানের কূটনৈতিক মিশনগুলোতে কর্মরত বাঙালিরা এক পর্যায় বাংলাদেশের পক্ষে তাদের সমর্থন ব্যক্ত করে। যুক্তরাষ্ট্রের সর্বত্র আমেরিকানরা বাঙালিদের সাহায্য সমিতি প্রতিষ্ঠার জন্য জনমত গঠন করে। অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট নিক্সন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারসহ মার্কিন প্রশাসনের নীতি নির্ধারক মহল ব্যতীত সাধারণ জনগণ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করে। মার্কিন প্রশাসন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে ব্যাহত করতে সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েই ক্ষান্ত হননি, ৩ ডিসেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ উপমহাদেশের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হিসেবে চালিয়ে দিতে পায়তারা করে। পাকিস্তানিদের সুনিশ্চিত পরাজয় জেনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিরা জাতিসংঘের নিকট যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব উপস্থাপন করে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ভূলুণ্ঠিত করতে চেয়েছিল কিন্তু প্রতি ক্ষেত্রেই ব্রিটেন ভেটো দিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে তার আপন ঠিকানায় পৌঁছে দিতে সহায়তা করেছে।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ