• হোম
  • একাডেমি
  • মাদরাসা
  • নবম-দশম শ্রেণি
  • প্রাক-ইসলামি পটভূমি ও রাসুল (স.) এর মক্কা জীবন
প্রাক-ইসলামি পটভূমি ও রাসুল (স.) এর মক্কা জীবন

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

প্রাক-ইসলামি পটভূমি ও রাসুল (স.) এর মক্কা জীবন

অধিবাসীদের উপর ভৌগোলিক প্রভাব

আরব উপদ্বীপের বৈচিত্র্যময় ভৌগোলিক পরিবেশ, অধিবাসীদের জীবনযাত্রা প্রণালিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। এ ভূখণ্ডের বৃষ্টিপাতহীন শুদ্ধ ও উচ্চ আবহাওয়া, বালুকাময় ধু-ধু মরুভূমি প্রভৃতি প্রতিকূল ও ভৌগোলিক পরিবেশের সাথে সংগ্রাম করে মরুবাসী বেদুইনগণ একদিকে যেমন রুক্ষ, দুঃসাহসী ও সৈনিক জাতিতে পরিণত হয়েছে, অপরদিকে ভারা ধৈর্যশীল, কষ্টসহিষ্ণু ও পরিশ্রমী হয়েছে। তাদের চরিত্রে কঠোরতা, বর্বরতা, নৃশংসতা এবং সাহসিকতার সমন্বয় ঘটেছে। মরুভূমির প্রচন্ড সাইমুম ঝড়, প্রখর উত্তাপ, রৌদ্রদগ্ধ বালুকা, উন্মত্ত লু হাওয়া, রুক্ষ পর্বতমালা, কণ্টকাকীর্ণ বৃক্ষাদি তাদেরকে সংগ্রামী করে তুলেছে। পশুচারণ ও পশুপালন তাদের প্রধান পেশা হলেও খাদ্যের অভাব হলে তারা পণ্যবাহী কাফেলায় হামলা চালাত কিংবা পার্শ্ববর্তী এলাকায় লুটতরাজ করত।

আরবদের মধ্যে যুদ্ধবিগ্রহ ও কলহ লেগেই থাকত। লুণ্ঠন ভৎপরতা, রাহাজানি, খুন-খারাবি তাদের মধ্যে দূষণীয় ছিল না। এ যুদ্ধাংদেহী সমাজব্যবস্থায় পুত্র সন্তানের কদর ছিল বেশী। কারণ গোত্রভিত্তিক কাঠামোতে পুরুষ সভ্যের সংখ্যাধিক্য গোত্রের শ্রেষ্ঠত্বই প্রতিপন্ন করত। এ সময় কন্যা সন্তান ছিল সমাজের বোঝা। এ বোঝা নিরসন করে তারা নারী ও কন্যা সন্তানের উপর বিরূপ হয়ে ওঠেছিল। যুদ্ধবিগ্রহে পরাজয়ের অর্থ ছিল নারীদের দাসত্ব। কন্যা সন্তান বৃদ্ধি মানে অনাহার বা অর্ধাহার, এ ছিল অধিকাংশ আরবের ধারণা।

'মরুভূমিতে রাত্রি ভীতিকর, ভূত-প্রেত-দৈত্য-দানবের আনাগোনা'- এ সাধারণ বিশ্বাস মরুভূমির বিপদ হতে পথিককে রক্ষা করার জন্য আরবদের মধ্যে অতিথিপরায়ণতা বিকশিত হয়েছিল। মরুভূমি অনুর্বর ও পর্বভাঞ্চলের আরব সমাজ গোত্রভিত্তিক ছিল। গোত্র-নিরাপত্তা ও বহিরাক্রমণের ভয় তাদেরকে গোত্রপ্রিয় করে তুলেছিল। এ গোত্রপ্রীতি তাদের মধ্যে জন্য দেয় মনুষ্যত্ব, আত্মসংযম, স্বাধীনতা আর গণতন্ত্রের। শেখের নিকট সকল নাগরিকের অধিকার সমান। এরূপ পরিস্থিতিতে উন্নততর ধর্মে-কর্মে তাদের শিথিলতা পরিলক্ষিত হওয়াই স্বাভাবিক। আরব ভূ-খণ্ডের অনুদার পরিবেশ, খাদ্য ও পানীয় জলের অভাব, নির্দিষ্ট চলাচলের পথ না থাকায় বৈদেশিক আক্রমণের হাত থেকে আরববাসীরা সব সময় নিরাপদ থেকেছে।

ভৌগোলিক প্রভাবের কারণে শহরবাসী আরব ও মরুবাসী বেদুইনদের মধ্যে আত্মসচেতনাবোধ ও কাব্যিক চেতনার উম্মেষ ঘটে। আরববাসীরা ছিল কাব্যের প্রতি অধিক মাত্রায় অনুরক্ত। গীতিকাব্য রচনা ও সাহিত্যচর্চায় আরবদের অপূর্ব সৃজনশীলতার পরিচয় পাওয়া যায়। আরব কবিগণ ভৌগোলিক পরিবেশে যে কাব্য রচনা করেন তা সংঘাত, অদম্য সাহসিকতা, বীরত্ব, গোত্রপ্রীতি ও প্রেম সম্পর্কিত।

মূলত আরব ভূ-খন্ডের ভূ-প্রকৃতি, ভৌগোলিক পরিবেশ এবং অধিবাসীদের চরিত্রে এমন বৈশিষ্ট্য ছিল বলেই তারা ইসলাম গ্রহণের অতি অল্পকালের মধ্যে ব্যবসায়-বাণিজ্যে, শিল্প-সাহিত্যে, সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ এমন একটি নতুন জাতি গড়ে তোলে, যার দৃষ্টান্ত ইতিহাসে বিরল।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ