• হোম
  • একাডেমি
  • মাদরাসা
  • নবম-দশম শ্রেণি
  • প্রাক-ইসলামি পটভূমি ও রাসুল (স.) এর মক্কা জীবন
প্রাক-ইসলামি পটভূমি ও রাসুল (স.) এর মক্কা জীবন

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

প্রাক-ইসলামি পটভূমি ও রাসুল (স.) এর মক্কা জীবন

জাহেলিয়া যুগের সাংস্কৃতিক অবস্থা

বর্তমান যুগের ন্যায় প্রাক-ইসলামি যুগে আরবে বিজ্ঞানসম্মত শিক্ষা ও সংস্কৃতি না থাকলেও আরবরা সাংস্কৃতিক জীবন হতে একেবারে বিচ্ছিন্ন ছিল না। তাদের ভাষা এত সমৃদ্ধ ছিল যে, আধুনিক ইউরোপের উন্নত ভাষাগুলোর সাথে এর তুলনা করা যায়।

কবিতার মাধ্যমে সাংস্কৃতিক চেতনা: প্রাক-ইসলামি যুগে লিখন প্রণালির তেমন উন্নতি হয়নি বলে আরবগণ তাদের রচনার বিষয়বস্তুগুলো মুখস্ত করে রাখত। তাঁদের স্মরণ শক্তি ছিল খুব প্রখর। তারা মুখে কবিতা পাঠ করে শুনাত। কবিতার মাধ্যমে ভাদের সাহিত্য প্রতিভা প্রকাশ পেত। এ জন্যেই লোক-গাঁথা ও জনশ্রুতির উপর নির্ভর করে পরবর্তীকালে আরব জাতির ইতিহাস লিখিত হয়েছে।

আরব সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন আরবি গীতিকাব্য অথবা কাসীদা সমসাময়িক কালের ইতিহাসে অতুলনীয়। ৫২২ হতে ৬২২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রচনার সাবলীল গতি ও যাচ্ছ বাক্য বিন্যাসে বৈশিষ্ট্য থাকলেও এর বিষয়বস্তু রুচিসম্মত ছিল না। যুদ্ধের ঘটনা, বংশ গৌরব, বীরত্বপূর্ণ কাহিনী, যুদ্ধের বিবরণ, উটের বিস্ময়কর গুণাবলি ছাড়াও নারী, প্রেম, যৌন সম্পর্কিত বিষয়ের উপর গীতিকাব্য রচনা করা হত। ঐতিহাসিক হিষ্টি বলেন, 'কাব্য প্রীতিই ছিল বেদুঈনদের সাংস্কৃতিক সম্পদ।' প্রাক-ইসলামি কাব্য সাহিত্যের প্রথম পর্যায়ে মিলযুক্ত গদ্যের সন্ধান পাওয়া যায়। কুরআন শরীফে এ ছন্দ ব্যবহৃত হয়েছে। কাব্য চর্চার রীতির মধ্যে উষ্ট্র চালকের ধ্বনিময় সঙ্গীত (হ্রদা) এবং জটিলতার ছন্দ অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু কাসীদা ছিল একমাত্র উৎকৃষ্ট কাবারীতি। বসুস যুদ্ধে তাম্বলিব বীর মুহালছিল সর্বপ্রথম দীর্ঘ কবিতা রচনা করেন। জোরালো আবেগময় সাবলীল ভাষা ও মৌলিক চিন্তা ধারায় এটি ছিল পুষ্ট।

উকাজের সাহিত্য মেলা প্রাক-ইসলামি যুগে আরবদের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল তাদের বাগ্মিতা। জিহ্বার অফুরন্ত বাচন শক্তির অধিকারী প্রাচীন আরবের কবিরা মক্কার অদূরে উকাজের বাৎসরিক মেলায় কবিতা পাঠের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতেন। উকাজের বাৎসরিক সাহিত্য সম্মেলনে পঠিত সাতটি ঝুলন্ত কবিতাকে 'আস্-সাবউল মুআল্লাকাত اَتَيْعُ الْمُعَلَقَاتُ বলা হয়। হিষ্টি উকাজের মেলাকে আরবের Academic franchise বলে আখ্যায়িত করেন। তখনকার যুগের কবিদের মধ্যে যশষী ছিলেন উক্ত সাতটি ঝুলন্ত গীতি কাব্যের রচয়িতাগণ।

সোনালী হরফে লিপিবদ্ধ এ সাভটি কাব্যের রচনা করেন আমর ইবনে কুলসুম, লাবিছ ইবন রাবিয়া, আনতারা ইবন শাদদাদ, ইমরুল কায়েস, তারাফা ইবনে আবদ, হারিস ইবনে হিলজা ও জুহাইর ইবন আবি সালমা। এদের মধ্যে অসাধারণ প্রতিভাশালী ছিলেন ইমরুল কায়েস। তিনি প্রাক-ইসলামি যুগের শ্রেষ্ঠ কবির মর্যাদা লাভ করেন। ইউরোপীয় সমালোচকগণও তার উৎকৃষ্ট শব্দ চয়ন, সাবলীল রচনাশৈলী, চমকপ্রদ যাচ্ছ লহরীতে মুগ্ধ হয়ে তাকে আরবের শেক্সপীরর বলে আখ্যায়িত করেন। আরবি ভাষায় এরূপ উন্নতি ও সমৃদ্ধি সাধনে হিষ্টি মন্তব্য করেন, 'ইসলামের জয় অনেকাংশে একটি ভাষার জয়, আরও সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে একটি ধর্মগ্রন্থের জয়।'

সাহিত্য আসরের আয়োজন: তৎকালীন আরবে সাহিত্য চর্চায় আরবদের আগ্রহ ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। অনেক সাহিত্যমোদী আৱৰ নিয়মিত সাহিত্য আসরের আয়োজন করতেন। সাহিত্য আসরের উদ্যোক্তাদের মধ্যে তাকিব গোত্রের ইবনে সালাময়ের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। প্রতি সপ্তাহে তিনি একটি সাহিত্য আসরের আয়োজন করতেন। আরবদের সাহিত্য প্রীতির কথার উল্লেখ করে ঐতিহাসিক হিটি বলেছেন, 'পৃথিবীতে সম্ভবত অন্যকোনো জাতি আরবদের ন্যায় সাহিত্য চর্চায় এতবেশি স্বতঃস্ফূত আগ্রহ প্রকাশ করেনি এবং কথিত বা লিখিত শব্দ দ্বারা এত আবেগাচ্ছন্ন হয়নি।' এ সমস্ত সাহিত্য আসরে কবিতা পাঠ, সাহিত্য বিষয়ক আলোচনা ও সমালোচনা অনুষ্ঠিত হত।

কবিতার বিষয়বস্তু: প্রাক-ইসলামি যুগের সাহিত্যিকগণ তাদের গোত্র ও গোত্রীয় বীরদের বীরত্বপূর্ণ কাহিনী, যুদ্ধের বিবরণ, উটের বিস্ময়কর গুণাবলি, বংশ গৌরব, অতিথি পরায়ণতা, নরনারীদের প্রেম, নারীর সৌন্দর্য, যুদ্ধ-বিগ্রহ প্রভৃতি বিষয় নিয়ে কবিতা রচনা করতেন। তাদের এ সকল কবিতা সুদূর অতীতকালের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি প্রাক-ইসলামি আরবদের বিভিন্ন বিষয়ের উপর আলোকপাত করে।

মহানবি (সা.)-এর আবির্ভাব অজ্ঞতা যুগের পাপ পঞ্জিল সমাজ, কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধর্মীয় মতবাদ, রাজনৈতিক বিশৃংখলা, অরাজকতা, অভিশপ্ত প্রথা ও অনুষ্ঠানের কথা বললে স্থান ও কাল সম্বন্দ্বে সঠিক ধারণা থাকা বাঞ্ছনীয়। কারণ, আরবদের অজ্ঞতা বা বর্বরতার যুগ বলতে হযরত মুহাম্মাদ (সা)-এর নবুয়ত লাভের (৬১০ খ্রি.) পূর্বে হিজাজের অবস্থাকে বুঝায়।

সামগ্রিকভাবে সমস্ত আরবের প্রাক-ইসলামী যুগকে কখনই বর্বরতার যুগ বলা যেতে পারে না। আল্লাহর প্রেরিত মহাপুরুষের একত্ববাদের আদর্শ হতে বিচ্যুত হয়ে মানবজাতি এক সংকটজনক ও অভিশপ্ত অবস্থায় পতিত হয়। ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বে ইতুদীগণ ধর্মগুরুর প্রদর্শিত পথ ও একত্ববাদের পথ ভুলে পৌত্তলিকতার আশ্রয় গ্রহণ করে। খ্রিষ্টানগণ হযরত ঈশা (আ.) এর প্রচারিত ধর্মমত হতে বিচ্যুত হয়ে ত্রিত্ববাদে (Trinity) বিশ্বাসী হয়ে পড়ে। দক্ষিণ আরবে খ্রিষ্টান, ইহুদী ও পরবর্তীকালে জরথুস্ট্র ধর্মের প্রভাবে ধর্মীয় ক্ষেত্রে এক নৈরাশাজনক পরিবেশের সৃষ্টি করে। এই চরম দুর্গতিসম্পন্ন জাতিকে ন্যায় ও সত্যের পথে পরিচালিত করার জন্য একজন মহাপুরুষের আবির্ভাব অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে।

আমীর আলীর ভাষায় 'পৃথিবীর ইতিহাসে পরিত্রাণকারী আবির্ভাবের এত বেশি প্রয়োজন এবং এমন উপযুক্ত সময় অন্যত্র অনুভূত হয়নি।' অবশেষে আল্লাহ মানব জাতিকে হেদায়তের জন্য হযরত মুহাম্মাদ (সা)-কে শ্রেষ্ঠ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবি রূপে বিশ্বে প্রেরণ করলেন। শুধু আরবের নয়, বরং সমগ্র বিশ্বে কুসংস্কারের কুহেলিকা ভেদ করে তৌহিদের বাণী প্রচার করার জন্য তিনি মক্কায় ভূমিষ্ঠ হন। তিনি অনন্ত কল্যাণ ও স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি আপোষহীন তৌহিদের প্রতীক। এ সম্বলের হিটি বলেন, 'মহান ধর্মীয় ও জাতীয় নেতার আবির্ভাবের জন্য মঞ্চ প্রস্তুত হয়েছিল এবং সময়ও ছিল মনস্তাত্ত্বিকতাপূর্ণ।'

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ