- হোম
- একাডেমি
- মাদরাসা
- নবম-দশম শ্রেণি
- প্রাক-ইসলামি পটভূমি ও রাসুল (স.) এর মক্কা জীবন
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
প্রাক-ইসলামি পটভূমি ও রাসুল (স.) এর মক্কা জীবন
হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এর তায়েফ গমন
হযরত মুহাম্মাদ (সা) এর স্ত্রী বিবি খাদিজা (রা) ও চাচা আবু তালিবের মৃত্যুর পর কুরাইশদের অত্যাচারের পথ একেবারে নিষ্কন্টক হয়ে যায়। ফলে তাঁরা রাসুল (সা.) এর উপর অত্যাচারের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিল। নরাধমগণ প্রায়ই ভাঁর গৃহদ্বারে কাঁটা বিছিয়ে রাখত। হযরত (সা.) যখন কাবাঘরের সামনে নামাযরত থাকতেন, তখন নরাধম কুরাইশরা কখনো উটের নাড়িভুঁড়ি কখনো বা সদ্যপ্রসূত ছাগির ফুল তাঁর মাথার উপর চাপিয়ে দিত। এরূপ ঘটনা বহুবার ঘটেছে। একদিন হযরত নামাযে মগ্ন হয়ে আছেন দেখে ওকবা নিজের চাদর দড়ির মত করে তা হযরতকে পেঁচিয়ে অনবরত মোড়াতে থাকত। এর ফলে মহানবী (সা.)-এর ঘাড় বেঁকে শ্বাস রুদ্ধ হওয়ার উপক্রম হয়।
ঘটনাক্রমে সে সময় হযরত আবু বকর (রা.) সেখানে উপস্থিত হয়ে তাকে কোনোক্রমে রক্ষা করেন। এরূপ ভাবে প্রতিদিনই তাকে লাঞ্ছনা ও নির্যাতন চালাতে থাকত। কখনো কখনো দল বেঁধে লোকজন তাঁকে বাচ্ছা বিদ্রূপ করত ও গাল দিত। কখনও তাঁর খাদ্য দ্রব্যে জীব-জন্তুর মলমূত্র মিলিয়ে দিত। কখনো বা ঘৃণ্য আবর্জনাদি তাঁর দেহে নিক্ষেপ করত। এমনিভাবে তারা হযরতকে কষ্ট দিতে লাগল।
পিতৃব্যের বিয়োগ, সহধর্মিনীর বিচ্ছেদ, মাতৃহারা কন্যাগণের বিষাদময় স্নান-যুখ, সর্বোপরি নরপিশাচগণের এ সকল অকথ্য অত্যাচার, সবকিছুর একত্র সমাবেশে তিনি বিচলিত হয়ে পড়লেন। তাই তিনি ভক্ত ও পালিত পুত্র হযরত যায়েদকে সঙ্গে নিয়ে সত্য ধর্ম প্রচারের মানসে তায়েফ যাত্রা করার জন্য সিস্কর করলেন। মক্কা থেকে ৭০ মাইল দূরে তায়েফ নগরী অবস্থিত। সেখানে গমন করে তিনি দশদিন অবস্থান করে তায়েফবাসীদেরকে সত্য ও ন্যায়ের পথে আনয়নের চেষ্টা করেন। কিন্তু নির্বোধ নগরবাসী তাঁর আহ্বানে কর্ণপাত না করে তাঁকে নির্মমভাবে লাঞ্ছিত ও প্রস্তরাঘাতে রক্তাক্ত করে তাড়িয়ে দেয়।
রাসুল (সা.) পথে বের হলে তারা হৈ চৈ করে চারিদিকে সমবেত হতে থাকত। পথ চলতে লাগলে ইট পাথর মারতে মারতে তাঁর পিছু ছুটত। অনেক সময় তাঁরা পথের দুধারে সারি বেঁধে বসে পড়ত এবং প্রত্যেক পদ নিক্ষেণে হযরতের চরণ যুগলের ওপর দুদিক থেকে প্রস্তর বর্ষণ করত। ফলে হযরতের পদদ্বয় রক্তে রঞ্জিত হয়ে যেত। এহেন নৃশংস অত্যাচারেও হযরতের হৃদয় একটুও দমিত হয়নি।
তারেফবাসীগণ রাসুল (সা.)-কে এত কষ্ট দেয়া সত্ত্বেও তিনি তাঁদের ওপর অসন্তুষ্ট হননি। বরং তাদের জন্যে দোয়া করেন- 'হে আল্লাহ, হে আমার প্রভু। অপরাধীরা আজ বুঝে না যে গুরুতর অপরাধ করেছে, সেজন্যে তুমি দয়া করে তাদেরকে শাস্তি দিও না, বরং ক্ষমা করে দাও। তাদের কোনো দোষ নেই। সে আমারই দুর্বলতা, আমারই অক্ষমতা। এ দুর্বলতার জন্য তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি।'
মক্কা থেকে তায়েফ গমন করেও রাসুল (সা.) তায়েফবাসীদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পুনরায় মক্কায় ফিরে আসলেন। মক্কার অনতিদূরে নাখলা খানে কিছুক্ষণ বিশ্রাম করতে লাগলেন। নাখলায় উপস্থিত হলে হযরত যায়েদ তাঁকে মক্কার কুরাইশদের অআচারের কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন এবং তাদের বিরুদ্ধে প্রতিকার করার পরামর্শ দিলেন। তাই হযরত মুহাম্মাদ (সা.) সরাসরি মক্কায় প্রবেশ না করে মুতুইম ইবনে আদীর আশ্রয় প্রার্থনা করেন। আরবের প্রথানুসারে মুতইম হযরতকে আশ্রয় দিয়ে মক্কায় পৌঁছে দেন।
কাফেররা হযরতকে কিছুই বলেনি। মুতইম-এর এ উপকারের কথা হযরত চিরকালই কৃতজ্ঞতার সাথে উল্লেখ করেছেন। হযরত মুহাম্মাদ (সা.) মুভইম ইবনে আদীর আশ্রয়ে আসার পর আরও ব্যাপক আকারে ইসলামের দাওয়াত ও তাবলীগ আরম্ভ করেন। সাধারণ জনসভায় ও হজ্জের সময় সমাগত লোকদের নিকট ইসলামের বাণী পৌছাতে থাকেন।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ
