• হোম
  • একাডেমি
  • মাদরাসা
  • নবম-দশম শ্রেণি
  • প্রাক-ইসলামি পটভূমি ও রাসুল (স.) এর মক্কা জীবন
প্রাক-ইসলামি পটভূমি ও রাসুল (স.) এর মক্কা জীবন

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

প্রাক-ইসলামি পটভূমি ও রাসুল (স.) এর মক্কা জীবন

আইয়ামে জাহেলিয়ার পরিচয়

মহানবি (সা.) এর নবুয়ত প্রাপ্তির পূর্বযুগকে আইয়ামে জাহিলিয়া (الْأَيَّامُ الْجَاهِلِيَّةُ) বা অন্ধকার যুগ বলা হয়। আইয়াম অর্থ যুগ এবং জাহেলিয়া অর্থ অন্ধকার, কুসংস্কার, বর্বরতা, অজ্ঞতা। যে যুগে আরব দেশে কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও আল্লাহ প্রদত্ত ধর্মীয় অনভূতি লোপ পেয়েছিল সে যুগকেই অন্ধকার যুগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তবে অন্ধকার যুগের সময়কাল সম্বন্ধে ইসলামী চিন্তাবিদদের মধ্যেও মতবিরোধ রয়েছে।

অনেকের মতে, হযরত আদম (আ) হতে হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এর নবুয়ত প্রাপ্তি পর্যন্ত দীর্ঘ ময়কেই অন্ধকার যুগ বলা যায়। কিন্তু এ অভিমত সর্বতোভাবে পরিত্যাজ্য, কারণ এ ক্ষেত্রে সকল নবি ও রাসুলকে অস্বীকার করা হয়। হযরত আদম (আ) হতে মহানবি (সা.)-এর আবির্ভাব পর্যন্ত বিশ্বের ইতিহাসে যে সকল সভ্য জাতি ও সভ্যতা চিরস্মরণীয় হয়ে রয়েছে, সেগুলোকে তমাচ্ছন্ন বলে আখ্যায়িত করা ইতিহাসকে অস্বীকার করা ছাড়া কিছুই নয়।

অপর একদল মনে করেন যে, হযরত ঈসা (আ.)-এর তিরোধানের পর হতে মহানবি (সা)-এর আবির্ভাব পর্যন্ত প্রায় ছয় শতাব্দী কালকে অন্ধকার যুগ বলে চিহ্নিত করা যায়। কারণ এ সময় ঐশী জীবনবিধান সম্পর্কে জগৎ সম্পূর্ণ অজ্ঞ ছিল। ইহুদী ও খ্রিষ্টানদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এ যুগের তমসাকে আরও পরিবর্ধিত করে ও কুসংস্কার এর দিক ধাবিত করে, কিন্তু পরীক্ষার কষ্টিপাথরে এ অভিমতও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। কারণ খ্রিস্ট্রীয় ষষ্ঠ ও সপ্তম শতাব্দী পর্যন্ত দক্ষিণ আরব ও উত্তর আরবে শিক্ষা-দীক্ষা, ব্যবসায়-বাণিজ্যে শিল্প-সাহিত্য, রাজনৈতিক চেতনাবোধ, অর্থনৈতিক উন্নতি, সামাজিক ব্যবস্থার সুষ্ঠু ব্যবহার যতখানি উৎকর্ষতা লাভ করেছিল, তাকে অন্ধকার বলে আখ্যায়িত করলে সত্যের অপলাপ করা হবে।
তবে বলা যায়, ইসলাম পূর্ব যুগের আরববাসী বা আরব জাতি বলতে আইয়ামে জাহেলিয়ার অন্তর্ভুক্ত অঞ্চল অর্থাৎ হেজাজ এবং এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের অধিবাসীরা অন্যান্য অঞ্চলের অধিবাসীদের তুলনায় অধিকতর বর্বর, কুসংস্কারাচ্ছন্ন, নৈতিকতাহীন, উচ্ছৃঙ্খল এবং অজ্ঞানতায় নিমজ্জিত ছিল।

ঐতিহাসিক বর্ণনায় জানা যায় যে, মহানবি (সা) এর জন্মের প্রাক্কালে উত্তর এবং দক্ষিণ আরবে সমৃদ্ধশালী রাজবংশ স্বীয় আধিপত্য বিস্তার করেছিল। উত্তর আরবের হীরা ছিল একটি সমৃদ্ধশালী নগরী। হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা) কর্তৃক ৬৩৩ খ্রিস্টাব্দে হীরা অধিকৃত হলে এর সুরম্য হর্মরাজি মুসলিম বাহিনীকে স্তম্ভিত করে তোলে। প্রণিধানযোগ্য যে, পরবর্তীতে কুফা শহর ও মসজিদ সম্প্রসারণে হীরার স্থাপত্য রীতির অনুকরণ করা হয়েছিল। বস্তুত দক্ষিণ আরবের হিমাইয়ারী রাজ্য খিষ্ট্রীয় ষষ্ঠ শতাব্দীর এক বিস্ময়কর প্রতিভা। এ রাজবংশের অহংকারী আবরাহা কাবাগৃহ ধ্বংস করতে গিয়ে নিহত হয়েছিল। সুতরাং এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, দক্ষিণে আরব মিনাইয়ান, সাবিয়ান ও হিমাইয়ারী সভ্যতাকে অজ্ঞতার আবর্তে নিক্ষেপ করা যায় না। অপরদিকে উত্তর আরবের নুরুন্দ অঞ্চলে নাবাতিয়ান, পালমিরা ঘাসসানি ও লাখমিদ রাজ্যগুলোর সমৃদ্ধির প্রতি লক্ষ্য করলে এগুলোকেও অন্ধকারাচ্ছন্ন বলা যায় না।

তাছাড়া উত্তর আরবের মরুময় নুরুন্দ অঞ্চলসহ নজুদ ও হিজাজ প্রদেশে মরুচারি বেদুইনদের অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র ছিল। অর্ন্তদ্বন্দ্ব, গোত্র কলহ, কাব্যে কুৎসা রচনায় মত্ত রক্তলোলুপ লুটেরা বেদুইনদের মধ্যে পার্শ্ববর্তী সভ্যতার ছোয়া দাগ কাটতে পারেনি। দুর্দমনীয়, দুর্বিনীত অত্যাচারী হিজাজ ও নজদবাসীর ইতিহাস প্রাক-ইসলামি যুগের অন্ধকারাচ্ছন্ন অধ্যায়। বিশেষত হিজাজ ও তৎপার্শ্বস্থ এলাকায় নৈরাজ্যের ঘনঘটা বিরাজমান ছিল। হিজাজে প্রচলিত আরবি ভাষায় কুরআন অবতীর্ণ হয়। এ জন্য অন্ধকার যুগের আৱৰ বলতে হিজাজ ও পাশ্ববর্তী এলাকা এবং অন্ধকার যুগ বলতে সে সময়কে বুঝতে হবে।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ