- হোম
- একাডেমি
- মাদরাসা
- নবম-দশম শ্রেণি
- প্রাক-ইসলামি পটভূমি ও রাসুল (স.) এর মক্কা জীবন
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
প্রাক-ইসলামি পটভূমি ও রাসুল (স.) এর মক্কা জীবন
জাহেলিয়া যুগের সামাজিক ও নৈতিক অবস্থা
ইসলাম পূর্ব যুগে আরবদের সামাজিক জীবন অনাচার-পাপাচার, দুর্নীতি, কুসংস্কার, অরাজকতা, ঘৃণ্য আচার অনুষ্ঠান এবং নিন্দনীয় কার্যকলাপে পরিপূর্ণ ছিল। আরবেরা মদ নারী ও যুদ্ধ নিয়ে মত্ত থাকত। হবরত মুহাম্মাদ (সা.) সমগ্র আরব দেশকে মূর্খতা, বর্বরতা ও প্রকৃতি পূজার নিমজ্জিত দেখতে পান। তারা এত বেশি মদ্যপায়ী ছিল যে কোন গর্হিত কাজ করতে তারা দ্বিধাবোধ করত না।
কৌলিন্য প্রথা: তৎকালীন আরবের সমাজ বলতে শহরবাসী ও বেদুইনদের বুঝাতো। এ উভয় সমাজে বিয়ে-শাদী, আচার অনুষ্ঠান বিদ্যমান ছিল। তা ছাড়া রীতি-নীতি ও ধ্যান-ধারণায় উভয় সমাজ একই ধরনের ছিল। বংশগত কৌলিন্য ও গোত্রগত মর্যাদা এত প্রকট ছিল যে অহংকার, হিংসা-বিদ্বেষ, ঘৃণা সমাজের সর্বত্র বিরাজমান ছিল। বংশ মর্যাদা ও কৌলিন্য প্রথা সংরক্ষণের জন্য কখনও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হত। প্রাকৃতিক কঠোরভার নিষ্পেষণে আরব সমাজে অরাজকতা, কুসংস্কার, নিন্দনীয় কার্যকলাপ ও ঘৃণাপ্রথা অপ্রতিহতভাবে বেড়ে চলছিল। পাপাচার, দুর্নীতি, মদ্যপান নারীগমনের আসক্তি তাদের পেয়ে বসেছিল। বস্তুত তাঁদের জীবনযাত্রা ছিল অভিশপ্ত ও কলুষিত। জনজীবন ছিল বর্বভার শিকার।
নারীর অবস্থান: জাহেলী যুগে আরব সমাজে নারীর স্থান ছিল অতি নিম্নে। সামাজিক মর্যাদা বলতে তাদের কিছুই ছিল না। নারী ছিল ভোগ-বিলাসের সামগ্রী ও অস্থাবর সম্পত্তির মত। অবৈধ প্রণয়, অবাধ মেলামেশা ও একই নারীর বহু স্বামী গ্রহণ প্রথা ব্যাপক ছিল। ব্যভিচার এত জঘন্য আকার ধারণ করেছিল যে, স্বামীর অনুমতিক্রমে কিংবা স্বামীর নির্দেশে অথবা পুত্র সন্তানের আশায় নারীগণ বহু পুরুষের সান্নিধ্যে গমন করতো। বিষয়-সম্পত্তিতে স্ত্রীর কোনো অধিকার ছিল না। নারীদের প্রতি গৃহপালিত পশুর মত ব্যবহার করা হত। নারীও যে মানুষ এ কথা তাদের স্মরণে আসত না।
দাস-দাসীর অবস্থা: প্রাচীনকাল হতেই আরবে দাস-দাসী ক্রয়-বিক্রয় প্রথা প্রচলিত ছিল। দাস-দাসীদের জীবন ছিল অভান্ত দুর্বিষহ ও করুণ। মানবিক মর্যাদা ও ব্যক্তি স্বাধীনতা বলতে তাদের কিছুই ছিল না। হাটে বাজারে বিভিন্ন পণ্যদ্রব্যের মত দাস-দাসী ক্রয়-বিক্রয় হতো। প্রভুর বিনা অনুমতিতে দাস-দাসীগণ বিয়ে করতে পারত না। কিন্তু তাঁদের ছেলে-সন্তানের মালিক হত প্রভু। মূলত ভৃত্য ও ভূমিদাসদের আশা আকাঙ্ক্ষার ক্ষীণ আলোও পরিলক্ষিত হত না। নির্মম অত্যাচারে দাস-দাসীদের নিরাপত্তা দারুণভাবে বিঘ্নিত হত। দাস-দাসীদের মানুষ হিসেবে গণ্য করার কথা তাদের বিস্মৃত হয়ে গিয়েছিল।
জীবন্ত কন্যা সন্তানকে কবরস্থ করা। প্রাক-ইসলামি আরবে জীবন্ত কন্যা শিশুকে কবরস্থ করার নিষ্ঠুর প্রথা প্রচলিত ছিল। দারিদ্রতার ভয়ে বিশেষ করে কন্যা সন্তানকে অভিশপ্ত, লজ্জাজনক ও অপরা মনে করে জীবন্ত কবর দেওয়া হত। কন্যা সন্তান জন্মদানকারী মাতার ভাগ্যেও নেমে আসত কঠিন অত্যাচারের তীব্র কষাঘাত। এ ঘৃণ্য প্রথার উচ্ছেদ করে পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে 'তোমরা দরিদ্রতার ভয়ে সন্তানদেরকে হত্যা করো না, বস্তুত আমিই তাদের ও তোমাদের জীবিকা সরবরাহ করে থাকি।' (সুরা ইসরা, আয়াত: ৩১)
অনাচার, ব্যভিচার ও নৈতিক অবনতি: নৈতিক অবনতি, ব্যভিচার, অনাচার, লুটতরাজ, মদ্যপান, জুয়াখেলা-সুদ, নারীহরণ, ইত্যাদি অপকর্ম আরব সমাজে বিদ্যমান ছিল। সুদ আদায়ে অপারগ হলে সুদ গ্রহীতার স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েদের মালিক মহাজন ক্রীতদাস-দাসী রূপে হস্তগত করে হাটে-বাজারে বিক্রয় করে ফেলত। মোটকথা নারীহরণ, ঋব্দ প্রথা, কুসিদ প্রথা ও দাসত্ব প্রথার মতো নানাবিধ পাপ পঞ্চিল আরব সমাজকে জর্জরিত করে ফেলেছিল।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ
