• হোম
  • একাডেমি
  • মাদরাসা
  • নবম-দশম শ্রেণি
  • প্রাক-ইসলামি পটভূমি ও রাসুল (স.) এর মক্কা জীবন
প্রাক-ইসলামি পটভূমি ও রাসুল (স.) এর মক্কা জীবন

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

প্রাক-ইসলামি পটভূমি ও রাসুল (স.) এর মক্কা জীবন

হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর জন্ম ও প্রাথমিক জীবন

আল্লাহর প্রেরিত সর্বশ্রেষ্ঠ মানব বিশ্বনবি নিখিল বিশ্বের অনন্ত কল্যাণ ও আশীর্বাদের মূর্ত প্রতীক হযরত মুহাম্মাদ (সা.) ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ আগস্ট মোতাবেক ১২ রবিউল আউয়াল সোমবার আরবের মক্কা নগরে সম্ভ্রান্ত কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আবদুল্লাহ এবং মাতার নাম বিবি আমিনা। হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এর উর্ধ্বতন একাদশ পুরুষের নাম ছিল বিছর। তিনি কুরাইশ নামেও প্রসিদ্ধ ছিলেন। এ কারণে তাঁর বংশধর কুরাইশী নামে খ্যাতি লাভ করে।

নামকরণ: হযরত মুহাম্মাদ (সা) মাতৃগর্ভে থাকাকালীন তাঁর পিতা আবদুল্লাহ বাণিজ্য উপলক্ষে সিরিয়ার গমন করেন। বাণিজ্য শেষে সিরিয়া থেকে ফেরার পথে মদিনার উপকণ্ঠে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। হযরতের দাদা ছিলেন আবদুল মুত্তালিব। হযরতের জন্মের পর দাদা আবদুল মুত্তালিব নবজাত শিশুর লালন-পালনের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং শিশুটির নাম রাখেন 'মুহাম্মাদ' অর্থাৎ 'প্রশংসিত'। মাতা আমিনা তাকে আদর করে ডাকতেন 'আহমদ' বলে।

ধাত্রী গৃহে গমন: মহানবি (সা) জন্মের পর প্রথম সাত দিন নিজ মায়ের দুধ পান করেন। অতঃপর আরবের প্রথানুযায়ী শিশু মুহাম্মাদ (সা.) কে লালন-পালনের জন্যে সাদ গোত্রের বিবি হালিমাকে ধাত্রী নিযুক্ত করা হয়। তিনি পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত বিবি হালিমার গৃহে লালিত-পালিত হন। সেখানে অবস্থানকালে তৎকালীন আরব সমাজের মধ্যে বিশুদ্ধ আরবি ভাষা আয়ত্ত করেন।

প্রথম বক্ষ বিদীর্ণ বা সিনা চাক: বিবি হালিমার গৃহে লালিত-পালিত হওয়ার সময় হযরত মুহাম্মাদ (সা)-এর বয়স যখন চার বছর মাত্র তখন দু'জন ফিরিশতা এসে তাঁর সিনা চাক করে নবুয়ত লাভের উপযোগী করে তোলেন এবং অন্তরের সমস্ত ব্যাধি দূর করে দেন।

মাতৃক্রোড়ে বালক মুহাম্মাদ (সা.): হযরত মুহাম্মাদ (সা)-এর বয়স যখন ছয় বছর তখন তিনি মাতা আমিনার কাছে ফিরে আসেন। তাঁর এ মাতৃ সান্নিধ্য বেশিদিন স্থায়ী হল না, তিনি মক্কা থেকে পিতা আবদুল্লাহর কবর যিয়ারত করার জন্য মায়ের সাথে মদিনায় গমন করেন। মদিনা থেকে ফেরার পথে 'আবওয়া' নামক স্থানে মাতা আমিনা অসুস্থ হয়ে সেখানে মৃত্যুবরণ করেন। এ সময় দাসী উম্মে আইমন তাঁকে মক্কায় নিয়ে এসে তাঁর দাদা আবদুল মুত্তালিবের কাছে পৌঁছে দেন। আবদুল মুত্তালিবের কাছে মাত্র দু'বছর লালিত পালিত হন। পরে ৫৭৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি দাদাকেও হারান।

চাচার অভিভাবকত্বে বালক মুহাম্মাদ (সা.): দাদা আবদুল মুত্তালিবের মৃত্যুর পর নবিজির লালন-পালনের দায়িত্ব পড়ে চাচা আবু তালিবের ওপর। চাচা আবু তালিব বালক মুহাম্মাদ (সা.) কে যথাসাধ্য আদর-যত্নে প্রতিপালন করতে থাকেন। কিন্তু আবু তালিবের আর্থিক অবস্থা সচ্ছল না থাকায় মুহাম্মাদ (সা.)কে কঠোর পরিশ্রম করতে হতো। তাঁকে চাচার উট ও মেষ চরাতে হতো এবং অবসর সময়ে তিনি মক্কায় তীর্থ যাত্রীদের পানি পান করাতেন। এ সকল কাজ-কর্মে নিয়োজিত থাকা সত্ত্বেও তিনি অশ্ব চালনা, বর্শা চালনা, তলোয়ার চালনা প্রভৃতি শিক্ষা গ্রহণ করেন। ১০ বছর বয়সে তাঁর দ্বিতীয় বার সিনা চাক হয়।

সিরিয়া গমন: বার বছর বয়সে বালক মুহাম্মাদ (সা.) চাচা আবু তালেবের সঙ্গে ৫৮২ খ্রিষ্টাব্দে বাণিজ্য উপলক্ষে সিরিয়া গমন করেন। এ পরিভ্রমণে খোদাদ্রোহী সামুদ জাতির ধ্বংসাবশেষ অবলোকন ও প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্য দর্শনে তাঁর মন এক পরম সত্তার সান্নিধ্য পাবার আগ্রহ প্রকাশ করে। কথিত আছে, সিরিয়া যাত্রাকালে পাদ্রী বুহাইরা বালক মুহাম্মাদ (সা.) কে প্রতিশ্রুত শেষ নবি হিসেবে চিনতে পারেন। তিনি তাঁর চাচাকে নবির ব্যাপারে ইহুদি খ্রিষ্টানদের হতে সতর্ক করে দেন। বালক মুহাম্মাদ (সা.) প্রথমবারের মত অনুভূমির বাইরে গমন করে বিশাল পৃথিবী এবং ব্যাপক কর্মক্ষেত্রের সঙ্গে পরিচয় লাভ করেন। রাসুল (সা.) ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে তিনবার সিরিয়া গমন করেছিলেন।

আল-আমীন উপাধি লাভ: বাল্যকাল থেকেই হযরত মুহাম্মাদ (সা.) চিন্তাশীল ছিলেন। মানুষের দুঃখ-দুর্দশায় তাঁর মন ব্যথিত হত। তাঁর স্বভাব ছিল নরম-প্রকৃতির। তিনি সর্বদা সত্য কথা বলতেন, তাই তিনি সকলের শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন।

তিনি কখনও অন্যায় আচরণ করতেন না। এমনকি বাল্যকাল থেকেই 'লাত' ও 'উযযার' নামে কোন বিশেষ কাজ করার কথা হলে তিনি বলতেন' এ মূর্তিগুলোর দোহাই দিয়ে তোমরা আমাকে কিছুই বলো না। হযরত মুহাম্মাদ (সা)-এর কর্মনিষ্ঠা, সত্যবাদিতা, নম্রতা, আত্মবিশ্বাস প্রভৃতি গুণাবলির জন্য সকলে তাঁকে ভালোবাসত এবং 'আল-আমীন' উপাধি দিয়েছিলেন।
হারবুল ফুজ্জারে অংশগ্রহণ: চাচা আবু তালিবের সঙ্গে সিরিয়া থেকে মক্কায় ফিরে আসার কিছুদিন পরেই শুরু হল বিখ্যাত মেলা। এ মেলায় জুয়া খেলা, ঘোড়াদৌড় ও কাব্য প্রতিযোগিতা নিয়ে শুরু হয় এক ভয়াবহ যুদ্ধ। এ যুদ্ধ "হারবুল ফুজার" বা অন্যায় সমর বা পাপাচারীদের সমর নামে পরিচিত। এ যুদ্ধ পাঁচ বছরকাল স্থায়ী হয়েছিল এবং এতে অনেক লোকে প্রাণ হারিয়েছিল। যেহেতু এ যুদ্ধ কুরাইশ ও কায়েস বংশের মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল, সেহেতু হযরত মুহাম্মাদ (সা)-কে তাঁর চাচা আবু তালিবের সাথে ঐ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে হয়েছিল। এ যুদ্ধে তিনি নিক্ষিপ্ত তীর সংগ্রহ করে চাচার হাতে তুলে দিতেন। কিন্তু তিনি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ