- হোম
- একাডেমি
- মাদরাসা
- নবম-দশম শ্রেণি
- প্রাক-ইসলামি পটভূমি ও রাসুল (স.) এর মক্কা জীবন
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
প্রাক-ইসলামি পটভূমি ও রাসুল (স.) এর মক্কা জীবন
হিজরতের কারণ
১. প্রাকৃতিক প্রভাব: মদিনা ছিল শস্য-শ্যামল ও উর্বর ভূমি। সেখানে যাস্থ্যকর ও সুশীতল আবহাওয়া বিরাজমান ছিল। তাই সেখানকার লোকদের আচার-আচরণ ছিল নম্র, ভদ্র ও মার্জিত। তাঁরা ছিল দয়ালু ও পরোপকারী। তাই, সেখানে ইসলামের দাওয়াত সহজ ও গ্রহণীয় হবে ধারণা করে রাসুল (সা) মদিনায় হিজরত করেন।
২. ইসলাম প্রচারের অনুকূল পরিবেশ: আউস ও খাযরাজ গোত্রের লোকজন হজ্জের মৌসুমে আকাবায় মিলিত হয়ে হযরতের নিকট শপথ করে ইসলাম গ্রহণ করলে মদিনায় ইসলামের বিস্তৃতি লাভ করে। এছাড়া, হযরত মুহাম্মাদ (সা.) হযরত মুসআব (রা.) কে ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্য মদিনায় প্রেরণ করেন। এর ফলে দ্বিতীয় আকাবায় শপথ গ্রহণে কমপক্ষে ৭১ জন পুরুষ ও ২ জন মহিলা হযরতের সাথে মিলিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। এরপর মদিনায় ইসলাম ধর্ম প্রচারের অনুকূলে পরিবেশ সৃষ্টি হলে হযরত মুহাম্মাদ (সা) তথায় হিজরত করার ইচ্ছা পোষণ করেন।
৩. মনস্তাত্বিক কারণ: হযরত মুহাম্মাদ (সা.) অতীতের নবি রাসুলদের ইতিহাস থেকে জানতে পেরেছেন যে কোন নবি-রাসুলই নিষ্কন্টভাবে তাঁর জন্মভূমিতে দ্বীন প্রচারে সক্ষম হননি। তদুপরি মক্কায় ইসলাম প্রচার করতে গিয়ে জুলুম-নির্যাতন সহ্য করা সত্ত্বেও ইসলামের পরিবেশ সেখানে কায়েম হয়নি। তাই তিনি মানসিকভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিলেন হিজরত করার জন্যে।
৪. আভিজাত্য ও কৌলীণ্যের প্রভাব: ইসলাম সমতার ধর্ম। ইসলামের দৃষ্টিতে সকল মুসলমান ভাই ভাই। উচ্চ-নীচ কোন প্রভেদ নেই। কিন্তু মক্কার কুরাইশদের মধ্যে যে আভিজাত্য ও কৌলিন্য প্রথা মজ্জাগত ছিল তা ইসলামের প্রভাবে উলট-পালট হয়ে যেতে বাধ্য। ঐতিহাসিক যোশেফ ছেল বলেন: মক্কার শাসকবর্গ ইসলাম ধর্মের শিক্ষার প্রতি যতখানি শত্রু ভাবাপন্ন ছিল, ভার তুলনায় বেশি বিরুদ্ধ ভাবাপন্ন ছিল ইসলাম কর্তৃক আনীত সম্ভাব্য সামাজিক ও রাজনৈতিক বিপ্লবের প্রতি। ইসলামের শিক্ষা হল বংশ, জন্ম, আভিজাত্য বা পৌরহিত্যের জন্যে মানুষ কোন বিশেষ অধিকার লাভ করতে পারে না। যে কারণে তারা ইসলামকে গ্রহণ করতে পারে নি। ইসলামের শিক্ষা তাদের স্বার্থের পরিপন্দ্বী ছিল। ফলে তারা বিরোধীতার তীব্রতা বাড়িয়ে দিয়েছিল।
৫. পুরোহিতদের বিরোধিতা: মক্কার পুরোহিতরা ছিল পৌত্তলিক। কারা-গৃহে তখন মূর্তি রাখা হয়েছিল এবং সেগুলোর পূজা হত। তাই, কাবা গৃহের একচ্ছত্র অধিকার ছিল মক্কার পুরোহিতদের। মূর্তিপূজার বিরোধী ইসলামের শিক্ষা হল আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোনো সত্ত্বার এবাদত করা যাবে না। মক্কার পুরোহিতদের কায়েমি স্বার্থ-বিনষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ে তারা বিরোধিতা করতে থাকে। ফলে সেখানে ইসলামের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ায় হযরত মুগ্ধম্মাদ (সা.) মদিনায় হিজরত করার সিদ্ধান্ত নেন।
৬. ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত: মক্কার কুরাইশরা ধর্মান্ধ হয়ে পূর্ব-পুরুষদের চিরাচরিত আচার-অনুষ্ঠানকে আকড়িয়ে ধরে মূর্তিপূজা করত। তারা মূর্তিপুজাকে বর্জন করে তাওহিদের বাণীকে গ্রহণ করে আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসী হতে পারে নি। তাওহীদ পরিপন্থী গুড়বানী ও মূর্তিপূজা ত্যাগ করার মানসিকতা তৈরি করতে পারেনি। তাই, তারা ইসলামের বিরোধিতা করায়
রাসুল (সা.) মদিনায় হিজরত করেন।
৭. মুসলমানদের সংখ্যা স্বল্পতা: নবুয়ত প্রাপ্তির পর তিন বছর গোপনে ও ১০ বছর প্রকাশ্যে দাওয়াত দেয়া সত্বেও উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়নি। মানুষ মুর্তিপুজা ছেড়ে দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করেনি। আর যারা ইসলাম গ্রহণ করেছেন তাদের উপরেও কুরাইশরা প্রতিনিয়ত নির্যাতনের স্টীম রোলার চালিয়েছে। ফলে মুসলমানগণ শক্তি সঞ্চয় করতে পারেননি কাফেরদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার। ইসলামের বিস্মৃতি, শক্তি বৃদ্ধি ও কাফিরদের প্রস্তুতি গ্রহণ করার জন্যে হযরত মদিনাকে বেছে নিয়ে হিজরত করেন।
৮. মদিনাবাসীদের দ্বন্দ্ব নিরসন: মদিনায় যে সমস্ত লোক বসবাস করত তার মধ্যে খাযরাজ এবং আউস গোত্রদ্বয় প্রসিদ্ধ ছিল। তারা ইয়ামেন থেকে এখানে বসতি স্থাপন করে। অপরদিকে ইহুদি ধর্মাবলম্বী তিনটি গোত্রের লোকজনও এখানে বাস করত। তারা যথাক্রমে বনি কাইমুকা, বনি নাযির এবং বনি কুরাইযা। আউস এবং খাযরাজ গোত্রের লোকেরা দ্বন্দ্ব-কলহে লিপ্ত ছিল। তাদের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী এবং শান্তি সস্থাপনের জন্য একজন মহাপুরুষের প্রয়োজন তাঁরা অনুভব করতে থাকে। অতপর হযরতের অসাধারণ ব্যক্তিত্বের সংবাদ পেয়ে তারা তাকে আমন্ত্রণ জানালেন। ফলশ্রুতিতে মহানবি (সা) মদিনায় হিজরত করেন।
৯. প্রভাবশালী অভিভাবক ও জীবন সঙ্গিনীর অভাব নবিজীর চাচা আবু তালিব সব সময় তাঁকে আশ্রয় দিয়ে রাখতেন। আর হযরত খাদিজা (রা) তাঁকে সব সময় পরামর্শ ও সাহস যোগাতেন। তাঁদের মৃত্যুতে তিনি অত্যন্ত অসহায় হয়ে পড়লেন। কুরাইশদের নির্যাতন আরও বহু গুণ বেড়ে গেল। এমনকি তাঁর প্রাণ নাশের ব্যবস্থা পাকাপাকি করা হল। নবিজী (সা.) জীবনের মিয়াপত্তার অভাব বোধ করায় মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন।
১০. ইহুদিদের আমন্ত্রণ: মদিনার ইহুদিগণ তাওরাত কিতাবের মাধ্যমে জানতে পারল যে, শেষ নবির আবির্ভাব ঘটবে। তাঁরা শেষ নবিকে মদিনায় তাঁদের মধ্যে পাবার একান্ত আগ্রহ প্রকাশ করল। হিজরতের পূর্বেই মদিনায় অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল। মক্কায় কোনো ইহুদি না থাকায় ভাঁরা শেষ নবির আবির্ভাবকে মেনে নিতে পারে নি। তাই তিনি মক্কা ছেড়ে মদিনায় হিজরত করেন।
১১. আত্মীয়তার সম্পর্ক হযরত মুহাম্মাদ (সা) এর পিতা আবদুল্লাহ ও প্রপিতামহ হাশিম উভয়ে মদিনায় বিবাহ করেন। নবিজীর মাতা বিবি আমিনার দিক থেকে মদিনায় আত্মীয়-স্বজন রয়েছে। তাছাড়া তাঁর পিতা আবদুল্লাহর কবরও মদিনার উপকণ্ঠে রয়েছে। সব দিক বিবেচনা করে নবিজীর মনে ধারণা জন্মে মদিনাবাসীদের সাহায্য ও সহযোগিতা তিনি লাভ করবেন। তাই তিনি মদিনায় হিজরত করেন।
১২. আল্লাহর নির্দেশ: ইসলামের উত্থানকে ঠেকানোর জন্যে মক্কার কাফির পৌত্তলিকগণ নির্যাতন, নিপীড়ন চালিয়েও কোন সুফল না পেয়ে আবু জাহেলের নেতৃত্বে 'দারুণ নাদওয়ায়' পরামর্শ সভা ডেকে নবিজীকে হত্যা করার জন্যে হত্যাকারী কমিটি গঠন করে। তখন আল্লাহর প্রত্যাদেশের মাধ্যমে হযরত মুহাম্মাদ (সা) কে নির্দেশ দেয়া হয় হিজরতের জন্যে। সে অনুসারে তিনি রাতের অন্ধকারে হযরত আবু বকর (রা.) কে সাথে নিয়ে মক্কা ত্যাগ করেন।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ
