- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
- পাকিস্তানি আমলে বাংলা : ভাষা আন্দোলন ও এর গতিপ্রকৃতি
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
পাকিস্তানি আমলে বাংলা : ভাষা আন্দোলন ও এর গতিপ্রকৃতি
পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক অবস্থা Political Situation of East Bengal
পাকিস্তান লাভের পর থেকেই পাকিস্তানি শাসকচক্র পূর্ব বাংলার প্রতি ব্যাপক বৈষম্যমূলক নীতি গ্রহণ করেন। পাকিস্তান সৃষ্টির পর মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ-এর গভর্নর জেনারেল পদ গ্রহণ করেন। তিনি লিয়াকত আলী খানকে প্রধানমন্ত্রী এবং খাজা নাজিমউদ্দিনকে পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী করে মন্ত্রিসভা গঠন করেন। পাকিস্তানের অধিবাসীদের শতকরা ৫৬ জনের বাস পূর্ব বাংলায়। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় গভর্নর জেনারেল ও প্রধানমন্ত্রী দুটি পদের একটিও কোনো পূর্ব বাংলার লোককে দেওয়া হয়নি। পাকিস্তানের রাজধানী করা হয় করাচিতে। পরে তা সরিয়ে নেওয়া হয় ইসলামাবাদে। দেশ রক্ষায় ৩টি বাহিনীর সদর দপ্তরও করা হয় পশ্চিম পাকিস্তানে।
ভারতবর্ষ ভাগ করার সময় শেরেবাংলা এ.কে. ফজলুল হক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলকাতাকে দু'ভাগে ভাগ করার দাবি করেন। তাদের যুক্তি ছিল যে, বার্লিন শহরকে যদি দু' জার্মানির মধ্যে ভাগ করা সম্ভব হয়, তাহলে কলকাতাকে কেন পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে ভাগ করা যাবে না? তাছাড়া বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায় যখন বাংলা ভাগ করার দাবি জানিয়েছে এবং সংখ্যালঘিষ্ঠ দল সরে যাবার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে তখন তারা সম্পূর্ণ কলকাতা পেতে পারে না। কিন্তু কেন্দ্রীয় লীগ কর্তৃপক্ষ সীমানা বণ্টনের ব্যাপারে হক সাহেব ও সোহরাওয়ার্দীকে কথাবার্তা বলতে না দিয়ে ওয়াসিমকে উকিল নিযুক্ত করেন। মি. ওয়াসিম লীগের হাই কমান্ডের নির্দেশক্রমে র্যাডক্লিক কমিশনের সম্মুখে কলকাতার ওপর কোনো দাবি উত্থাপন করলেন না।
কলকাতা মহানগরী পূর্ব বাংলার সম্পদ দিয়ে গড়ে উঠেছিল। সুতরাং কলকাতার প্রতি পাকিস্তানের দাবি যথাযথ ছিল। কিন্তু লীগ কর্তৃপক্ষ কলকাতার দাবির প্রতি কোনো আগ্রহ দেখাননি। এর কারণ হিসেবে বলা যায়, (১) কলকাতা বিভক্ত হলে এবং এর একাংশ পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হলে সেখানে পাকিস্তানের রাজধানী স্থাপনের দাবি উঠতে পারে। এ দাবি পূরণ করা হলে বাংলার মুসলমানগণ পাকিস্তানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের সুযোগ-সুবিধা পাবে এবং তাদের ভবিষ্যৎ উন্নতির পথ সুগম হবে, সেটা হতে দেওয়া যায় না। (২) শহীদ সোহরাওয়ার্দীর রাজনৈতিক শক্তি কেন্দ্র কলকাতা থাকায় তার প্রভাব বেড়ে যাবে। সুতরাং কলকাতা রাজধানী হলে লীগ কর্তৃপক্ষের ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। এভাবে ব্যক্তিগত স্বার্থে জাতীয় স্বার্থ নষ্ট হলো। লীগ কর্তৃপক্ষ কলকাতা ভাগ করার ব্যাপারে নিরব থাকার ফলে বহু সরকারি সম্পদ থেকে পূর্ব বাংলা বঞ্চিত হলো। সব কিছু পিছনে রেখে পাকিস্তান সরকার ঢাকায় চলে আসল। কলকাতার দাবি ত্যাগ করলে পূর্ব বাংলাকে ৩৩ কোটি টাকা দেবার কথা ছিল তাও পাওয়া গেল না। পাকিস্তান সরকার ভারতকে কলকাতা দিয়ে বিনিময়ে পূর্ব পাঞ্জাব ও লাহোর পেয়ে আত্মপ্রসাদ লাভ করল।
১৯৪৫-৪৬ খ্রিষ্টাব্দের সাধারণ নির্বাচনে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর অবদানের জন্যই মুসলিম লীগ জয়লাভ করে। ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বাংলার সংসদীয় নেতা হিসেবে মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন। তিনি অবিভক্ত বাংলার পক্ষে ছিলেন। কিন্তু মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ছিলেন অবিভক্ত বাংলার বিপক্ষে, একক পাকিস্তান অর্জনের পক্ষে। দেশ বিভাগের পর দেখা যায়, লর্ড মাউন্টব্যাটেনকে ভারতের রাষ্ট্রপ্রধান করা হয়। কিন্তু ক্ষমতালোভী মুসলিম লীগ নেতা জিন্নাহ নিজেই পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল হন। এর ফলে ব্রিটিশ সরকার নবগঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রকে এর ন্যায্য সম্পদ ও পাওনা থেকে বঞ্চিত করেছিল।
১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ এপ্রিল হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সার্বভৌম স্বাধীন বাংলা রাষ্ট্রের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। বাংলার মুসলিম লীগ সম্পাদক আবুল হাসিম এবং কংগ্রেস প্রধান শরত বসু ও কিরণ শঙ্কর রায় এই প্রস্তাব পূর্ণ সমর্থন করেন। বৃহৎ বাংলা রাষ্ট্রের এই প্রস্তাব 'বসু সোহরাওয়ার্দী প্রস্তাব' নামে খ্যাত।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ

