• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
  • পাকিস্তানি আমলে বাংলা : ভাষা আন্দোলন ও এর গতিপ্রকৃতি
পাকিস্তানি আমলে বাংলা : ভাষা আন্দোলন ও এর গতিপ্রকৃতি

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

পাকিস্তানি আমলে বাংলা : ভাষা আন্দোলন ও এর গতিপ্রকৃতি

বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিকাশে ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব (Importance of language movement is the development of bengalee nationalism)

১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ভাষা আন্দোলন পূর্বপাকিস্তানের ইতিহাসে এক অনন্য ঘটনা। পাকিস্তান রাষ্ট্রের অবহেলা ও বৈষম্যমূলক আচরণের বিরুদ্ধে এটি ছিল বাঙালি জাতির প্রথম প্রতিবাদ ও বিদ্রোহ, বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রথম প্রেরণা; জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষের মাইল ফলক। বস্তুত ভাষা আন্দোলন পাকিস্তানের রাজনীতিতে এক সুদূর প্রসারী প্রভাব ফেলে। ভাষা আন্দোলনের সাথে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংবিধানিক প্রশ্নও জড়িয়ে পড়ে। যেমন কেন্দ্রীয় গণপরিষদে পূর্বপাকিস্তানের জনসংখ্যানুপাতিক আসন সংখ্যা দাবি করা হয়। প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন দাবি করা হয়, কেন্দ্রীয় সিভিল সার্ভিসে বাঙালিদেরকে অধিক সংখ্যায় নিয়োগের দাবি উচ্চারিত হয় এবং পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্যের অবসান ঘটানোর দাবি করা হয়। বাংলা ভাষার প্রশ্নে মুসলিম লীগের বৈরী মনোভাবের কারণে এই দল থেকে গণতন্ত্রী দল, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ প্রভৃতি নতুন দলের সৃষ্টি হওয়ায় পূর্ববাংলায় মুসলিম লীগের প্রাধান্য ক্ষুণ্ণ হয়। ফলে ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের পূর্ববাংলা প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে এই দলের চরম ভরাডুবি হয়।

ভাষা আন্দোলন প্রথম পর্যায়ে একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলন ছিল। কিন্তু কালক্রমে এটি রাজনৈতিক রূপ পরিগ্রহ করে। অনেক রাজনৈতিক দল ও রাজনীতিবিদ এই আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ফলে পূর্ববাংলার স্বাধিকারের চিন্তা-চেতনা শুরু হয়। পরবর্তী আন্দোলনসমূহে ভাষা আন্দোলন প্রেরণা হিসেবে কাজ করে। ভাষা আন্দোলন একধরনের প্রাদেশিকতাবাদের জন্ম দেয়।

ভাষা আন্দোলন জাতীয় জাগরণের প্রতীক হয়ে দাঁড়ায় ও উপনিবেশ থেকে মুক্তির সূচনা ঘটায়। জাতিকে সকল কর্মকাণ্ডে ঐক্যবদ্ধ হতে উদ্বুদ্ধ করে। যখনই পূর্ববাংলার স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোনো দাবি উচ্চারণ করা হয়েছে তখনই পূর্ববাংলাবাসীর সমর্থন অর্জন করেছে। ভাষা আন্দোলন ছাত্রসমাজকে প্রচ্ছন্ন রাজনৈতিক শক্তিতে রূপায়িত করে। ছাত্ররা প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে। ছাত্র রাজনীতি শক্তিশালী ও অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে। ভাষা আন্দোলনের মাত্র দুমাসের মধ্যে পূর্ববাংলায় ছাত্র ইউনিয়ন নামে ছাত্র সংগঠন জন্মলাভ করে। পরবর্তী আন্দোলনসমূহে তাই দেখা যায় ছাত্রসমাজই ছিল মূল চালিকাশক্তি। যেকোনো সরকারের যেকোনো অন্যায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ প্রতিবাদ উচ্চারণ করে ছাত্রসমাজ। ভাষা আন্দোলন ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, শ্রমিক, কর্মচারী প্রভৃতি সকল পেশার লোকদের মধ্যে ঐক্যের যে ঐতিহ্য সৃষ্টি করে, পরবর্তী আন্দোলনসমূহে আমরা তাঁর পুনরাবৃত্তি অবলোকন করি।

ভাষা আন্দোলনের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক এই যে এর সাথে জড়িত নেতৃবৃন্দ অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রবর্তন করেন। ফলে পূর্ববাংলার হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি বৃদ্ধি পায়। আওয়ামী মুসলিম লীগ নামের দলটি মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ গ্রহণ করে সকল ধর্মের মানুষের নিকট অধিকতর গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করে। ফলে পরবর্তী আন্দোলনসমূহে নেতৃত্ব আওয়ামী লীগের হাতেই চলে যায়।

পরিশেষে বলা যায় যে, ভাষা আন্দোলন বাঙালি জনগণের জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। মাতৃভাষাকে আপন মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা করার জন্য এ সময় পূর্ববাংলার ছাত্রসমাজ জীবন বিলিয়ে দিতেও দ্বিধা করেনি। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর হতেই শাসকদের কাছ হতে পূর্ববাংলার জনগণ কোনো সহানুভূতি পায়নি। তাই হয়েছে প্রতিবাদমুখর; হয়েছে সংঘবদ্ধ। শেষ পর্যন্ত তাদের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়েছে। মায়ের ভাষাকে রক্ষা করেছে বুকের রক্ত দিয়ে। এ ঘটনা পূর্ববাংলার জনগণের মনের শক্তিকে অনেক বাড়িয়ে দিয়েছিল। পরবর্তী সময়ে অধিকার আদায়ের সব আন্দোলনে ভাষা আন্দোলন প্রসূত একুশের চেতনা সরাসরি ভূমিকা রেখেছে। একুশের চেতনায় সংঘবদ্ধ বাঙালি জাতির স্বায়ত্তশাসনের দাবি থেকে স্বাধীনতার দাবি অতঃপর মুক্তিযুদ্ধ। এ ধারাবাহিকতায় বীরবাঙালি মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভ করে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটায়।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ