- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
- পাকিস্তানি আমলে বাংলা : ভাষা আন্দোলন ও এর গতিপ্রকৃতি
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
পাকিস্তানি আমলে বাংলা : ভাষা আন্দোলন ও এর গতিপ্রকৃতি
ভাষা আন্দোলনে নারী সমাজের ভূমিকা The Role of Women's in Language Movement
বাঙালির অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে সকল আন্দোলন-সংগ্রামে নারী সমাজের ভূমিকা ছিল অসাধারণ। ভাষা আন্দোলনেও তার ব্যতিক্রম নয়। পঞ্চাশের দশকে রক্ষণশীল সমাজের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে তারা বিক্ষোভ মিছিল এবং ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে সমাবেশস্থলে যোগ দেন। আহত ছাত্রদের চিকিৎসার জন্য চাঁদা সংগ্রহ, পুলিশ নির্যাতন থেকে ছাত্রদের রক্ষা করতে লুকিয়ে রাখা, কখনো বন্দী ছাত্রদের জন্য খাবার সংগ্রহে নারীরা অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে।
ভাষা আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণের সঠিক তথ্য না থাকলেও যে সকল তথ্য রয়েছে তাতে তাদের ভূমিকা প্রশংসার দাবি রাখে। ভাষা আন্দোলনে সম্পৃক্ত নারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন কবি সুফিয়া কামাল, নাদেরা বেগম (মুনির চৌধুরীর বোন যিনি কারাগারে পুলিশের কঠোর নির্যাতন ও অত্যাচারের স্বীকার হন), বেগম আনোয়ারা খাতুন (পূর্ববঙ্গের আইন পরিষদের সদস্য), লীলা রায় (জয়শ্রী সম্পাদিকা), অধ্যাপিকা সামসুন্নাহার, সৈয়দা সাহেরা ভানু (সিলেট জেলা মহিলা মুসলিম লীগের সহ সভানেত্রী), সৈয়দা লুৎফুন্নেসা (সিলেট জেলা মহিলা মুসলিম লীগের সম্পাদিকা), রাবেয়া খাতুন, জাহানারা মতিন, রোকেয়া বেগম, হামিদা রহমান, হালিমা খাতুন, হোসনেয়ারা নীরু, ড. সুফিয়া আহমদ প্রমুখ।
ড. সুফিয়া আহমেদের স্মৃতিচারণ থেকে জানা যায়, ১৯৫২ সালের ৩১ জানুয়ারি ঢাকা বার লাইব্রেরি হলে গঠিত হয় 'সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ'। ২১ ফেব্রুয়ারি তার ওপর দায়িত্ব পড়েছিল আনন্দময়ী ও বাংলাবাজার স্কুলের মেয়েদের জড়ো করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় নিয়ে আসা। সিদ্ধান্ত হয়েছিল ছেলেদের ১০ জন করে এবং মেয়েদের ৪ জন করে বের হয়ে পুলিশের ব্যারিকেড পার হয়ে এগিয়ে যাবে। তিনি বলেন, প্রথম ২টি দল মিছিল নিয়ে বের হলে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে ট্রাকে তোলে। তৃতীয় দল নিয়ে বের হয় মেয়েরা, কিন্তু পুলিশের লাঠিচার্জ ও টিয়ার গ্যাসে অনেকেই আহত হন। ড. হালিমা খাতুনের স্মৃতিচারণ থেকে জানা যায়, তার ওপর দায়িত্ব ছিল মুসলিম গার্লস স্কুল এবং বাংলাবাজার গার্লস স্কুল থেকে মেয়েদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় আসা। মেয়েদের দল বের হলে পুলিশ তা ছত্রভঙ্গ করার জন্য লাঠিচার্জ করে। তারা দমে না গিয়ে গণপরিষদ ভবনের দিকে এগোতে থাকলে পুলিশ গুলিবর্ষণ করে। গুলিতে রফিক নিহত হয়। রওশন আরা স্মৃতিচারণে জানা যায়, পুলিশের লাঠিচার্জে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন।
ঢাকার বাইরে নবাবগঞ্জের মডার্ন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মমতাজ বেগম ৩০০ ছাত্রী নিয়ে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে মিছিল করেছিলেন। এভাবে ভাষা আন্দোলনে বিভিন্ন অঙ্গনে নারীরা অবদান রেখে নারী সমাজের মর্যাদা বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। ভাষা আন্দোলনে অবরোধ এবং জীবন বিসর্জন শুধুমাত্র ঢাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও এ আন্দোলন হয়েছিল দেশব্যাপী। ঢাকার বাইরে রাজশাহী, খুলনা, চট্টগ্রাম, যশোর, রংপুর, বরিশাল, কুমিল্লা, জামালপুর, ময়মনসিংহ এবং সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন শহর-বন্দরে ছাত্র, যুবক সহ সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ বাংলা ভাষার দাবিতে একাত্মতা ঘোষণা করে।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ

