- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
- পাকিস্তানি আমলে বাংলা : ভাষা আন্দোলন ও এর গতিপ্রকৃতি
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
পাকিস্তানি আমলে বাংলা : ভাষা আন্দোলন ও এর গতিপ্রকৃতি
১৯৪৮-এর রাজপথ: গণমানুষ ও ছাত্রসমাজের ভূমিকা Movement of 1948: Role of General Masses and Students
১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকার রেসকোর্স ময়দান (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এবং ২৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বললেন, 'Urdu and only urdu shall the state language of Pakistan' (উর্দু এবং শুধু উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা)। উভয় ক্ষেত্রে ছাত্ররা 'না, না' বলে প্রতিবাদ জানায়। উল্লেখ্য যে, তখন পাকিস্তানের ৫৬% লোকের মাতৃভাষা বাংলা, উর্দু কোনো অঞ্চলেরই মাতৃভাষা ছিল না। নিচে একটি ছকের মাধ্যমে বিভিন্ন ভাষার শতকরা হার দেখানো হলো-
মাত্র ৪% লোকের ভাষা ছিল উর্দু। গণতান্ত্রিক নিয়ম অনুযায়ী একটি দেশের রাষ্ট্রভাষা হবে সেটি যে ভাষায় বেশি লোক কথা বলে। কিন্তু মি. জিন্নাহ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ওপর কোনো প্রকার শ্রদ্ধা না দেখিয়েই ঘোষণা দিলেন এবং রাজনৈতিক বিপর্যয় ডেকে আনলেন। বস্তুত মি. জিন্নাহ এ সময় বাঙালি বিদ্বেষী পাকিস্তানি আমলাদের দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবান্বিত হয়েছিলেন। মি. জিন্নার বক্তব্যের সঙ্গে সঙ্গে ছাত্র প্রতিনিধিদের নিকট থেকে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। বাঙালি সভ্যতা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে ধ্বংস করে বাঙালিকে আত্ম পরিচয় থেকে বঞ্চিত করে পাকিস্তানি আজ্ঞাবহ করে রাখার এটাই ছিল প্রথম পদক্ষেপ। ছাত্ররা কিছুতেই এ ষড়যন্ত্র মেনে নিতে পারেনি। ছাত্ররা বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি উত্থাপন করে। ২ মার্চ, ১৯৪৮ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফজলুল হক হলে প্রতিষ্ঠিত সর্বদলীয় সংগঠন 'রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ' দুটি দাবির জন্য আন্দোলন চালায়- (১) বাংলা ভাষা হবে পূর্ব বাংলার শিক্ষার বাহন এবং অফিস-আদালতের ভাষা (২) পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে বাংলা এবং উর্দু।
১১ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৮ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ইন্তেকাল করেন। তার স্থলে গভর্নর জেনারেল নিযুক্ত হন উর্দুভাষী খাজা নাজিমউদ্দিন (১৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৮)। অত্যন্ত দুর্বল ব্যক্তিত্বহীন খাজা নাজিমউদ্দিনের সমস্যা সমাধান অপেক্ষা সমস্যা সৃষ্টির ব্যাপারে বিশেষ কৃতিত্ব ছিল। তারপরও ঢাকার নবাব পরিবারের সদস্য হওয়ায় সকলেই আশা করছিল যে, খাজা নাজিমউদ্দিন বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবেন। ১৯৫০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান গণপরিষদে আলী জিন্নাহর সুর ধরে ঘোষণা দিলেন, 'উর্দুই হবে পাকিস্তানের জাতীয় ভাষা।' এর প্রতিবাদে পূর্ব বাংলা ছাত্র সমাজ প্রচণ্ড বিক্ষোভে ফেটে পরে। ১৯৫১ সালের ১৬ অক্টোবর লিয়াকত আলী খান আততায়ীর গুলিতে নিহত হলে, 'খাজা নাজিম উদ্দীন প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। মার্কিন লেখক তার সম্পর্কে বলেন, "দুর্বল চিত্তের অধিকারী খাজা নাজিমউদ্দিন বাংলার স্বার্থকে তুলে ধরতে ব্যর্থ হন।" তিনি নূরুল আমিনকে পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী নিয়োগ করেন এবং ২ এপ্রিল, ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত উক্ত পদে বহাল থাকেন। পূর্ব বাংলার জমিদারি প্রথা বিলুপ্তি (১৯৫০) ও ভাষা আন্দোলন তার সময়ের উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সংবিধানে পরিবর্তন আনা হয়। সংবিধানের ২১৪ (১) অধ্যায়ে রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কে লেখা হয়- 214 (1) The state language of Pakistan Shall be Urdu and Bengali (২১৪ (১) উর্দু এবং বাংলা হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা।। ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৬ সালে সরকারিভাবে প্রথম শহিদ দিবস পালিত হয় এবং ২১ ফেব্রুয়ারির দিন সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়, যা আজও চলমান।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ

