- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
- পাকিস্তানি আমলে বাংলা : ভাষা আন্দোলন ও এর গতিপ্রকৃতি
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
পাকিস্তানি আমলে বাংলা : ভাষা আন্দোলন ও এর গতিপ্রকৃতি
ভাষা আন্দোলনের শহিদদের পরিচয় ও অবদান Martyrs Language of Movement Introduction and Contribution
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাজপথে জীবন উৎসর্গ করে যে সকল বাংলা মায়ের দামাল সূর্য সন্তানরা আমাদের প্রিয় মাতৃভাষা রক্ষা করেছিলেন তাদের মধ্য থেকে উল্লেখযোগ্য কয়েক জনের জন্ম পরিচয় এবং অবদান তুলে ধরা হলো-
ভাষা শহিদ রফিকউদ্দিন আহমদ (১৯২৬-১৯৫২)
জন্ম পরিচয়: রফিকউদ্দিন আহমদ ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ অক্টোবর মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর বলধার গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা আবদুল লতিফ ছিলেন ঢাকার বাদামতলীস্থ কমার্শিয়াল প্রেসের মালিক। মাতা রাফিজা খাতুন গৃহিণী। রফিকউদ্দিন মানিকগঞ্জের 'বয়রা স্কুল' থেকে ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে ম্যাট্রিক পাস করে মানিকগঞ্জের 'দেবেন্দ্র কলেজে' ভর্তি হন। এ সময় তার পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায় এবং প্রেস পরিচালনার দায়িত্ব নেন। তিনি পুনরায় পড়ালেখার জন্য জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হন। ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি জগন্নাথ কলেজের ছাত্র। তখন তার বয়স ২৬ বছর।
যেভাবে শহিদ হলেন ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গের আন্দোলনরত ছাত্রদের মধ্যে রফিকও ছিলেন। ছাত্রদের মিছিল ভঙ্গ করার জন্য পুলিশ লাঠিচার্জ ও কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করে। যে কারণে ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ব্যারাকে আশ্রয় নেওয়ার জন্য রওয়ানা হন এ সময় পুলিশের গুলিতে রফিকের মাথার খুলি উড়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে তিনি মারা যান। মেডিকেল হোস্টেলের ১৭ নম্বর রুমের পূর্বদিকে তার লাশ পড়েছিল। ছয় সাত জন ধরাধরি করে তার লাশ এনাটামি হলের পেছনের বারান্দায় এনে রাখেন। রাত ৩টায় সামরিক বাহিনীর প্রহরায় প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট ওবায়দুল্লাহর উপস্থিতিতে তার জানাজা পড়ান ঢাকার আজিমপুর মসজিদের ইমাম হাফেজ আবদুল গফুর। সংগোপনে আত্মীয়-স্বজনের অজান্তে আজিমপুর কবরস্থানের অসংরক্ষিত এলাকায় তাকে দাফনের ব্যবস্থা করা হয়। ভাষা শহিদদের মধ্যে তিনি প্রথম শহিদ হন। ১৪ মার্চ ১৯৫২ তারিখের দৈনিক আজাদ এবং শহিদ দিবস সংখ্যা ১৯৫৪-র সাপ্তাহিক সৈনিক থেকে এ তথ্য জানা যায়। রফিকউদ্দিন আহমদ ও অন্যান্য ভাষা শহিদের আত্মত্যাগের ফলেই বাংলা ভাষা রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে শাসনতান্ত্রিক স্বীকৃতি লাভ করে। তার শহিদ স্মৃতি পূর্ববঙ্গবাসীদের মনে বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনা জাগ্রত করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে এবং এ চেতনার ভিত্তিতেই সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
ভাষা শহিদ আবুল বরকত (১৯২৭-১৯৫২)
জন্ম পরিচয়: ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে ১৬ জুন মুর্শিদাবাদের অন্তর্গত ভরতপুরের বাবলা গ্রামে আবুল বরকত জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মরহুম শামসুজ্জোহা, মাতা হাসিনা বেগম। বরকত তালিবপুর হাইস্কুল থেকে ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে কৃতিত্বের সহিত মেট্রিক এবং বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে কৃতিত্বের সাথে আই. এ. পাস করেন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে মুর্শিদাবাদ ত্যাগ করে ঢাকায় চলে আসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে চতুর্থ হয়ে বি.এ. অনার্স পাস করেন। অতঃপর স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে অধ্যয়ন করেন। তিনি ঢাকার পুরানা পল্টন লাইনে "বিষ্ণুপিয়া" ভবনে মামার সাথে মৃত্যুর শেষদিন পর্যন্ত ছিলেন। তিনি কেবল ছাত্র হিসেবেই ভালো ছিলেন তা নয়; বরং স্বভাব চরিত্র ও ব্যবহার ছিল মার্জিত ও অমায়িক। শহিদ বরকত তমদ্দুন মজলিস কর্তৃক প্রকাশিত ভাষা আন্দোলনের মুখপত্র সাপ্তাহিক সৈনিকের মাধ্যমে এ মহান আন্দোলনের প্রেরণা পেয়েছিলেন বলে জানা যায়। তমদ্দুন মজলিসের বিভিন্ন বৈঠকে তিনি অংশগ্রহণ করতেন। তবে আন্দোলনের কোনো প্রথম সারির নেতা ছিলেন না।
যেভাবে শহিদ হলেন বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজের সম্মুখের রাস্তায় ১৪৪ ধারা ভেঙে বিক্ষোভপ্রদর্শনরত ছাত্রজনতার ওপর পুলিশ গুলি চালালে হোস্টেলের ১২ নম্বর শেডের বারান্দায় গুলিবিদ্ধ হন আবুল বরকত। ঢাকা মেডিকেল কলেজের হাসপাতালে জরুরি বিভাগে ভর্তি অবস্থায় রাত ৮ ঘটিকায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ১৪ মার্চ ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের দৈনিক আজাদ পত্রিকায় প্রকাশিত সরকারি তথ্য বিবরণী থেকে জানা যায়, আজিমপুর মসজিদের ইমাম হাফেজ মোহাম্মদ আব্দুল গফুর আবুল বরকতের জানাজা পড়ান। সেই রাতেই তার আত্মীয়-স্বজনের উপস্থিতিতে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের তত্ত্বাবধানে আজিমপুর গোরস্তানে তার লাশ সমাহিত করা হয়। মহান রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের শহিদদের অন্যতম একজন হলেন আবুল বরকত। মহান ভাষা আন্দোলনে অবদানের জন্য ২০০০ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ সরকার শহিদ বরকতকে (মরণোত্তর) একুশে পদক প্রদান করে।
ভাষা শহিদ শফিউর রহমান (১৯১৮-১৯৫২)
জন্ম পরিচয়: ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার কোন্নগরে শফিউর রহমান জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মাহবুবুর রহমান ছিলেন ঢাকার পোস্ট এন্ড টেলিগ্রাফ অফিসের সুপারিনটেনডেন্ট। তিনি কলকাতা গভর্নমেন্ট কমার্শিয়াল কলেজ থেকে আই.কম পাস করে দারিদ্র্যের কারণে চব্বিশ পরগনা সিভিল সাপ্লাই অফিসে কেরানির চাকরি গ্রহণ করেন। ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার তাজিমউদ্দিনের কন্যা আকিলা খাতুনের সঙ্গে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন। দেশবিভাগের পর পিতার সঙ্গে ঢাকায় এসে ঢাকা হাইকোর্টে হিসাবরক্ষণ শাখার কেরানি পদে যোগ দেন। যেভাবে শহিদ হলেন: ১৯৫২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় নওয়াবপুর রোডে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে এবং পূর্বদিনের পুলিশের গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে ছাত্রজনতার বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশ পুনরায় গুলিবর্ষণ করে। একটি গুলি শফিউরের পিঠে বিদ্ধ হয়। আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়। তার শরীরে অস্ত্রোপচার সফল না হওয়ায় সন্ধ্যা ৭ ঘটিকায় মৃত্যুবরণ করেন। কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে ঐ দিনই মধ্যরাতে আজিমপুর কবরস্থানে আবুল বরকতের পশ্চিম পাশে তাকে দাফন করা হয়। ১৪ মার্চ ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে দৈনিক আজাদ পত্রিকায় প্রকাশিত সরকারি তথ্য বিবরণী অনুযায়ী জানা যায়, প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট ওবায়দুল্লাহর উপস্থিতিতে আজিমপুর মসজিদের ইমাম মাওলানা আবদুল গফুর তাঁর জানাজা পড়ান। ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ সরকার শফিউর রহমানকে (মরণোত্তর) একুশে পদক প্রদান করে।
ভাষা শহিদ আব্দুল জব্বার (১৯১৯-১৯৫২)
জন্ম পরিচয়: ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে ময়মনসিংহ জেলাধীন গফরগাঁও উপজেলার পাচাইয়া গ্রামে আব্দুল জব্বার জন্মগ্রহণ করেন। পিতা আবদুল কাদের একজন কৃষক ছিলেন। স্থানীয় ধোপাঘাট কৃষিবাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কিছুকাল অধ্যয়নের পর দারিদ্র্যের কারণে লেখাপড়া ত্যাগ করে পিতাকে কৃষিকাজে সাহায্য করেন। ১৫ বছর বয়সে সকলের অজান্তে গৃহত্যাগ করে নারায়ণগঞ্জের জাহাজ ঘাটে এক ইংরেজ সাহেবের সহযোগিতায় একটি চাকরি নিয়ে বার্মায় চলে যান। সেখানে ১২ বছর অবস্থান করে দেশে ফেরেন।
যেভাবে শহিদ হলেন ১৯৫২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় এসে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ছাত্রাবাসে গফরগাঁও নিবাসী হুরমত আলীর রুমে (২০/৮) ওঠেন। ২১ ফেব্রুয়ারি আন্দোলনরত ছাত্রদের সাথে তিনি যোগ দেন। এ সময় পুলিশ গুলিবর্ষণ করলে আব্দুল জব্বার আহত হন। ছাত্ররা তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মহান ভাষা আন্দোলনে অনবদ্য ভূমিকার জন্য আব্দুল জব্বারকে বাংলাদেশ সরকার ২০০০ খ্রিষ্টাব্দে একুশে পদক (মরণোত্তর) প্রদান করেন। ভাষা আন্দোলনের অন্যতম শহিদ হলেন আবদুল জব্বার। তার আত্মাহুতিতে বাঙালিদের জাতীয় চেতনা ও দেশাত্মবোধ জাগ্রত হয়। এ চেতনার বলেই ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বাঙালিরা সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা-করে।
ভাষা শহিদ আব্দুস সালাম (১৯২৫-১৯৫২)
জন্ম পরিচয়: ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে ফেনী জেলার দাগনভূঁইয়া উপজেলার লক্ষ্মণপুর গ্রামে আব্দুস সালাম জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মোহাম্মাদ ফাজিল মিয়া। আব্দুস সালাম কর্মজীবনে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের সচিবালয়ের 'পিয়ন' হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ঢাকার নীলক্ষেত ব্যারাকের ৩৬ বি নং কোয়ার্টারে ছিল তার বাস। যেভাবে শহিদ হলেন বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে বিক্ষোভে অংশ নেন আব্দুস সালাম। ছত্রভঙ্গ করার জন্য পুলিশ এলোপাতাড়িভাবে গুলি চালালে আব্দুস সালাম গুলিবিদ্ধ হন। আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়। দেড় মাস জীবনের সাথে সংগ্রাম করে ৭ এপ্রিল, ১৯৫২ তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মহান ভাষা আন্দোলনে অনবদ্য ভূমিকার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ২০০০ খ্রিষ্টাব্দে একুশে পদক (মরণোত্তর) প্রদান করেন। ফেনী স্টেডিয়ামের নাম পরিবর্তন করে ২০০০ খ্রিষ্টাব্দে ভাষা শহিদ সালাম স্টেডিয়াম রাখা হয়। দাগনভূঁইয়া উপজেলা মিলনায়তনের নাম পরিবর্তন করে ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে 'ভাষা শহিদ সালাম মিলনায়তন' রাখা হয়। তার নিজ গ্রাম লক্ষ্মণপুরের নাম পরিবর্তন করে 'সালাম নগর' রাখা হয়। মহান ভাষা আন্দোলনের অন্যতম শহিদ আবদুস সালাম। তাঁর শহিদ স্মৃতি উত্তরকালে বাঙালির জাতীয় চেতনা ও দেশপ্রেম জাগ্রতকরণে দিশারি হিসেবে ভূমিকা পালন করে। এই চেতনার বলেই ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বাঙালিরা সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করে।
ভাষা শহিদ অহিউল্লাহ (১৯৪৪-১৯৫২)
জন্ম পরিচয়: শিশু ভাষা শহিদ অহিউল্লাহ ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা রাজমিস্ত্রি হাবিবুর রহমান। ১৯৫২ সালে অহিউল্লাহ তৃতীয় শ্রেণিতে পড়তেন। তখন তার বয়স মাত্র ৮ বছর। এই বয়সেই তিনি শহিদ হলেন। যেভাবে শহিদ হলেন ১৯৫২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি নবাবপুর রোডে অনেক সৈন্য মোতায়েন ছিল। মূলত ২১ ফেব্রুয়ারি ঘটনার পর সরকার এ ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছিল। অহিউল্লাহ মনের আনন্দে নবাবপুর রোডের পার্শ্বে খোশমহল রেস্টুরেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে কাগজ চিবুচ্ছিল। আসলে গুলির শব্দ শুনে কৌতূহলবশত দেখতে এসেছিল। এ সময় একটি গুলি এসে বিদ্ধ হলে তার মাথার খুলি উড়ে যায়। পুলিশ অহিউল্লাহর লাশ গুম করে ফেলে। ২৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২ দৈনিক আজাদ পত্রিকায় তার শাহাদতের খবর ছাপানো হয়। লাশ গুম করার কারণে কোথায় তাকে দাফন করা হয়েছে তা আজও জানা যায়নি। ভাষা আন্দোলনের মুখপাত্র সাপ্তাহিক সৈনিকের শহিদ দিবস সংখ্যায় ১৯৫৪ এর বর্ণনা মতে, শহিদ হওয়ার পর অহিউল্লাহর পকেটে একটুকরা কাগজ পাওয়া গিয়েছিলো। এতে খুব সুন্দর শৈল্পিক গুণসহ জীব-জন্তুর ছবি আঁকা ছিল। এ আঁকা থেকে প্রমাণ মেলে ভাষা শহিদ এ ছোট শিশুটি একাজে পারদর্শী ছিলেন। কিন্তু একটি বুলেট তার সমস্ত সম্ভাবনা মুহূর্তের মধ্যে কেড়ে নিয়ে গেল। ভাষা আন্দোলনে শহিদদের অবদান বাঙালি জাতির জীবনে ভাষা শহিদদের অবদান অবিস্মরণীয়। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে ভাষা শহিদদের আত্মত্মদানের ফলে ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে পাকিস্তান সরকার বাধ্য হয়। ভাষা আন্দোলনের শহিদের স্মৃতি উত্তরকালে বাঙালির জাতীয় চেতনা ও দেশাত্মবোধ জাগ্রতকরণে দিশারি হিসেবে ভূমিকা পালন করে। ১৯৫২ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত আন্দোলন সংগ্রাম প্রতিটি স্তরে প্রেরণা যুগিয়েছিল ভাষা সৈনিকদের আত্মত্যাগ। ভাষা সৈনিকদের চেতনার বলেই ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বাঙালিরা সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করে। সুতরাং বাঙালি জাতি হিসেবে নিজেদেরকে বিশ্বের বুকে পরিচয় দিতে এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভাষা শহিদদের অবদান বাংলার ইতিহাসে চির অম্লান হয়ে থাকবে।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ

