• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
  • পাকিস্তানি আমলে বাংলা : ভাষা আন্দোলন ও এর গতিপ্রকৃতি
পাকিস্তানি আমলে বাংলা : ভাষা আন্দোলন ও এর গতিপ্রকৃতি

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

পাকিস্তানি আমলে বাংলা : ভাষা আন্দোলন ও এর গতিপ্রকৃতি

পূর্ব বাংলার শাসনতান্ত্রিক অবস্থা Constitutional Situation of East Bengal

স্বাধীনতা লাভের পর পাকিস্তান সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলেও বাস্তবে তা কার্যকরী হয়নি। কেননা প্রধানমন্ত্রীর পরিবর্তে গভর্নর জেনারেলের হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত ছিল। সে হিসেবে প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলীর পরিবর্তে গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর হাতেই ছিল সমস্ত ক্ষমতা। লিয়াকত আলি ছিলেন নিয়মতান্ত্রিক প্রধান। স্বাধীনতা লাভের পর পাকিস্তানি আমলাদের ক্ষমতা ও দাপট অনেক বেড়ে যায়। সে কারণে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ রাজনৈতিক নেতাদের অপেক্ষা আমলাদের ওপর অধিক নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে মোহাম্মদ আলী জিন্নার মৃত্যু হলে গভর্নর জেনারেল হন খাজা নাজিম উদ্দিন। এর পর লিয়াকত আলী খান আততায়ীর হাতে নিহত হলে আমলা গোলাম মোহাম্মদ পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল নিযুক্ত হন (অক্টোবর ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দ) তার প্রভাবে আমলা ইস্কান্দার মীর্জা ও সেনাবাহিনী অত্যধিক ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠে। ফলে পাকিস্তানের রাজনীতিতে গণতান্ত্রিক ভাবধারা ধীরে ধীরে লোপ পেতে থাকে। রাজনৈতিক নেতারা কোণঠাসা হতে থাকে। তারা আমলা ও সেনাবাহিনীর অনুগ্রহের পাত্রে পরিণত হয়। পাকিস্তানের প্রথম সেক্রেটারি জেনারেল চৌধুরী মোহাম্মদ আলী এবং পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম চীফ সেক্রেটারি আজিজ আহম্মেদ রাজনৈতিক নেতা ও মন্ত্রীদের পাত্তাই দিতেন না। তাদের গণতন্ত্রের প্রতি বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধা ছিল না। এভাবেই পাকিস্তানি রাজনীতি থেকে গণতন্ত্রের বিদায় ঘটে এবং আমলা ও সেনা নির্ভর স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। যার ফলাফল ছিল অত্যন্ত বেদনাবিধূর, পরবর্তী ইতিহাস তাই প্রমাণ করে।

পাকিস্তান সৃষ্টির পর বাঙালিরা পাকিস্তানকে শক্তিশালী ও সমৃদ্ধশালী করার জন্য আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসেঃ কিন্তু বাঙালিদের এ উদার মনোভাবকে পাকিস্তানি শাসকচক্র কোনো দিনই শ্রদ্ধার চোখে দেখেনি বরং তারা সব সময় বাঙালিকে তাদের অধীনস্থ প্রজা হিসেবে রাখতে চেয়েছে, দেখতে চেয়েছে। এ দৃষ্টিকোণ থেকেই পাকিস্তানি শাসকচক্র পূর্ব বাংলার প্রতি চরম অবহেলা ও বৈষম্যমূলক নীতি গ্রহণ করে।

১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের ৪২,০০০ কর্মকর্তার মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যা ছিল ২,৯০০ জন। করাচিতে রাজধানী হওয়ায় ভৌগোলিক দূরত্বের কারণে বাঙালিদের পক্ষে সেখানে গিয়ে ইন্টারভিউ দিয়ে চাকরি লাভ করা সম্ভব ছিল না। উপরন্তু ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি না দেওয়ায় বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় বাঙালি ছাত্র/ছাত্রীদের সাফল্য লাভ সহজ ছিল না। ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে পশ্চিম পাকিস্তানে গেজেটেড কর্মকর্তার সংখ্যা ছিল ৩,৭০৮ জন, পূর্ব পাকিস্তানে এর সংখ্যা ছিল ১,৩৩৮ জন এবং পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে নন-গেজেটেড কর্মকর্তার সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ২৬,৩১০ ও ৮২,৯৪৪ জন।

নিম্নে তৎকালীন পাকিস্তানের প্রশাসনিক ক্ষেত্রের একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরা হলো-

পূর্ব বাংলার শাসনতান্ত্রিক অবস্থা

১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দের এ পরিসংখ্যান থেকে বাঙালিদের প্রতি চরম বৈষম্যমূলক আচরণ লক্ষ করা যায়। স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত, হাসপাতাল, ডাকঘর, টেলিফোন, টেলিগ্রাফ, বিদ্যুৎ প্রভৃতি ক্ষেত্রেও সীমাহীন বৈষম্য বিরাজমান ছিল। এছাড়া পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার ৫৬% বাস ছিল পূর্ব বাংলায়। আর বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি ছিল হাজার বছরের ঐতিহ্য। অপরদিকে বিভিন্ন ভাষা, জাতি ও সংস্কৃতি মিলিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের ৪৪% জনসংখ্যা ছিল। এই ৪৪% এর মধ্যে উর্দুভাষী ছিল মাত্র ৪%। বাস্তবে সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলা ভাষা ও সুসমৃদ্ধ বাঙালি সংস্কৃতিকে মুছে ফেলার চক্রান্তে পাকিস্তানি শাসকচক্র লিপ্ত হয়।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ