- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
- শিল্প বিপ্লব
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
শিল্প বিপ্লব
শিল্পবিপ্লবের অর্থ ও প্রকৃতি
সাধারণ অর্থে 'বিপ্লব' বলতে আমরা কোনো দেশের সরকারকে উৎখাত করার চেষ্টাকেই বুঝে থাকি। এরূপ বিপ্লবকে রাজনৈতিক বিপ্লব বলা হয়। প্রকৃতপক্ষে বিপ্লব কেবল রাজনৈতিকই হয় না বরং অনেক রকমের হতে পারে। বিপ্লব (Revolution) শব্দটি দ্বারা কোনো মৌলিক পরিবর্তনকে বোঝায়। কৃষির সংগঠন ও কলাকৌশলের মধ্যে মৌলিক পরিবর্তন সাধিত হলে তাকে কৃষিবিপ্লব বলা হয়। শিল্পের সংগঠন কাঠামো ও উৎপাদনপ্রক্রিয়ার মধ্যে মৌলিক পরিবর্তন সাধিত হলে একে শিল্পবিপ্লব বলা হয়। অষ্টাদশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে ও ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে গ্রেট ব্রিটেনের শিল্পে যে বিরাট পরিবর্তন সূচিত হয়েছিল তাকে * শিল্পবিপ্লব বলা হয়। উৎপাদনব্যবস্থার ব্যাপক রূপান্তর প্রক্রিয়াই "শিল্পবিপ্লব"। মূলত ব্রিটেনের শিল্প ও কৃষিজীবনে যে প্রক্রিয়া বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনে তাকে শিল্পবিপ্লব নামে অভিহিত করা হয়। এক অর্থে সে প্রক্রিয়া এখনো প্রবহমান, তবে যে বিশেষ অর্থে শিল্পবিপ্লব প্রত্যয়টি ব্যবহৃত হয় তার আশু ঘটনা ও প্রত্যক্ষ . ফলাফল ১৭৩০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে পরবর্তী এক শতাব্দীর অন্তর্ভুক্ত।
ঐতিহাসিক, অর্থনীতিবিদ ও সমাজবিজ্ঞানীরা বিষয়টিকে তাঁদের নিজ নিজ দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখে সে রকম সংজ্ঞাই প্রদান করেছেন। যেমন- নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন উৎপাদনের যে ব্যবস্থায় ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা পুরোপুরি গড়ে উঠেছিল তাকেই শিল্পবিপ্লব বলেছেন। অর্থনীতিবিদরা অর্থনীতিসংশ্লিষ্ট পরিবর্তনেই বেশি গুরুত্বারোপ করেছেন। আবার ঐতিহাসিক ও সমাজবিজ্ঞানীরা শুধু অর্থনীতিসংশ্লিষ্ট পরিবর্তন নয় বরং আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের উপর বেশি গুরুত্বারোপ করেছেন। একটি ব্যাপারে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি অভিন্ন, সবাই বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে যে পরিবর্তনের সূচনা ইংল্যান্ডে হয়েছিল এবং পরবর্তীতে ইউরোপের অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল তাতে ঐকমত্য পোষণ করেন। কায়িক শ্রমের পরিবর্তে যন্ত্রের ব্যবহার অর্থাৎ 'হস্তচালিত যন্ত্রের পরিবর্তে পুরোপুরিভাবে যন্ত্রের সাহায্যে উৎপাদনব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনই শিল্পবিপ্লব', এ ব্যাপারে কেউ দ্বিমত পোষণ করেন না।
এ পরিবর্তন যাদের দ্বারা সূচিত হলো তারা তাদের সৃজনীশক্তি ও মেধার সঠিক ব্যবহার না করলে বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবনগুলোর আবিষ্কার ত্বরান্বিত হতো কি না সন্দেহ। পঞ্চদশ শতকের ইউরোপীয় রেনেসাঁর প্রভাবে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিতে যে বিজ্ঞানমনস্কতার জন্ম হয়, তারই প্রয়োগ হয় বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারে। সে আবিষ্কারগুলোই শিল্পবিপ্লবকে ত্বরান্বিত করে। কাজেই মানুষের স্থবির মেধা ও মননের পরিবর্তে প্রগতিশীল মেধা ও মননের বহিঃপ্রকাশ সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতকে শিল্পবিপ্লবের মাধ্যমে পরিস্ফুটিত হয়।
সুতরাং শিল্পবিপ্লব বলতে সাধারণত উৎপাদনক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে আমূল, আকস্মিক ও দ্রুত পরিবর্তনসাধনকে বোঝায়। বলা যায়, শিল্পায়নে পদার্পণই শিল্পবিপ্লবের মূলভিত্তি।
শিল্পবিপ্লব-পূর্ববর্তী ইংল্যান্ডের অবস্থা ব্যাখ্যার পূর্বে ইংল্যান্ডে শিল্পবিপ্লব সূচনাকালকে ধর্তব্যে নিতে হবে। ইংল্যান্ডের কুটির শিল্প ধ্বংস হয়ে যখন কারখানাভিত্তিক শিল্প গড়ে ওঠে, তাকে শিল্পবিপ্লবের সূচনাকাল হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। অধিকাংশ ঐতিহাসিক সূচনাকাল হিসেবে ১৭৩০ বা ১৭৪০ খ্রিষ্টাব্দের কথা উল্লেখ করেছেন। কাজেই ষোড়শ, সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতকের প্রথমার্ধই হবে ইংল্যান্ডের শিল্পবিপ্লবের পূর্ববর্তী অবস্থার আলোচ্য বিষয়।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ

