- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
- শিল্প বিপ্লব
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
শিল্প বিপ্লব
শিল্পবিপ্লবের অনুকূল পরিস্থিতিসমূহ
যেসব কারণ ও শক্তি ব্রিটেনের শিল্পবিপ্লবকে সহায়তা ও অগ্রমুখী করেছিল তা নিচে বর্ণনা করা হলো:
১। প্রাকৃতিক পরিবেশ ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা: শিল্পোন্নয়নের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ব্রিটেনের অনুকূলে ছিল। শক্তিশালী ও ফলপ্রসূ নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন সরকারের পক্ষে করা সম্ভব ছিল। দেশে জীবন ও সম্পত্তির পূর্ণ আইনগত নিরাপত্তা ছিল। আর উপনিবেশগুলো ব্রিটেনের জন্য প্রচুর কাঁচামাল ও শিল্পের প্রাথমিক দ্রব্য জোগানে ধনাত্মক ভূমিকা পালন করতে সমর্থ হয়েছিল।
ব্রিটেনের ভৌগোলিক অবস্থান শিল্পের জন্য খুবই সহায়ক ছিল। এর উপকূলবর্তী পোতাশ্রয় তৈরির চমৎকার স্থান এবং নদীগুলো অভ্যন্তরীণ পরিবহনে যথেষ্ট সহায়ক ছিল। আটলান্টিক মহাসাগরের উত্তরাংশে ইউরোপের উপকূলে ব্রিটেন অবস্থিত বলে এটি উত্তর ইউরোপের সাথে সহজেই যোগাযোগ স্থাপন করতে পারত এবং যেকোনো বাজারে পণ্য বিক্রি করার ক্ষেত্রে ব্রিটেনের ছিল অপ্রতিদ্বন্দ্বী অনুকূল পরিবেশ। কঠোর পরিশ্রমের ক্ষেত্রে নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু অনুকূল ছিল। বৈদেশিক আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষার জন্য শক্তিশালী নৌবহর ও বৈদেশিক বাণিজ্যের উপযোগী সুসংগঠিত উন্নত বাণিজ্য পরিবেশ ব্রিটেনের ছিল।
ব্রিটেনের জলবায়ু ছিল নাতিশীতোষ্ণ। ফলে ইংরেজরা কঠোর পরিশ্রম করতে পারত। শ্রমিকরা পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সম্ভাব্য আক্রমণের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য নৌবহর ও যুদ্ধজাহাজে সাহসিকতার সাথে কাজ করতে পারত। তাছাড়া অনুকূল আবহাওয়া ও জলবায়ুর জন্য শ্রমিকরা শিল্পে প্রচুর সময় কাজ করতে পারত।
২। সামাজিক পরিবেশ। ব্রিটেনের সামাজিক জীবনযাত্রা ছিল সকল প্রকার কুসংস্কারমুক্ত। ধর্মীয় স্বাধীনতা থাকায় সাধারণ মানুষ নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী পেশা গ্রহণ করতে পারত। এতে উৎপাদনের উপকরণসমূহের সুষ্ঠু বণ্টনের পথ সুগম হয়। অন্য দেশের মতো ব্রিটেনে শ্রেণিবৈষম্য প্রকট ছিল না। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির হৃদ্যতা বিরাজমান থাকায় শিল্পোন্নয়নে কোনো সামাজিক বাধার সৃষ্টি হতো না। ষোড়শ শতাব্দীর বেষ্টনী আন্দোলন জোরদার হয়ে উঠলে সপ্তদশ শতাব্দীর শেষভাগে লোকসংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথমভাগে কৃষিখাতে বেকার লোকের সংখ্যা বাড়ায় শ্রমিকরা শহরের দিকে কাজের জন্য ধাবিত হতে থাকে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারকে বিকল্প হিসেবে শিল্প উন্নয়নের দিকে হাত দিতে হয়। এই সমস্যাই-শিল্পোন্নয়নের ইতিবাচক হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে।
৩। অনুকূল অর্থনৈতিক, পরিবেশ উপনিবেশগুলো থেকে পর্যাপ্ত মূলধন উপার্জন করার ফলে ব্রিটেনে মূলধনী ব্যাংক ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। এর পর থেকে ব্রিটেনের ব্যাংক ব্যবস্থা দ্রুতগতিতে শিল্পোন্নয়নের ক্ষেত্রে সহায়তা করে। উপনিবেশগুলো কাঁচামাল জোগান দিত এবং দ্রব্য বিক্রয়ের জন্য বাজার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত।
ব্রিটেন উপনিবেশগুলো থেকে বাণিজ্য দ্বারা প্রচুর মুনাফা অর্জন করত। এই মুনাফা সঞ্চিত করার জন্য উন্নত ব্যাংক ব্যবস্থা ছিল। ব্যাংকের প্রচুর মূলধন অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য শিল্পে বিনিয়োগের প্রধান। সহায়ক হিসেবে কাজ করত।
ব্রিটিশ সরকার প্রথমে শিল্প সংরক্ষণনীতি গ্রহণ করেছিল। ফলে তার পক্ষে দেশের সকল প্রকার দ্রব্যের চাহিদা মিটিয়ে উপনিবেশগুলোতে বৃহৎ ও বিস্তৃত বাজার ব্যবস্থার সৃষ্টি করা সম্ভব হয়; যা পরবর্তীকালে আন্তর্জাতিক বাজারে পরিণত হয়।
উন্নত ব্যাংক ব্যবস্থা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ফলে বৈদেশিক বাণিজ্যের উন্নয়ন ও অগ্রগতির সাথে উপার্জিত বৈদেশিক মুনাফা সঞ্চিত হতে থাকে। উপার্জিত মুনাফা একত্রিত হওয়ায় শিল্পোন্নয়নের জন্য পর্যাপ্ত মূলধন পাওয়া সহজতর হয়।
শিল্পবিপ্লব সৃষ্টিতে কৃষিবিপ্লবের অবদান সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। কৃষি উন্নয়ন ব্যতীত শিল্পোন্নয়ন অসম্ভব। কারণ শিল্প সম্প্রসারিত হওয়ায় ক্রমবর্ধমান শহর ও শিল্প এলাকায় খাদ্যের চাহিদা এবং কারখানায় কৃষি কাঁচামালের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। কৃষির উন্নয়ন এ চাহিদা পূরণ করে থাকে। ব্রিটেনে কৃষিবিপ্লবের সাফল্যের হাত ধরেই শিল্পবিপ্লব সংঘটিত হয়।
৪। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি ও উন্নত পরিবহনব্যবস্থা: তখনকার সময়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যার অগ্রগতিতে ব্রিটেন নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করে। আধুনিক যন্ত্রপাতি আবিষ্কারের ফলে ব্রিটেনের উৎপাদনক্ষেত্রে অভূতপূর্ব পরিবর্তন আসে। বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ও দৃষ্টিভঙ্গি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ১৬৬০ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত 'রয়াল একাডেমি' একটি অনন্য পথিকৃৎ। স্যার আইজাক নিউটন-এর অবদান থেকে নতুন নতুন আবিষ্কার সাধিত হতে থাকে। এসব আবিষ্কার ব্রিটেনে কারিগরি ও প্রযুক্তিবিদ্যার জন্ম দেয়। প্রযুক্তিবিদ্যা। শিল্পবিপ্লবের পথকে কণ্টকমুক্ত করে আরও এগিয়ে দেয়।
ব্রিটেনের সমুদ্র উপকূল বন্দর তৈরির জন্য উপযোগী ছিল। ফলে অতি সহজে বাণিজ্যবহরে বিপুল পরিমাণ শিল্পদ্রব্য ওঠানামার অনুকূল পরিবেশ ছিল। দেশের অভ্যন্তরেও জিনিসপত্র ওঠা ও নামার জন্য নদীর উপকূল পর্যন্ত পরিবহনের সুবিধা ছিল। ব্রিটেনে খাল খনন, রেলপথ ও সড়ক নির্মাণ এবং বাষ্পচালিত জাহাজের উন্নয়নের ফলে এক যুগান্তকারী পরিবর্তনের সূচনা হয়, যা শিল্পবিপ্লবের পথ সুগম করে।
ব্রিটেনের সমাজব্যবস্থা ছিল কুসংস্কারমুক্ত। ফলে কোনো উদ্যোক্তা শিল্প উন্নয়নের চিন্তা করলে ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে একে অন্যকে বিভিন্ন দিক দিয়ে সহায়তা করত। তাদের মনোভাব ছিল পারস্পরিক বন্ধুত্বপূর্ণ। এ সহায়তামূলক মনোভাবই ব্রিটেনে নতুন নতুন শিল্প স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ

