- হোম
- স্কুল ১-১২
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
ইসলামি শিক্ষা ও সংস্কৃতি || Islamic Education and Culture
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
ইসলামি শিক্ষা ও সংস্কৃতি || Islamic Education and Culture
ইসলামে জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা ও শিক্ষার গুরুত্ব- Importance of Practicing Science and Knowledge in Islam
জ্ঞান-বিজ্ঞান পরিচিতি
বাংলা ‘জ্ঞান' শব্দের আরবি হলো : (ইলম)। এর অর্থ জানা। জ্ঞান মূর্খতা ও অজ্ঞতার বিপরীতার্থক। সাধারণভাবে কোনো তথ্যপ্রাপ্তি বা যোগ্যতা অর্জন করাকে জ্ঞান বলা হয়। এ যোগ্যতা বা জ্ঞান অর্জন হতে পারে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনা কিংবা নিয়মতান্ত্রিক যেকোনো অধ্যয়নের মাধ্যমে।
পঞ্চইন্দ্রিয় ব্যবহার করে মানুষ যে তথ্য লাভ করে তাকে জ্ঞান বলা হয়। ইসলামে জ্ঞানের একটি বিশেষ পরিচিতি রয়েছে। ইসলামি চিন্তাবিদগণ বলেছেন— “জ্ঞান হলো আল্লাহর জ্যোতিসমূহের মধ্যস্থিত একটি জ্যোতি; যা আল্লাহ তায়ালা মুমিনদের হৃদয়ে ঢেলে দিয়েছেন এবং যা বিচ্ছুরিত হয় নবুয়তের প্রদীপ থেকে।”
তাই ইসলামে প্রকৃত জ্ঞান হলো আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে নবি-রাসুলদের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য । বিজ্ঞান জ্ঞানেরই একটি উচ্চতম শাখা। এর অর্থ বিশেষ জ্ঞান। কোনো নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে সুশৃঙ্খল ও সুসংবদ্ধ আলোচনা, বিস্তারিত অধ্যয়ন ও গবেষণা হলো বিজ্ঞান । জ্ঞানকে মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত করার বিশেষ পদ্ধতি হলো বিজ্ঞান, আর কোনো বিষয় সম্পর্কে জ্ঞানার্জনের সর্বোত্তম প্রক্রিয়া হলো শিক্ষা। আল্লাহ তায়ালা কুরআন মাজিদে 'বিজ্ঞান' বোঝাতে 'হিকমাহ' শব্দটি ব্যবহার করেছেন। যেমন- পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
يُؤْتِي الْحِكْمَةَ مَن يَشَاءُ وَمَن يُؤْتَ الْحِكْمَةَ فَقَدْ أُوتِيَ خَيْرًا كَثِيرًا -
অর্থ: তিনি যাকে ইচ্ছা হিকমত বা বিশেষ জ্ঞানদান করেন। আর যাকে বিশেষ জ্ঞান দেওয়া হয়, সে বিপুল কল্যাণ লাভ করে (সুরা আল-বাকারা: ২৬৯)।
কুরআন মাজিদ একটি বিজ্ঞান গ্রন্থ। মানবসৃষ্টি, বিকাশ ও পরিণতি এবং প্রাসঙ্গিক বিধি-বিধান ও প্রয়োজনীয় তথ্য সম্পর্কে এখানে বিস্তারিত আলোচনা সন্নিবেশিত হয়েছে। এ জন্য কুরআনের অপর নাম 'আল-হিকমাহ।'
ইসলামে জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা ও শিক্ষার গুরুত্ব
জ্ঞানার্জনের ওপর ইসলামে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রকৃত মানুষ হওয়ার জন্য জ্ঞানার্জনের বিকল্প নেই। অন্যান্য জীবজন্তু ও সৃষ্টির ওপর মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের মূল কারণ হলো মানুষ জ্ঞানচর্চা করে, অন্যরা করে না। সৃষ্টির শুরুতে ফেরেশতাদের ওপর মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার মূলেও ছিল জ্ঞান। সুষ্ঠু-সুন্দর, স্বাভাবিক ও শান্তিপূর্ণ জীবনযাপনের জন্য জ্ঞান অর্জন করা অত্যাবশ্যক। মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের বহু আয়াতে এবং রাসুলুল্লাহ (স)-এর বিভিন্ন হাদিসে জ্ঞানার্জনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জ্ঞান চর্চার বিষয়ে আল-কুরআন
জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা ও শিক্ষা লাভের জন্য প্রথম ও প্রধান প্রয়োজনীয় বিষয় হলো অধ্যয়ন বা পাঠ করা। এ কারণে রাসুলুল্লাহ (স)-এর প্রতি আল্লাহর প্রথম নির্দেশ ছিল পড় বা পাঠ কর। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
اقْرَأُ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ .
অর্থ: পড়ো, তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন (সুরা আলাক : ১)।
এ আয়াতের মাধ্যমে জ্ঞানার্জনের জন্য পড়া সব মানুষের ওপর ফরজ করা হয়েছে। আল্লাহর দেওয়া বিধান জানা এবং সে অনুযায়ী জীবনযাপনের জন্য অবশ্যই জ্ঞানলাভ করতে হবে।
প্রয়োজনে জ্ঞানীদের কাছ থেকে শিক্ষাগ্রহণ করতে হবে। আল্লাহ বলেন,
অর্থ: তোমরা যদি না জানো, তাহলে জ্ঞানীদের জিজ্ঞাসা কর (সুরা নাহল : ৪৩)।
জ্ঞান মানুষকে মর্যাদাসম্পন্ন করে তোলে। আল্লাহ বলেন
অর্থ: তোমাদের মধ্যে যারা ইমান এনেছে আল্লাহ তায়ালা তাদের মর্যাদাসম্পন্ন করেছেন এবং যারা জ্ঞান অর্জন করেছে তাদেরকে দিয়েছেন উচ্চতম মর্যাদা (সুরা মুজাদালাহ: ১১)।
জ্ঞানীদের তাওহিদ ও অন্যান্য বিষয়ে সাক্ষী সাব্যস্ত করা হয়েছে । আল্লাহ বলেন,
شَهِدَ اللهُ أَنَّهُ لا إلهَ إِلَّا هُوَ وَالْمَلَائِكَةُ وَأُولُو الْعِلْمِ قَائِمًا بِالْقِسْطِ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ .
অর্থ: আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন, নিশ্চয়ই তিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। ফেরেশতা এবং নিষ্ঠাবান জ্ঞানীরাও সাক্ষ্য দিচ্ছেন আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। তিনি মহাপরাক্রমশালী, বিজ্ঞানময় (সুরা আলে ইমরান: ১৮)।
জ্ঞানের কারণেই ব্যক্তি আল্লাহর প্রকৃতি ও ক্ষমতা সম্পর্কে অবহিত হয়। তার কাছে আল্লাহর দৃষ্টান্তসমূহ বোধগম্য হয়ে ওঠে। সে আল্লাহকে ভয় করার তাগিদ অনুভব করে। আল্লাহ বলেন,
অর্থ: আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে কেবল জ্ঞানীরাই তাঁকে ভয় করে (সুরা ফাতির : ২৮)।
وَتِلْكَ الْأَمْثَالُ نَضْرِبُهَا لِلنَّاسِ وَمَا يَعْقِلُهَا إِلَّا الْعَالِمُونَ .
অর্থ: আর এ দৃষ্টান্তসমূহ আমি মানুষের জন্য বর্ণনা করি। কিন্তু জ্ঞানীরা ব্যতীত কেউই এগুলো বুঝতে পারে না (সুরা আনকাবুত : ৪৩)।
কুরআন মাজিদে আল্লাহ তায়ালা প্রাথমিক ও প্রয়োজনীয় জ্ঞানার্জন যেমন ফরজ করেছেন, তেমনি উৎসাহ দিয়েছেন উচ্চতর জ্ঞানার্জন ও গবেষণায় । আল্লাহ তায়ালা বলেন, I
অর্থ: অতএব, হে চক্ষুষ্মান না ব্যক্তিগণ! তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর (সুরা আল-হাশ্র: ২)।
وَيَتَفَكَّرُونَ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هُذَا بَاطِلًا .
অর্থ: আর তারা আকাশসমূহ ও পৃথিবীর সৃষ্টিশৈলী সম্পর্কে চিন্তা-গবেষণা করে এবং বলে, হে আমাদের প্রভু! এসব তুমি অনর্থক সৃষ্টি করনি (সুরা আলে ইমরান: ১৯১)।
আল্লাহ তায়ালা জ্ঞানীদের মর্যাদা, সম্মান, সাফল্য ও কল্যাণ দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। তাই মুমিনদের তিনি প্রার্থনা শিখিয়েছেন—
অর্থ: হে প্রভু! আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করে দাও (সুরা ত্বোয়া-হা: ১১৪)।
জ্ঞান চর্চার বিষয়ে আল-হাদিস
আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের কাছে জ্ঞান-বিতরণের লক্ষ্যে মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স) পৃথিবীতে আগমন করেন। রাসুলুল্লাহ (স) বিশ্বমানবের শিক্ষক। আল্লাহ বলেন,
“আমি তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের জন্য রাসুল পাঠিয়েছি। তিনি তোমাদের কাছে আমার বাণীসমূহ পাঠ করবেন, তোমাদের পবিত্র করবেন, শিক্ষা দেবেন কিতাব ও হিকমাহ এবং শিক্ষা দেবেন এমন বিষয় যা তোমরা জানতে না” (সুরা আল-বাকারা: ১৫১)।
রাসুল (স)-এর প্রধান রিসালাতি দায়িত্ব ছিল জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চা ও শিক্ষাবিস্তার । তিনি নিজেই বলেছেন- এ অর্থ: আমি শিক্ষক হিসেবে প্রেরিত হয়েছি (ইবনে মাযাহ)। রাসুলুল্লাহ (স) তাঁর তেইশ বছরের নবুয়তি জীবনে জ্ঞান- বিজ্ঞান চর্চা ও শিক্ষাবিস্তারে এমন সব কথা বলেছেন, যা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, ইসলামে জ্ঞান অর্জনের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। যেমন তিনি বলেন,
অর্থ: জ্ঞান অন্বেষণ বা অর্জন করা প্রত্যেক মুসলিমের ওপর ফরজ (ইবনে মাযাহ)।
خَصْلَتَانِ لَا تَجْتَمِعَانِ فِى مُنَافِقٍ حُسْنُ سَبْتٍ وَلَا فِقَهَ فِي الدِّينِ .
অর্থ: দুটি স্বভাব মুনাফিকদের মধ্যে একত্রিত হতে পারে না। তা হলো নৈতিকতা ও দীনের সুষ্ঠু জ্ঞান (জামে তিরমিযি)। জ্ঞান অন্বেষণকে রাসুলুল্লাহ (স) আল্লাহর পথের কাজ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন,
مَنْ خَرَجَ فِي طَلَبِ الْعِلْمِ فَهُوَ فِي سَبِيْلِ اللَّهِ حَتَّى يَرْجِعَ .
অর্থ: যে ব্যক্তি জ্ঞান অন্বেষণে বের হয়েছে, সে আল্লাহর পথে রয়েছে, যতক্ষণ না সে প্রত্যাবর্তন করে (জামে তিরমিযি)। জ্ঞান অর্জনে গুনাহ মাফ হয় । নবি করিম (স) বলেন,
অর্থ: যে ব্যক্তি জ্ঞান অন্বেষণ ও অর্জন করবে, তা হবে তার আগের গুনাহসমূহের কাফফারা (জামে তিরমিযি)। সাধারণ ইবাদত গুজার মানুষের তুলনায় জ্ঞানী ইবাদত গুজারের একটি বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে রাসুল (স)
অর্থ: আবিদের (ইবাদতকারী) ওপর আলেমের মর্যাদা তেমন, যেমন তোমাদের ওপর আমার মর্যাদা (জামে তিরমিযি)। ইসলাম শিক্ষা অর্জনকারীর জন্য আসমান-জমিনের সবকিছু এমনকি পানির মাছও কল্যাণ কামনায় ব্যস্ত থাকে। মহানবি (স) বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা, তার ফেরেশতাগণ, আকাশসমূহের অধিবাসী, পৃথিবীর অধিবাসীরা এমনকি গর্তের পিপীলিকা ও মাছ সেই ব্যক্তির জন্য দোয়া করে, যে মানুষকে ভালোকথা শিক্ষা দেয় (জামে তিরমিযি)। জ্ঞান শয়তানের প্রতারণা ও কৌশল অসার করে দেয়। রাসুল (স) বলেন,
فَقِيهُ وَاحِدٌ أَشَدُّ عَلَى الشَّيْطَانِ مِنْ أَلْفِ عَابِدٍ .
অর্থ: একজন ফকিহ বা জ্ঞানী শয়তানের বিরুদ্ধে হাজার আবিদের চেয়েও কঠোর (জামে তিরমিযি ও ইবনে মাযাহ)। জ্ঞান অর্জনের পর তা অপরকে শিক্ষা দেওয়া বা অন্যের কাছে পৌঁছে দেওয়া উচিত। রাসুল (স) বলেন,
অর্থ: আমার পক্ষ থেকে যদি একটি আয়াতও হয়, সেটি মানুষের কাছে পৌঁছে দাও ।
জ্ঞান আল্লাহর এক বিশেষদান। জ্ঞান প্রচার না করা বা জানা ইলম কাউকে না জানানো ভয়ংকর অপরাধ। রাসুলুল্লাহ (স) বলেছেন,
অর্থ: যে ব্যক্তি তার জানা ইলম সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হয়েও তা গোপন করেছে, কিয়ামতের দিন তাকে আগুনের লাগাম পরিয়ে দেওয়া হবে (সুনানে তিরমিযি ও আবু দাউদ)।
জ্ঞান অর্জন এমন এক বিষয়, যার প্রভাব মৃত্যুর পরও বহাল থাকে। মহানবি (স) বলেন, মানুষ যখন ইন্তেকাল করে তখন তার আমল বন্ধ হয়ে যায়, কিন্তু তিনটি আমল বন্ধ হয় না; এগুলো হলো— সদকায়ে জারিয়া, উপকারী ইলম এবং নেক সন্তান (সহিহ মুসলিম)।
দলীয় কাজ: শিক্ষার্থীরা দুটি দলে বিভক্ত হয়ে জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার বিষয়ে কুরআন ও হাদিসের আলোকে আলোচনা করে পয়েন্ট আকারে তা খাতায় লিখে শ্রেণিতে উপস্থাপন করবে।