- হোম
- স্কুল ১-১২
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
ইসলামি শিক্ষা ও সংস্কৃতি || Islamic Education and Culture
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
ইসলামি শিক্ষা ও সংস্কৃতি || Islamic Education and Culture
নৈতিক শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা- Importance and Necessity of Moral Education
ইসলাম একটি আদর্শ জীবনব্যবস্থা যা মানুষকে আশরাফুল মাখলুকাত ঘোষণার মাধ্যমে উচ্চ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছে। এই মর্যাদা অনায়াসে লাভ করা যায় না। এটি লাভের জন্য মানুষকে উত্তম চরিত্রের অধিকারী হতে হয়, নৈতিকতায় বলীয়ান হতে হয়। রাসুলুল্লাহ (স), সাহাবায়ে কিরাম (রা) এবং মুসলিম মনীষীদের জীবন পর্যালোচনা করলে বোঝা যায়, ইসলামি জীবনব্যবস্থায় নীতি-নৈতিকতাকে উর্ধ্বে স্থান দেওয়া হয়েছে। নৈতিক শিক্ষার প্রতি সীমাহীন গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
নৈতিক শিক্ষার পরিচয়: যে শিক্ষায় মানুষের জন্য অর্জনীয় গুণাবলি যেমন- তাকওয়া, সততা, নিষ্ঠা, সত্যবাদিতা, ওয়াদাপালন, আমানতদারি, মানবসেবা, শালীনতা, দেশপ্রেম, ভ্রাতৃত্ববোধ, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, পরিচ্ছন্নতা, কর্তব্যপরায়ণতা ইত্যাদির প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয় এবং বর্জনীয় অভ্যাস যেমন- প্রতারণা, ফাঁকিবাজি, মুনাফেকি, মিথ্যাবাদিতা, ওয়াদা ভঙ্গ, আত্মসাৎ, গিবত, হিংসা-বিদ্বেষ, লোভ, ক্রোধ, পরশ্রীকাতরতা, ফিতনা-ফাসাদ, হারাম উপার্জন, মাদকাসক্তি ইত্যাদি পরিত্যাগ করতে উৎসাহিত করা হয় তাকে নৈতিক শিক্ষা বলে ।
মুসলমানের জীবনে নৈতিক শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
ইসলামের মূলকথা: ইসলাম একটি সহজ, সরল, পরিচ্ছন্ন জীবনব্যবস্থা। ইসলামের অন্যতম মূলকথা হচ্ছে, জীবনের কোনো স্তরে কোনো ধরনের লুকোচুরি বা প্রতারণার আশ্রয় নেওয়া কোনোক্রমেই সমর্থনযোগ্য নয়। অর্থাৎ ইসলামে অনৈতিকতার স্থান নেই। ইসলামে ভিতর ও বাহির সমান। মহানবি (স) বলেছেন, وَايْمُ اللهِ لَقَدْ تَرَكْتُكُمْ عَلَى مِثْلَ الْبَيْضَاءِ لَيْلَهَا وَنَهَارُهَا سَوَاء .
অর্থ: আল্লাহর কসম! আমি তোমাদেরকে এমন এক পরিচ্ছন্ন নীতি ও আদর্শের উপর রেখে যাচ্ছি, যার রাত এবং দিন সমান (ইবন মাজাহ)। অর্থাৎ, মুমিনের জীবনে গোপনীয়তা, ছলচাতুরি, প্রতারণা ও অনৈতিকতার কোনো সুযোগ নেই। সুতরাং সত্যিকারের মুমিন হওয়ার জন্য প্রত্যেকের জন্য নৈতিকতায় বলীয়ান হওয়া এবং নৈতিক শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হওয়া
আবশ্যক ।
নবি-রাসুলগণের আদর্শ: পৃথিবীতে যত নবি-রাসুল আগমন করেছেন তাঁরা সকলে নীতির প্রশ্নে ছিলেন আপোশহীন। কুরআন মাজিদে অনেক নবির কাহিনি বর্ণিত হয়েছে যা থেকে আমরা তাঁদের আদর্শ সম্পর্কে অবগত হতে পারি। যেমন— হযরত আদম (আ), হযরত নূহ (আ), হযরত মুসা (আ), হযরত ইবরাহিম (আ), হযরত ইসমাঈল (আ), হযরত ইউসুফ (আ) সহ বহুসংখ্যক নবি-রাসুলের ঘটনা থেকে আমরা জানতে পারি, তাঁরা অন্যায়ের কাছে কখনো মাথা নত করেননি। আমাদের প্রিয়নবি (স) নৈতিকতার প্রশ্নে পর্বতপ্রমাণ দৃঢ়তা প্রদর্শন করেছেন। নবি-রাসুলগণের আদর্শ নিজের জীবনে বাস্তবায়নের জন্য নৈতিক শিক্ষা অপরিহার্য ।
সব ইবাদতের অন্যতম উদ্দেশ্য: ইসলামের ইবাদতসমূহ নিছক আনুষ্ঠানিকতা নয়। প্রতিটি ইবাদতের একটি অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য আছে। আর তা হচ্ছে নৈতিক চরিত্রের উন্নয়ন। যেমন সালাত সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, إِنَّ الصَّلوةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ .
অর্থ: নিশ্চয়ই সালাত অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে (সুরা আনকাবুত : ৪৫)।
সাওম অর্থাৎ রোজা সম্পর্কে মহানবি (স) বলেছেন, যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও অন্যায় কর্ম পরিত্যাগ করতে পারল না, আল্লাহর দৃষ্টিতে তার পানাহার পরিহার মূল্যহীন (সহিহ বুখারি)। হজের কার্যাবলির মধ্যেও অশ্লীলতা এবং অনৈতিকতা পরিহার করতে বলা হয়েছ। এভাবে প্রতিটি ইবাদতের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে নৈতিকতার উন্নয়ন ও বিকাশ। কুরআনে নির্দেশনা: কুরআন মাজিদে কেবল ইবাদত সম্পর্কিত নির্দেশনা দেওয়া হয়নি বরং এ মহান কিতাবের প্রতিটি সুরায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নৈতিক চরিত্রকে উন্নত করা এবং আত্মিক পরিশুদ্ধতা অর্জনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যেমন ইরশাদ হয়েছে, قد أَفْلَحَ مَنْ زَكْهَا وَقَدْ خَابَ مَنْ دَسَّاهَا .
অর্থ: যে ব্যক্তি নিজেকে (নিজের চরিত্র ও আত্মাকে) পবিত্র রাখল সে-ই সফলকাম, আর যে ব্যক্তি নিজেকে কলুষিত করল সে ব্যর্থ (সুরা আশ-শামস: ৯-১০)।
কুরআন মাজিদে বিভিন্ন ধরনের সৎকর্মের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং তা সম্পাদনের সুফল বর্ণনা করা হয়েছে। অনুরূপভাবে বিভিন্ন ধরনের অন্যায় কাজের প্রতি নিষেধাজ্ঞা এবং সেগুলোর পরিণতি উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং কুরআন মাজিদ নৈতিকতা বিকাশের অন্যতম অবলম্বন ।
রাসুল (স) এর আগমনের উদ্দেশ্য: আমাদের প্রিয়নবি হযরত মুহাম্মদ (স) কে পৃথিবীতে প্রেরণ করার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের নৈতিকতার উন্নয়ন ও বিকাশ। মহানবি (স) বলেছেন-
اِنَّمَا بُعِثْتُ لِأُتَيْمَ مَكَارِمَ الْأَخْلَاقِ .
অর্থ: উন্নত নৈতিক চরিত্রকে পূর্ণতা দানের জন্য আমি প্রেরিত হয়েছি (বায়হাকি)। এ হাদিস প্রমাণ করে যে, ইসলামে নৈতিক শিক্ষার প্রতি ব্যপক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
জেনে রাখো:
ইসলামি সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ ব্যাবহারিক দিক :
- প্রতিটি ভালো কাজের শুরুতে আল্লাহর নাম নেওয়া ।
- পারস্পরিক সাক্ষাতে সালাম বিনিময় করা।
- ডান হাতে খাবার ও পানীয় গ্রহণ করা।
- শিশুর জন্মের পর আজান দেওয়া, সুন্দর নাম রাখা ও আকিকা দেওয়া।
- বড়দের সম্মান ও ছোটদের স্নেহ করা।
- শালীন ও মার্জিত পোশাক পরিধান করা।
- শালীনতার সাথে নির্দিষ্ট স্থানে প্রস্রাব ও পায়খানা করা।
একক কাজ: নৈতিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে ১০ বাক্যের একটি অনুচ্ছেদ লেখো ।