- হোম
- স্কুল ১-১২
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
ইসলামি শিক্ষা ও সংস্কৃতি || Islamic Education and Culture
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
ইসলামি শিক্ষা ও সংস্কৃতি || Islamic Education and Culture
ভূগোলশাস্ত্রে মুসলিম মনীষীদের অবদান- Contributions of Muslim Scholars in Geography
অজানাকে জানা, কেবলা নির্ধারণ, ইসলাম প্রচার ও ব্যবসায়-বাণিজ্যসহ নানা কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ভ্রমণের জন্য মুসলমানদের ভূগোলবিষয়ক জ্ঞানার্জনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এ প্রয়োজন পূরণের লক্ষ্যে মুসলিম ভূগোলবিদরাই সর্বপ্রথম বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে ভূতত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করেন এবং একে জ্ঞান-বিজ্ঞানের অন্যতম শাখা হিসেবে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেন।
তাদের ভূগোলবিষয়ক জ্ঞানের উৎস ছিল পর্যবেক্ষণ, অভিজ্ঞতা ও কুরআন মাজিদ। মুসলিম মনীষীদের মধ্যে আল-মুকাদ্দাসি, আল-মাসউদি, ইয়াকুত ইবনে আবদুল্লাহ আল-হামাবি, আল-ইদ্রিস, মুসা আল-খাওয়ারিযমি, আল-বিরুনি ও ইবনে খালদুন প্রমুখ ভূগোলশাস্ত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। আল-মুকাদ্দাসি ছিলেন একজন বিখ্যাত মুসলিম পরিব্রাজক ও ভূগোলবিদ। তিনি স্পেন, ভারতবর্ষ ও সিজিস্তান ছাড়া প্রায় সমগ্র মুসলিম বিশ্ব ভ্রমণ করেছেন।
দীর্ঘ বিশ বছরের ভ্রমণ অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি 'আহসানুত-তাকাসিম ফি মারিফাতুল আকালিম' নামে ভূগোলবিষয়ক একটি বিখ্যাত গ্রন্থ রচনা করেন। আবুল হাসান আলি আল-মাসউদি একাধারে পরিব্রাজক, ইতিহাসবিদ ও ভূগোলবিদ ছিলেন। তিনি 'মুরুজ আল-যাহাব ওয়া মা'দিন আল-যাওয়াহির' নামে ঐতিহাসিক 'ভূগোল বিশ্বকোষ' রচনা করেন। এতে তিনি ভ্রমণের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। তিনি পৃথিবীর আকার, আয়তন, গতি ও প্রধান প্রধান বিভাগগুলোর বিবরণ দেন।
আল মাসউদি ভারত মহাসাগর, পারস্য সাগর ও আরব সাগরের ঝড়ের অবস্থার কথা উল্লেখ করেন এবং ভূকম্পন বিষয়ে একটি প্রবন্ধ লেখেন। তিনি পৃথিবীর মানচিত্র অঙ্কন করেন। মুসলিম ভূগোলবিদদের মধ্যে মুসা আল-খাওয়ারিযমির নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি মিসরীয় ভূগোলবিদ টলেমির ভূগোলবিষয়ক গ্রন্থ আরবিতে অনুবাদ করে এর সাথে মানচিত্র সংযোজন করেন। তিনি পৃথিবীর পরিধিও নির্ধারণ করেন।
আল-খাওয়ারিযমি পৃথিবীকে ‘সাতটি ভূখণ্ডে বিভক্ত করেন এবং অন্যান্য ভূগোলবিদদের সহযোগিতায় ‘সুরাতুল আরদ' বা পৃথিবীর একটি প্রতিরূপ তৈরি করেন। তার সপ্ত ইকলিম থেকেই পরবর্তী ভূগোলবিদরা সাতটি মহাদেশের ধারণা লাভ করেন। পারস্যের মুসলিম মনীষী ইয়াকুত ইবনে আবদুল্লাহ আল-হামারিকে মুসলিম ভুগোলশাস্ত্রের জনক বলা হয়। তাঁর রচিত 'মুজামুল বুলদান' নামক গ্রন্থটি ভূগোলশাস্ত্রের একটি প্রামাণ্যগ্রন্থ। এ গ্রন্থে তিনি আরব থেকে উত্তর আফ্রিকা পর্যন্ত এলাকার নগরসমূহের বস্তুনিষ্ঠ বিবরণ তুলে ধরেন। এতে তিনি প্রত্যেক স্থানের ঐতিহাসিক, জাতিতাত্ত্বিক ও প্রকৃতিক বিষয়ের বিবরণ দিয়েছেন।
ঐতিহাসিক ব্যক্তিদের পরিচয় ও ঘটনাসমূহের উল্লেখ করেছেন। মধ্যযুগের মুসলিম ভূগোলবিদ আল-ইদ্রিস প্রাচীন ও আধুনিক ভৌগোলিক জ্ঞানের মধ্যে সমন্বয় সাধন করেন। ভূগোলবিষয়ক তার বিখ্যাত গ্রন্থ হলো 'কিতাবুল রোজারি'। তিউনিসিয়ার মুসলিম ভূগোলবিদ ইবনে খালদুন তার ভূগোলবিষয়ক 'আল-মুকাদ্দিমা' গ্রন্থের জন্য বিশ্বব্যাপী খ্যাতিলাভ করেন। আরবের প্রধান বাণিজ্য পথ এবং চীন, জাপান ও কোরিয়ার ভৌগোলিক অবস্থান বর্ণনা করে ইবনে খুরদাদ লেখেন 'কিতাবুল মাসালিক ওয়াল মামালিক'।
ইবনে রুশতাহ রচনা করেন 'আল-আলাক আন-নাফিসা' নামক ৭ খণ্ডে বিন্যস্ত ভূগোল বিশ্বকোষ। 'আল-ইসতাখরি' তার ভূগোলবিষয়ক গ্রন্থে রঙিন মানচিত্র ব্যবহার করেন। ইবনে হাওকান লেখেন ভ্রমণ কাহিনিনির্ভর ভূগোলগ্রন্থ । আল-বিরুনী সর্বপ্রথম পৃথিবীর গোলাকার মানচিত্র তৈরি করেন। তিনি তাঁর 'কিতাবুল হিন্দ' গ্রন্থে ভূবিদ্যার ওপর আলোকপাত করেন। এতে তিনি নদীর ভূসংস্থান, ভূতত্ত্ব, জোয়ারভাটা, মহাসমুদ্র, আবহাওয়া, ভূমি পরিমাপমূলক কাজ প্রভৃতি বিষয় আলোচনা করেন ।
একক কাজ: ভূগোলশাস্ত্রে মুসলিম মনীষীদের অবদান সম্পর্কে একটি তালিকা তৈরি করো।