- হোম
- স্কুল ১-১২
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
ইসলামি শিক্ষা ও সংস্কৃতি || Islamic Education and Culture
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
ইসলামি শিক্ষা ও সংস্কৃতি || Islamic Education and Culture
গণিতশাস্ত্রে মুসলিম মনীষীদের অবদান- Contributions of Muslim Scholars in Mathematics
বিজ্ঞানের মূল (Root) হলো গণিতশাস্ত্র। এ শাস্ত্রের উৎপত্তি, বিকাশ ও উৎকর্ষসাধনে মুসলিম গণিতবিদগণ অবিস্মরণীয় অবদান রেখেছেন। তারা মৌলিক গবেষণার মাধ্যমে গ্রিক জ্যামিতির জটিল সমস্যাগুলোর সমাধান করতে সক্ষম হন। মুসলিম গণিতবিদদের প্রচেষ্টায় ইউরোপে ভারতীয় শূন্যের (০) ধারণা প্রবর্তিত হয়। দশমিক প্রথা, বীজগণিত, গোলাকার ত্রিকোণমিতির প্রবর্তন প্রভৃতি গণিতে মুসলিমদের অবদানকে অমর করে রেখেছে। যেসব মুসলিম মনীষী গণিতশাস্ত্রের উদ্ভব ও বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন তাদের মধ্যে আল-খাওয়ারিযমি, আল-বিরুনি, আল বাত্তানি, নাসির উদ্দীন তুসি, ওমর খৈয়াম, আল তৈয়ব, মুহাম্মদ বিন ঈসা প্রমুখ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
আল- খাওয়ারিযমি (৭৮০-৮৫০ খ্রি.)
মুসলিম মনীষীদের মধ্যে গণিতশাস্ত্রে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখেন মুহাম্মদ ইবন মুসা আল-খাওয়ারিযমি। তাকে গণিতশাস্ত্রের বিশেষত বীজগণিতের জনক বলা হয়। বীজগণিতের ওপর লেখা তার অবিস্মরণীয় গ্রন্থটির নাম 'ইলমুল জাবর ওয়াল মুকাবেলা' বা 'হিসাব আল জাবর ওয়াল মুকাবেলা'। ইউরোপে গণিতজ্ঞদের কাছে এ আল-জাবরই Algebra (এলজেবরা)'য় পরিণত হয়। যেকোনো বিবেচনাতেই 'হিসাব আল জাবর' বীজগণিতের প্রথম ও শ্রেষ্ঠতম গ্রন্থ। এতে Quadratic equation বা দ্বিতীয় মাত্রার সমীকরণের সমাধান, বীজগাণিতিক গুণ ও ভাগ এবং আল- খাওয়ারিযমির নিজস্ব সূত্র ও সমস্যার সমাধান বিশ্লেষিত হয়েছে। গ্রন্থটিতে তিনি বিভিন্ন ধরনের গণিতের আট শতাধিক উদাহরণ উপস্থাপন করেন। ভারতীয় গণনা পদ্ধতি অনুসরণ করে আল-খাওয়ারিযমি শুদ্ধ গণিত (Arithmetic) বিষয়ে 'কিতাবুল হিন্দ' নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন। সংখ্যার উৎপত্তির ওপর লেখা তার প্রসিদ্ধ গ্রন্থটি হচ্ছে 'আল- জাম ওয়াত তাফরিক'। আল-খাওয়ারিযমি পরিমিতি হিসেবে ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, বৃত্ত, পিরামিড প্রভৃতির আয়তন ও পরিধি নিরূপণের প্রণালি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
আল-বাত্তানি (৮৫৮-৯২৯ খ্রি.)
আব্দুল্লাহ আল-বাত্তানি খ্রিষ্টীয় নবম-দশম শতকের শ্রেষ্ঠ গণিতবিদ। গণিতশাস্ত্রের ক্রমোন্নতিতে তিনি বিশেষ অবদান রাখেন। ত্রিকোণমিতির অনুপাত প্রকাশ আল-বাত্তানির প্রধান কীর্তি। গণিতশাস্ত্রের ইতিহাসে ত্রিকোণমিতিকে আল বাত্তানিই সম্পূর্ণ স্বাধীন, স্বতন্ত্র ও পূর্ণাঙ্গভাবে প্রথম তুলে ধরেন। ত্রিকোণমিতির Sine, Cosine, Tangent, Cotangent ইত্যাদি সাংকেতিক নিয়মের তাৎপর্যপূর্ণ ব্যবহার তিনিই প্রথম করেন। এসব সংকেতের মধ্যে বিভিন্ন সম্পর্ক তিনি আবিষ্কার করেন। কোনো কোণের সাইন জানা থাকলে তার ট্যানজেন্ট বের করা এবং ট্যানজেন্ট জানা থাকলে তার সাইন বের করার নিয়ম তিনিই উদ্ভাবন করেন।
নাসির উদ্দিন তুসি (১২০১-১২৭৪ খ্রি.)
মুসলিমদের গণিত চর্চায় মুহাম্মদ নাসির উদ্দিন তুসি একটি উজ্জ্বল নাম। তিনি ত্রিকোণমিতি, জ্যামিতি, জ্যোতির্বিজ্ঞান প্রভৃতি শাস্ত্র সম্পর্কে ১৬টি গ্রন্থ রচনা করেন। ত্রিকোণমিতিকে জ্যোতির্বিজ্ঞান থেকে পৃথক করে এবং সমতল ও গোলাকার ত্রিকোণমিতি সম্পর্কে আলোচনা করে তিনি বিশেষ কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন।
আল-মাহানি (মৃত্যু: ৮৮৪ খ্রি.) ও আল-সারাকশি (মৃত্যু: ১০৯০ খ্রি.)
আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ বিন ঈসা আল-মাহানি ছিলেন পারস্যের বিখ্যাত গণিতবিদ। তিনি জ্যামিতি, ঘনসমীকরণ ও ত্রিকোণমিতি সম্পর্কে গ্রন্থ রচনা করেন এবং আল-খাওয়ারিযমির উদ্ভাবিত ও প্রতিষ্ঠিত বীজগণিতের আধুনিকায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। মুহাম্মদ বিন তৈয়ব আল-সারাকশি ত্রিকোণমিতির ওপর প্রথম পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ রচনা করে বিশেষ খ্যাতিলাভ করেন।
আল-বিরুনি (৯৭৩-১০৪৮ খ্রি.)
আল-খাওয়ারিযমির পরে দ্বিতীয় সর্বশ্রেষ্ঠ মুসলিম গণিতবিদ হলেন আল-বিরুনি। গণিতে তার শ্রেষ্ঠতম অবদান 'আল- কানুন আল-মাসউদী'। এটিকে গণিতশাস্ত্রের বিশ্বকোষ বলা হয়। আল বিরুনি তার এ গ্রন্থটিতে জ্যামিতি, ত্রিকোণমিতি, ক্যালকুলাস প্রভৃতি বিষয়ের সূক্ষ্ম, জটিল ও গাণিতিক সমস্যার বিজ্ঞানসম্মত আলোচনা করেন। এ গ্রন্থে তিনি পরিমাপ পদ্ধতির ওপর কাজ করেন। আর পৃথিবীর পরিমাপ সম্পর্কে অদ্যাবধি স্বীকৃত এবং বৈজ্ঞানিক সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত একটি পরিমাণ উপস্থাপন করেন।
ওমর খৈয়াম (১০১৯-১১৩৫ খ্রি.)
গণিতশাস্ত্রে মুসলিম মনীষীদের মধ্যে ওমর খৈয়াম সর্বাধিক প্রসিদ্ধ। ঘন সমীকরণ ও অন্যান্য উন্নততর সমীকরণের পদ্ধতিগত বিশ্লেষণ এবং সংজ্ঞানুসারে এগুলোর শ্রেণিবিন্যাস করে ওমর খৈয়াম বীজগণিতের উন্নতিসাধনে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। পাটিগণিত ও জ্যামিতির ওপরও তিনি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেন। ওমর খৈয়াম গণিত বিষয়ে ২২টি মৌলিক গ্রন্থ রচনা করেন। 'কিতাবুল জিবার' তার সর্বশ্রেষ্ঠ গণিত গ্রন্থ। এতে তিনি গণিতের সর্বজনীন সংজ্ঞা নিরূপণ করেন এবং দ্বিপদী, ত্রিপদী ও চতুর্পদী সমীকরণের শ্রেণিভেদ ও বিশ্লেষণের অসাধারণ দক্ষতা প্রদর্শন করেন। গণিতে তার সবচেয়ে মৌলিক অবদান হলো জ্যামিতিক পদ্ধতিতে ত্রিঘাত সমীকরণের (Cubic equation) সমাধান করা। তিনিই প্রথম বীজগণিতের ভগ্নাংশীয় সমীকরণ সম্বন্ধে আলোচনা করেন। ‘মুশকিলাত-ই-হিসাব' তার অপর একটি বিখ্যাত গ্রন্থ।
এছাড়া আবুল ওয়াফার, জাবির বিন আফলাহ, আল- কালাহাদি, আল-কিন্দি, আল-ফারাবি, আল-ইয়ামি প্রমুখ মুসলিম মনীষীও গণিতশাস্ত্রের উন্নয়নে অবিস্মরণীয় অবদান রাখেন।
একক কাজ: গণিতশাস্ত্রে পাঁচজন মুসলিম মনীষীর অবদান ছক আকারে লেখো ।
বাড়ির কাজ :
গণিতশাস্ত্রে মুসলিম মনীষীদের অবদান ছিল অপরিসীম। এ প্রসঙ্গে সর্বাধিক বিখ্যাত একজন গণিতবিদের নাম উল্লেখ করা যেতে পারে, যিনি বীজগণিতের ওপর বিখ্যাত একটি গ্রন্থ রচনা করেন। যেকোনো বিবেচনাতেই তার এই গ্রন্থটি বীজগণিতের প্রথম ও শ্রেষ্ঠতম গ্রন্থ। এ গ্রন্থে তিনি দ্বিতীয় মাত্রার সমীকরণের সমাধান, বীজগাণিতিক গুণ ও ভাগ এবং আল-খাওয়ারিযমির নিজস্ব সূত্র ও সমস্যার সমাধান তুলে ধরেন। তাকে বীজগণিতের জনক বলা হয় ।
ক. উদ্দীপকে যে বিখ্যাত মুসলিম মনীষীর ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে গণিতশাস্ত্রে তার অবদান ব্যাখ্যা করো।
খ. উক্ত মনীষী ব্যতীত গণিতশাস্ত্রে আর কোনো মুসলিম মনীষীর অবদান আছে কি? মতামত দাও।