• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি

পৌরনীতি ও সুশাসন পরিচিতি

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

পৌরনীতি ও সুশাসন পরিচিতি

পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে জ্ঞানের অন্যান্য ক্ষেত্রের সম্পর্ক | Relation of Civics and Good Governance with Other Branches of Knowledge

সামাজিক বিজ্ঞানের একটি শাখা হিসেবে পৌরনীতি সমাজবদ্ধ মানুষের আচরণ, দৃষ্টিভঙ্গি ও নানামুখী কার্যাবলি নিয়ে আলোচনা করে। আর সুশাসন নাগরিকদের আত্মমর্যাদা ও উপলব্ধিতে সমর্থন যোগায়, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সহায়তা করে। পৌরনীতি ও সুশাসন যেমন পরস্পর নির্ভরশীল ঠিক তেমনি জ্ঞানের অন্যান্য শাখাগুলোর সাথে পৌরনীতি ও সুশাসন গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। পৌরনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান, লোকপ্রশাসন, অর্থনীতি, নীতিশাস্ত্র, ভূগোল, জনসংখ্যা ও উন্নয়ন চর্চা, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রভৃতি জ্ঞানের শাখাগুলো বর্তমানে স্বতন্ত্র বিষয় হলেও এদের একটির সাথে অন্যটির সম্পর্ক গভীর। সিজউইক (Sidgwick)-এর মতে, "কোনো শাস্ত্র সম্পর্কে সঠিক ও পরিপূর্ণ জ্ঞান অর্জন করতে হলে অন্যান্য শাস্ত্রের সাথে তার সম্পর্ক অনুধাবন করা প্রয়োজন।"

নিচে জ্ঞানের অন্যান্য মূল্যবান শাখাগুলোর সাথে পৌরনীতি ও সুশাসনের সম্পর্ক আলোচনা করা হলো:

পৌরনীতি ও সুশাসন এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান (Civics, Good Governance and Political Science) জ্ঞানের অন্যান্য শাখার মধ্যে পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সম্পর্ক সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ। পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সম্পর্ক আলোচনা করতে গেলে এদের সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য আলোচনার প্রয়োজন হয়।

সাদৃশ্য: পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সাদৃশ্যগুলো নিম্নরূপ:

১. উৎপত্তিগত সাদৃশ্য পৌরনীতির ইংরেজি শব্দ Civics যার উৎপত্তি হয়েছে ল্যাটিন শব্দ Civis ও Civitas থেকে। Civis শব্দের অর্থ নাগরিক এবং Civitas শব্দের অর্থ নগররাষ্ট্র। ঠিক তেমনি Politics বা রাজনীতি যার অপর নাম রাষ্ট্রবিজ্ঞান তার উৎপত্তি হয়েছে গ্রিক শব্দ Polites ও Polis থেকে। Polites শব্দের অর্থ নাগরিক এবং Polis শব্দের অর্থ নগররাষ্ট্র। সুতরাং উৎপত্তিগত দিক থেকে পৌরনীতি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সম্পর্ক খুবই কাছাকাছি ও ঘনিষ্ঠ।

২. কার্যাবলির ক্ষেত্রে সাদৃশ্য পৌরনীতি নাগরিকতা বিষয়ক শাস্ত্র বলে রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে মানুষের কার্যাবলি আলোচনাই পৌরনীতির মুখ্য কাজ। এছাড়া পৌরনীতি সুশাসন, ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর স্বাধীনতা, অধিকার ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা প্রদান করে, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন কার্যকলাপের কাঠামো রচনা করে। অন্যদিকে, রাষ্ট্রবিজ্ঞান রাষ্ট্রকেন্দ্রিক বিজ্ঞান হলেও নাগরিকতার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করে। কেননা নাগরিকদের নিয়েই রাষ্ট্র গঠিত।

৩. আলোচ্য বিষয়ে সাদৃশ্য নাগরিকতা বিষয়ক বিজ্ঞান হওয়া সত্ত্বেও পৌরনীতি এমন অনেক বিষয় আলোচনা করে যেগুলো রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রধান আলোচ্য বিষয়। যেমন- সংবিধান, রাষ্ট্র, সরকার, প্রশাসন, আইন, স্বাধীনতা, সাম্য, সুশাসন, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি। ঠিক তেমনি রাষ্ট্রবিজ্ঞান রাষ্ট্র সম্পর্কিত বিজ্ঞান হলেও পৌরনীতি তথা নাগরিকতা সম্পর্কিত সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকে। কেননা নাগরিক ছাড়া রাষ্ট্র গঠন অসম্ভব। সুতরাং পৌরনীতি ও সুশাসন এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড় ও ঘনিষ্ঠ।

৪. উদ্দেশ্যগত সাদৃশ্য: পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের দিক দিয়ে সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। উভয় শাস্ত্র সুনাগরিক গড়ে তোলার শিক্ষা প্রদান করে। জনগণের কল্যাণ সাধনই উভয়ের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য। জনগণ যাতে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সেবা, সুযোগ-সুবিধা লাভ করে উন্নত ও কল্যাণকর নাগরিক জীবন গড়ে তুলতে পারে উভয় শাস্ত্রই সেই লক্ষ্যে কাজ করে।

বৈসাদৃশ্য: পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ থাকা সত্ত্বেও এদের মধ্যে নিম্নলিখিত পার্থক্য বিদ্যমান:

১. বিষয়বস্তুগত পার্থক্য। অনেকে পৌরনীতিকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অংশ বলে মনে করেন। কেননা আন্তর্জাতিক ঘটনাবলি, বিশ্বশান্তি রক্ষায় গঠিত বিভিন্ন সংগঠন এবং এগুলোর কার্যাবলি আলোচনা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধিকে ব্যাপক করে তুলেছে। অন্যদিকে, পৌরনীতি কেবল নাগরিক জীবনের আলোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে বিধায় পৌরনীতির পরিধি ও বিষয়বস্তু সংকীর্ণ।

২. বিষয়বস্তুর গুরুত্বের পার্থক্য: রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনায় যে বিষয়গুলো গুরুত্ব পায় পৌরনীতির ক্ষেত্রে সেটা ততটা গুরুত্ব পায় না। কারণ পৌরনীতি নাগরিকতা সম্পর্কিত বিষয়গুলোর ওপরই অধিক গুরুত্বারোপ করে।

৩. দৃষ্টিভঙ্গিগত পার্থক্য: প্রকৃতপক্ষে পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পার্থক্য দৃষ্টিভঙ্গিগত। পৌরনীতি ও সুশাসন যেহেতু নাগরিকতা সম্পর্কিত শাস্ত্র সে কারণে মানুষের যেকোনো সমস্যাকে নাগরিক দৃষ্টিকোণ (Citizen point of view) থেকে আলোচনা করে। আর রাষ্ট্রবিজ্ঞান রাষ্ট্র সম্পর্কিত বিজ্ঞান হিসেবে ঐ সমস্যাকে রাষ্ট্রীয় দৃষ্টিকোণ (State point of view) থেকে আলোচনা করে।

৪. পরিধিগত পার্থক্য: পৌরনীতি ও সুশাসনের তুলনায় রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধি ব্যাপক ও অনেকটা বিস্তৃত। পৌরনীতি মূলত নাগরিকদের অধিকার, কর্তব্য, নাগরিকতা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। কিন্তু রাষ্ট্রবিজ্ঞান এসব বিষয় ছাড়াও জাতীয়, আন্তর্জাতিক সংগঠন, সমস্যাদি নিয়েও আলোচনা করে। এ জন্য অনেকে পৌরনীতিকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের একটি অংশ বলে মনে করেন।

উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, পৌরনীতি ও সুশাসনের লক্ষ্য যেমন মানবকল্যাণ ঠিক তেমনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের লক্ষ্যও মানবকল্যাণ তথা মানুষের উন্নত রাজনৈতিক জীবনের শিক্ষা দেওয়া। জ্ঞানের এ শাখা দুটোর মধ্যে কিছু বৈসাদৃশ্য থাকা সত্ত্বেও এ দু'টি বিষয় পরস্পর ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত ও একে অপরের পরিপূরক।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ