- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
পৌরনীতি ও সুশাসন পরিচিতি
পৌরনীতি ও সুশাসন এবং হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ (Civics, Good Governance and Human Rights, Gender Studies)
পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ-এর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ-এর মূল আলোচ্য বিষয় হলো মৌলিক মানবাধিকার ও নারী-পুরুষের সমানাধিকার। আর পৌরনীতি ও সুশাসনের অন্যতম আলোচ্য বিষয় হলো নাগরিকদের মৌলিক অধিকার। তাই এক্ষেত্রে দেখা যায়, পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজের সাদৃশ্য রয়েছে। তবে জ্ঞানের এ দুটি শাখার মধ্যে সাদৃশ্যের পাশাপাশি কিছু-বৈসাদৃশ্যও পরিলক্ষিত হয়। নিচে তা আলোচনা করা হলো:
সাদৃশ্য:
১. অভিন্ন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পৌরনীতি ও সুশাসন এবং হিউম্যান রাইটস ও জেন্ডার স্টাডিজের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য মানুষের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করা। পৌরনীতি ও সুশাসন এই লক্ষে মানুষের নাগরিক অধিকার, কর্তব্য, সরকারের কর্মকাণ্ড ও দায়িত্বশীলতা নিয়ে আলোচনা করে। নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধি করে। আর হিউম্যান রাইটস ও জেন্ডার স্টাডিজ জাতি, বর্ণ, ধর্ম, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের মানবাধিকার ও লিঙ্গ বৈষম্য দূর করে সমতা বিধানের প্রয়াশ চালায়।
২. আলোচ্যসূচির সাদৃশ্য। আলোচ্যসূচির উভয় শাস্ত্রের মধ্যে সাদৃশ্য লক্ষ করা যায়। পৌরনীতি ও সুশাসন রাষ্ট্র, নাগরিক অধিকার, আইনের শাসন নিয়ে যেমন আলোচনা করে। তেমনি হিউম্যান রাইটস ও জেন্ডার স্টাডিজ নাগরিকদের অধিকার, মানবাধিকার, লিঙ্গ সমতা, সুশাসন প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকে।
৩. একে অপরের পরিপূরক: পৌরনীতি ও সুশাসন এবং হিউম্যান রাইটস ও জেন্ডার স্টাডিজ একে অপরের সহায়ক ও পরিপূরক হিসেবে কাজ করে। পৌরনীতি ও সুশাসন মানবাধিকার, আইনের শাসন, সুশাসন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করে হিউম্যান রাইটস ও জেন্ডার স্টাডিজকে সহায়তা করে। তেমনি জেন্ডার স্টাডিজ জেন্ডার বৈষম্য, মানবাধিকারের সমস্যা, নারীর ক্ষমতায়ন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করে পৌরনীতিকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করে।
৪. জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন: উভয় শাস্ত্র নাগরিক জীবনের মানোন্নয়নের নানাবিধ উপায় নিয়ে আলোচনা করে। মানবাধিকার নিশ্চিতকরণ, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জেন্ডার এবং সমতা আনয়নের জন্য উভয় শাস্ত্র প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে।
৫. সুশাসন প্রতিষ্ঠায় পৌরনীতি ও সুশাসন এবং হিউম্যান রাইটস ও জেন্ডার স্টাডিজ উভয় শাস্ত্র মানুষের মধ্যে সকল বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে মানবাধিকার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে।
বৈসাদৃশ্য:
১. হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ তুলনামূলক নতুন সময়ের দিক বিবেচনা করলে দেখা যায় যে, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ তুলনামূলকভাবে জ্ঞানের একটি নতুন শাখা। কিন্তু পৌরনীতি ও সুশাসন সে তুলনায় অনেক পুরাতন ও সুসংহত বিষয়।
২. বিষয়বস্তুগত পার্থক্য পৌরনীতি ও সুশাসন নাগরিকতা বিষয়ক বিজ্ঞান। পৌরনীতির প্রধান আলোচ্য বিষয় হলো নাগরিকতা ও রাষ্ট্র। অন্যদিকে, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজের প্রধান আলোচ্য বিষয় হলো জনগণের মৌলিক মানবাধিকার, নারী-পুরুষের বৈষম্য (Gender Discrimination) এবং নারী-পুরুষের সমানাধিকার যা ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষণা করা হয়েছে।
৩. পরিধিগত পার্থক্য পৌরনীতি ও সুশাসন রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে মানুষের জীবনের বিভিন্ন দিক আলোচনা ও পর্যালোচনা করে থাকে। কিন্তু হিউম্যান রাইটস ও জেন্ডার স্টাডিজ কেবলমাত্র মানবাধিকার ও জেন্ডার ইস্যু আলোচনা করে। এ দিক থেকে হিউম্যান রাইটস ও জেন্ডার স্টাডিজের তুলনায় পৌরনীতি ও সুশাসনের পরিধি অনেক বেশি সম্প্রসারিত।
৪. নারী-পুরুষের সমতার ক্ষেত্রে পৌরনীতি ও সুশাসন নারী-পুরুষের মধ্যে সেরকম কোনো পার্থক্য না করে সবাইকে নাগরিক হিসেবে গণ্য করে। পৌরনীতির বিষয়বস্তুতে নাগরিকের নানা প্রসঙ্গ গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। কিন্তু হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজে নারীর মানবাধিকার, নারীর ক্ষমতায়ন, জেন্ডার বৈষম্য, জেন্ডার সমতা প্রভৃতি বিষয়গুলোর উপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়।
৫. মানুষ সম্পর্কিত ধারণা: পৌরনীতি ও সুশাসনে মানুষকে সামাজিক ও রাজনৈতিক জীব হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু, হিউম্যান রাইটস ও জেন্ডার স্টাডিজে মানুষের রাজনৈতিক দিকটিকে গুরুত্ব না দিয়ে সামাজিক জীব হিসেবে মনে করে এবং মানবিক বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করে।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ