- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
পৌরনীতি ও সুশাসন পরিচিতি
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
পৌরনীতি ও সুশাসন পরিচিতি
পৌরনীতি ও সুশাসন এবং অর্থনীতি (Civics, Good Governance and Economics)
পৌরনীতি ও সুশাসন এবং অর্থনীতি উভয়ই সামাজিক বিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ শাখা। উভয়ের লক্ষ্য হলো সুখী ও সমৃদ্ধিশালী নাগরিক জীবন প্রতিষ্ঠা করা। তাই এদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান।
সাদৃশ্য: পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে অর্থনীতির নিম্নলিখিত সাদৃশ্য লক্ষ করা যায়:
১. অভিন্ন লক্ষ্য: পৌরনীতি ও সুশাসন এবং অর্থনীতির লক্ষ্য এক ও অভিন্ন। উভয়ের লক্ষ্য হলো মানবকল্যাণ সাধন করা। রাষ্ট্রের দুর্নীতি হ্রাস করে কীভাবে উন্নত নাগরিক জীবন গঠন করা যায়, কীভাবে সুনাগরিক হওয়া যায়, নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্য কী কী ইত্যাদি বিষয়ে পৌরনীতি ও সুশাসন আলোচনা করে। আর অর্থনীতি অসীম অভাবের মাঝে সীমিত সম্পদকে কাজে লাগিয়ে কীভাবে দ্রুত নাগরিকের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন করা যায় তা শিক্ষা দেয়। সুতরাং উভয়ের লক্ষ্য এক।
২. অভিন্ন বিষয়বস্তু: পৌরনীতি ও সুশাসন এবং অর্থনীতির মধ্যে কতগুলো অভিন্ন বিষয় পরিদৃষ্ট হয়। প্রতিটি রাজনৈতিক সমস্যার যেমন অর্থনৈতিক দিক রয়েছে। তেমনি প্রতিটি অর্থনৈতিক সমস্যারও রাজনৈতিক দিক রয়েছে। সম্পদ, উৎপাদন ও বণ্টন ব্যবস্থা, বাজেট, অর্থনৈতিক সমস্যা ও তার সমাধান, অর্থনৈতিক পরিকল্পনা প্রভৃতি বিষয় অর্থনীতি এবং পৌরনীতি ও সুশাসন উভয় শাস্ত্রই আলোচনা করে। কেননা এসব বিষয়ের আলোচনা ব্যতীত নাগরিকের জন্য যেমন সুশাসন নিশ্চিত করা সম্ভব নয়, তেমনি অর্থনৈতিক উন্নয়নও সম্ভব নয়।
৩. পারস্পরিক নির্ভরশীলতা আধুনিককালে সকল প্রকার অর্থনৈতিক কার্যক্রম রাষ্ট্র কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হয়। এ কারণে রাজনীতিবিদদের যেমন অর্থনৈতিক জ্ঞান থাকা প্রয়োজন, তেমনি অর্থনীতিবিদদেরও রাজনৈতিক জ্ঞান অর্জন করতে হয়। কেননা রাজনৈতিক দিকে লক্ষ রেখেই অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হয়।
৪. একের ওপর অন্যের প্রভাব পৌরনীতি ও সুশাসন এবং অর্থনীতি একে অপরের উপর প্রভাব বিস্তার করে থাকে। রাষ্ট্র পরিচালনায় যারা নিয়োজিত থাকেন, তাদের যেমন অর্থনৈতিক জ্ঞান প্রয়োজন, তেমনি অর্থনীতিবিদদেরও রাজনৈতিক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জন জরুরি হয়ে পড়ে।
৫. পরস্পর পরিপুরক পৌরনীতি ও সুশাসন এবং অর্থনীতি একে অপরের পরিপূরক ও সহায়ক হিসেবে কাজ করে। মানুষের জীবনের রাজনৈতিক দিকগুলোর সাথে অর্থনীতি গভীরভাবে সম্পৃক্ত। মানুষের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক জীবন বিচ্ছিন্ন নয়, বরং পরিপূরক ও সহায়ক। একটির পরিবর্তনের সাথে সাথে অন্যটিরও পরিবর্তন ঘটে। তাই অধ্যাপক ম্যাকাইভার এ সত্য অনুধাবন করে বলেছেন, "সব রকমের শাসন পদ্ধতি তার অনুরূপ সম্পত্তি ব্যবস্থার রূপ পরিগ্রহ করে। একটির পরিবর্তন হলে অন্যটিরও পরিবর্তন সাধিত হয়।"
৬. জনকল্যাণ প্রশ্নে: জনকল্যাণ প্রশ্নে পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে অর্থনীতির গভীর সম্পর্ক রয়েছে। আধুনিক কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের প্রধান লক্ষ্য হলো জনগণের সার্বিক মঙ্গল সাধন করা। জনগণের কল্যাণে রাষ্ট্রকে বহুমুখী অর্থনৈতিক পরিকল্পনা, কর্মসূচি বাস্তবায়িত করতে হয়। আর এসব কার্যাবলি পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয় সরকার দ্বারা। তাই জনকল্যাণ ত্বরান্বিত করতে সঠিক অর্থনৈতিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সবার পৌরনীতি ও সুশাসন এবং অর্থনৈতিক জ্ঞান থাকা অপরিহার্য।
৭. সুশাসন প্রশ্নে: রাষ্ট্রীয় জীবনে সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে অর্থনীতির গভীর যোগসূত্র রয়েছে। সমাজে সুশাসন নিশ্চিত করতে হলে যেমন জনগণের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটানো প্রয়োজন তেমন প্রয়োজন হয় অর্থনৈতিক জ্ঞান ও দক্ষতার। অর্থনৈতিক পরিকল্পনার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং সর্বক্ষেত্রে স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতার জন্য প্রয়োজন যোগ্য রাজনৈতিক নেতৃত্ব, দক্ষতা ও দূরদর্শিতা। তাই বলা যায়, সুশাসন প্রশ্নে পৌরনীতি ও অর্থনীতির সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য বন্ধনে আবদ্ধ।
বৈসাদৃশ্য: পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে অর্থনীতির নিম্নলিখিত কিছু বৈসাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়:
১. বিষয়বস্তুগত: নাগরিকতার সাথে জড়িত সকল বিষয়ই পৌরনীতি ও সুশাসনের আলোচ্য বিষয়। আর অর্থনীতির প্রধান আলোচ্য বিষয় হচ্ছে মানুষের অর্থনৈতিক কার্যাবলি। তাই পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে অর্থনীতির নিবিড় সম্পর্ক থাকলেও আলোচ্য বিষয়ের ক্ষেত্রে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।
২. গুরুত্বের ক্ষেত্রে: অর্থনীতি সমগ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উপর গুরুত্বারোপ করে। এছাড়াও অর্থনীতি মানুষের আয়, ব্যয়, চাহিদা, সম্পদ, বাজারব্যবস্থা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। আর পৌরনীতি নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্যের উপর অধিক গুরুত্বারোপ করে। পৌরনীতি সুশাসন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, সরকারের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করে।
৩. পদ্ধতিগত: পৌরনীতি ও সুশাসনের অনুশীলন পদ্ধতি ঐতিহাসিক ও তুলনামূলক। কিন্তু অর্থনীতির অনুশীলন পদ্ধতি গাণিতিক।
৪. বস্তুনিষ্ঠতার দিক থেকে: পৌরনীতি ও সুশাসন এবং অর্থনীতির মধ্যে বস্তুনিষ্ঠতার দিক থেকে পার্থক্য রয়েছে। পৌরনীতি অনেকটাই নীতিনিষ্ঠ বিজ্ঞান, আর অর্থনীতি মূলত বস্তুনিষ্ঠ শাস্ত্র।
সুতরাং উপরিউক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, কিছু পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে অর্থনীতির সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড় ও ঘনিষ্ঠ। জনগণের সর্বাধিক মঙ্গল সাধনই উভয়ের উদ্দেশ্য।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ