- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
পৌরনীতি ও সুশাসন পরিচিতি
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
পৌরনীতি ও সুশাসন পরিচিতি
পৌরনীতি ও সুশাসন এবং ভূগোল (Civics, Good Governance and Geography)
পৌরনীতি ও সুশাসন মূলত নাগরিকতা বিষয়ক বিজ্ঞান। তাছাড়া পৌরনীতির আলোচ্য বিষয় রাষ্ট্র মূলত ভৌগোলিক প্রতিষ্ঠান। আর ভূগোল রাষ্ট্রের ভূখণ্ড, আবহাওয়া, ভূ-প্রকৃতি, পাহাড়-পর্বত ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করে। তাই পৌরনীতি ও ভূগোলের মধ্যে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান।
সাদৃশ্য: পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে ভূগোলের সাদৃশ্য নিম্নরূপ:
১. রাষ্ট্রীয় ভূখণ্ডের আলোচনা ভূখণ্ড হচ্ছে রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রের যেকোনো সংগঠন এই ভূমির উপরই গড়ে ওঠে। রাষ্ট্রের উন্নতি ও সমৃদ্ধি নির্ভর করে ভূমির আয়তন ও আকৃতি, অবস্থান, জলবায়ু, প্রাকৃতিক সম্পদ প্রভৃতির উপর। এ কারণে পৌরনীতি ও সুশাসন পাঠে ভূগোলের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
২. ভৌগোলিক সান্নিধ্য ও জাতীয়তাবাদ: জাতীয়তাবাদের গঠন ও বিকাশে ভৌগোলিক পরিবেশের প্রভাব অনস্বীকার্য। কেননা একই ভূখণ্ডে বসবাসকারী জনসমাজের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই ঐক্যবোধ জাগ্রত হয়। আর জাতীয়তাবাদ পৌরনীতি ও সুশাসনের একটি অন্যতম আলোচ্য বিষয় হওয়ায় এদিক থেকে ভূগোলের সঙ্গে যথেষ্ট মিল লক্ষ করা যায়।
৩. জাতীয় নীতি ও পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণে কোনো দেশের জাতীয় নীতি ও পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণে ভৌগোলিক পরিবেশের প্রভাব অপরিসীম। কোনো দেশের সরকার দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য যেসকল কাজ করেন তার উপর ভৌগোলিক পরিবেশ যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে।
৪. রাষ্ট্রীয় কল্যাণের ক্ষেত্রে পৌরনীতি ও সুশাসন নাগরিক অধিকার, নাগরিক স্বাধীনতা তথা রাষ্ট্রীয় কল্যাণ নিয়ে আলোচনা করে থাকে। অন্যদিকে শিল্প কেন্দ্র, কলকারখানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইত্যাদি কোথায় স্থাপিত হলে জনগণের অধিক কল্যাণ সাধিত হবে ভূগোল সে সম্পর্কে দিক নির্দেশনা প্রদান করে। এমনকি নদ-নদী, সমুদ্র, মরুভূমি কীভাবে কাজে লাগানো যায় ভূগোল সে সম্পর্কেও আলোচনা করে। তাই জাতীয় সমৃদ্ধি উন্নয়ন তথা রাষ্ট্রীয় কল্যাণের ক্ষেত্রে ভূগোল এবং পৌরনীতি ও সুশাসনের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর।
৫. জনজীবনে প্রভাব কোনো রাষ্ট্রের ভৌগোলিক অবস্থা, ভৌগোলিক পরিবেশ সেদেশের যোগাযোগ, আবহাওয়া, সংস্কৃতি তথা জনজীবনে প্রভাব বিস্তার করে থাকে। আর এসবের উপর ভিত্তি করে নাগরিক জীবনের নানা কল্যাণকর নীতিমালা গ্রহণ করা হয়ে থাকে।
৬. জাতি-রাষ্ট্রের বিকাশে জাতীয়তাবাদী চেতনার প্রসারের ফলে জাতি-রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়েছে। পৌরনীতিতে জাতি, জাতীয়তা এবং জাতি-রাষ্ট্র সম্পর্কে গুরুত্বসহকারে আলোচনা করা হয়ে থাকে। আর একটি দেশের ভৌগোলিক অবস্থান, পরিবেশ জাতীয়তাবাদ ও জাতীয় রাষ্ট্রের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
বৈসাদৃশ্য: পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে ভূগোলের বৈসাদৃশ্যগুলো নিম্নরূপ:
১. বিষয়বস্তুর পার্থক্য পৌরনীতি ও সুশাসন নাগরিক, রাষ্ট্র, সরকার ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করে। অন্যদিকে, ভূগোল ভূ-প্রকৃতি এবং পারিপার্শ্বিক পরিবেশ নিয়ে আলোচনা করে।
২. অধ্যয়ন পদ্ধতির পার্থক্য পৌরনীতি ও সুশাসনের অধ্যয়ন পদ্ধতি ঐতিহাসিক ও তুলনামূলক। কিন্তু ভূগোলের অধ্যয়ন পদ্ধতি ঐতিহাসিক ও গাণিতিক।
উপর্যুক্ত পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও পৌরনীতি ও সুশাসনের সঙ্গে ভূগোলের পারস্পরিক সম্পর্ককে অস্বীকার করার উপায় নেই। কারণ রাষ্ট্রের কোথায় কোন স্থাপনা নির্মাণ করতে হবে, নাগরিকের কল্যাণে কোথায় কোন শিল্পকারখানা, যাতায়াত ব্যবস্থা বা জনপদ গড়ে তুলতে হবে তার যথার্থ উত্তরের জন্য সরকারকে অবশ্যই ভূগোলের জ্ঞান আহরণ করতে হয়। তাই গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল (Aristotle) বলেছেন, "কোনো রাষ্ট্রের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান, জনগণের চরিত্র ও মন-মানসিকতা ভৌগোলিক অবস্থানের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।"
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ