• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি

পৌরনীতি ও সুশাসন পরিচিতি

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

পৌরনীতি ও সুশাসন পরিচিতি

পৌরনীতি ও সুশাসন এবং লোকপ্রশাসন (Civics, Good Governance and Public Administration)

পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে লোকপ্রশাসনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। আইন প্রয়োগ এবং সরকারি নীতি বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে গৃহীত সকল সরকারি কর্মকাণ্ডই লোকপ্রশাসনের বিষয়বস্তু। পৌরনীতি ও সুশাসন এবং লোকপ্রশাসন উভয়েই সামাজিক বিজ্ঞান।

সাদৃশ্য: পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে লোকপ্রশাসনের সাদৃশ্য নিম্নরূপ:

১. উৎপত্তিগত সাদৃশ্য পৌরনীতি ও সুশাসন এবং লোকপ্রশাসন উৎপত্তিগত দিক থেকে এক ও অভিন্ন। উভয় বিজ্ঞান সামাজিক বিজ্ঞান থেকে উৎপত্তি হয়েছে। লোকপ্রশাসনের ভিত্তি হচ্ছে পৌরনীতি ও সুশাসন।

২. অভিন্ন লক্ষ্য: রাজনৈতিক প্রক্রিয়া, যেমন- নির্বাচন, আইন প্রণয়ন প্রভৃতির সাথে পৌরনীতি ও সুশাসন সম্পৃক্ত। অন্যদিকে, সরকারি নীতি বাস্তবায়নের প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত হচ্ছে লোকপ্রশাসন। এ কারণে লোকপ্রশাসন এবং পৌরনীতি ও সুশাসনের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করা বেশ জটিল। প্রশাসনের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, বিভিন্ন গোষ্ঠীর দ্বন্দ্ব-বিরোধ মীমাংসা ও তাদের স্বার্থ সংরক্ষণ- এককথায় নাগরিকের উন্নত জীবন নিশ্চিত করা। এদিক থেকে লোকপ্রশাসন ও পৌরনীতির লক্ষ্য এক ও অভিন্ন। কারণ পৌরনীতি ও সুশাসন চায় নাগরিকদের উন্নত জীবন নিশ্চিত করা।

৩. পরস্পর নির্ভরশীল বর্তমানকালে পৌরনীতি ও সুশাসন এবং লোকপ্রশাসনকে দুটি পৃথক ক্ষেত্র বলে ধারণা করা হয় না বরং পরস্পর নির্ভরশীল বলে মনে করা হয়। তাছাড়া লোকপ্রশাসন একটি দেশের বাইরের কিছু নয় বরং বর্তমানে এটি একটি রাজনৈতিক তত্ত্বও বটে।

৪. একে অপরের উৎকর্ষ সাধন করে পৌরনীতি ও সুশাসন এবং লোকপ্রশাসন একে অপরের উৎকর্ষ সাধন করে। লোকপ্রশাসন প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করে পৌরনীতি ও সুশাসনের আইনের শাসন কায়েম নাগরিক জীবনের নিরাপত্তা ও কল্যাণ সাধন করে।

পৌরনীতি ও সুশাসন তার ব্যাপকভিত্তিক ক্ষেত্র থেকে করণীয় বিষয়সমূহ নির্ধারণ করে দিয়ে লোকপ্রশাসনকে উৎকর্ষতা দান করে।

বৈসাদৃশ্য: পৌরনীতি ও সুশাসনের সঙ্গে লোকপ্রশাসনের যেমন সাদৃশ্য রয়েছে তেমনি কিছু বৈসাদৃশ্যও রয়েছে। যেমন-

১. পরিধিগত পার্থক্য পৌরনীতি ও সুশাসনের পরিধি লোক প্রশাসনের পরিধি অপেক্ষা ব্যাপক। পৌরনীতি ও সুশাসন রাষ্ট্র, সরকার, নাগরিক, নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্য নিয়ে আলোচনা করে। কিন্তু লোকপ্রশাসন সাধারণত রাষ্ট্রীয় নীতি সম্পর্কে আলোচনা করে।

২. উদ্দেশ্যগত পার্থক্য পৌরনীতি ও সুশাসনের উদ্দেশ্য হলো নাগরিকতা, নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সুনাগরিকতার শিক্ষা দান, ব্যক্তি ও রাষ্ট্রীয় জীবনে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা। অন্যদিকে লোকপ্রশাসনের লক্ষ্য হলো সরকারি নীতির বাস্তবায়ন করা।

৩. প্রকৃতিগত পার্থক্য: পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে লোক প্রশাসনের প্রকৃতিগত পার্থক্য বিদ্যমান। পৌরনীতি ও সুশাসনের প্রধান সমস্যা রাষ্ট্র, সরকার ও সুশাসন সংক্রান্ত সমস্যা কিন্তু লোক প্রশাসনের প্রধান সমস্যা হলো নীতিগত সমস্যা। পৌরনীতি ও সুশাসন তথ্যভিত্তিক আর লোকপ্রশাসন হচ্ছে বাস্তবভিত্তিক। পৌরনীতি এ নীতি প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করে। আর লোকপ্রশাসন তা বাস্তবায়ন করে। 

৪. ক্ষমতার দিক থেকে ক্ষমতার দিক দিয়েও এ দুই শাস্ত্রের মধ্যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। পৌরনীতি ও সুশাসন হচ্ছে অনেকটা নৈতিক বিষয় (Moral) আর লোকপ্রশাসন হচ্ছে টেকনিক্যাল বিষয় (Technical)। পৌরনীতি ও সুশাসন ক্ষমতার নানাদিক নিয়ে ব্যাপৃত থাকে, অপরদিকে লোকপ্রশাসন তার উপর অর্পিত ক্ষমতার ব্যবহার করে মাত্র।

উপর্যুক্ত আলোচনার আলোকে বলা যায় যে, পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে লোকপ্রশাসনের সম্পর্ক খুবই ঘনিষ্ঠ। সুষ্ঠু প্রশাসন তথা সুশাসনের জন্য উভয়ের মধ্যে যথার্থ ভারসাম্য রক্ষা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পৌরনীতি রাষ্ট্র ও সরকারের বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। অন্যদিকে, লোকপ্রশাসন সরকারের কার্যক্রম নিয়ে ব্যস্ত থাকে। অধ্যাপক ডিমোক ও ডিমোক (Dimock and Dimock)-এর ভাষায়, "পৌরনীতি তথা রাষ্ট্রবিজ্ঞান 'কী করতে হবে' তা নিয়ে এবং লোকপ্রশাসন 'কীভাবে তা করবে' তা নিয়ে আলোচনা করে। তবে সুশাসনভিত্তিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের জন্য উভয় শাস্ত্রই পরস্পরের সহায়ক।"

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ