- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
পৌরনীতি ও সুশাসন পরিচিতি
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
পৌরনীতি ও সুশাসন পরিচিতি
পৌরনীতি ও সুশাসন এবং সমাজবিজ্ঞান (Civics, Good Governance and Sociology)
সমাজবিজ্ঞান মানবজীবনের উৎপত্তি, বিকাশ, পরিবর্তন ইত্যাদি সম্পর্কে পরিপূর্ণ আলোচনা করে। এ কারণে সমাজবিজ্ঞানকে বলা হয় "মৌলিক সামাজিক বিজ্ঞান" (Fundamental Social Science)। পৌরনীতি ও সুশাসন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সদস্য হিসেবে নাগরিকের সাথে রাষ্ট্র, সরকার ইত্যাদির সম্পর্ক পর্যালোচনা করে। সমাজ, রাষ্ট্র, সরকার সবই মানুষের গড়া প্রতিষ্ঠান। এ কারণে পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে সমাজবিজ্ঞানের সম্পর্ক খুবই ঘনিষ্ঠ।
সাদৃশ্য: উভয় শাস্ত্রের সাদৃশ্যসমূহ নিম্নরূপ:
১. বিষয়বস্তুগত সাদৃশ্য পরিবার, সমাজ, পরিবেশ, নেতৃত্ব, সম্পত্তি, প্রথা প্রভৃতি নিয়ে সমাজবিজ্ঞান এবং পৌরনীতি ও সুশাসন উভয় শাস্ত্রই আলোচনা করে। তাই আলোচ্য বিষয়ে এদের মধ্যে যথেষ্ট মিল রয়েছে।
২. পারস্পরিক নির্ভরশীলতা মানুষ সামাজিক পরিবেশে লালিত-পালিত হলেও পরিপূর্ণতা অর্জনের জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সংগঠনের। পৌরনীতি ও সুশাসন রাষ্ট্র ও নাগরিকের বিভিন্ন সংগঠন সম্পর্কে আলোচনা করে সমাজবিজ্ঞানকে সমৃদ্ধ করে। সমাজবিজ্ঞানও সমাজের উৎপত্তি, ক্রমবিকাশ, সামাজিক মূল্যবোধ ইত্যাদি আলোচনা করে পৌরনীতি ও সুশাসনকে পরিপূর্ণতা দান করে। এরিস্টটল যথার্থই বলেছেন, "মানুষ প্রকৃতিগতভাবেই সামাজিক ও রাজনৈতিক জীব।"
৩. পরস্পর সম্পর্কযুক্ত: পৌরনীতি ও সুশাসন এবং সমাজবিজ্ঞান পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। সমাজবিজ্ঞানের মূল আলোচ্য বিষয় হলো সমাজ ও সামাজিক সম্পর্ক আর পৌরনীতি ও সুশাসনের মূল আলোচ্য বিষয় হলো রাষ্ট্র ও নাগরিক। সেহেতু রাষ্ট্র ও নাগরিক সমাজেরই একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাই বলা যায়, পৌরনীতি ও সুশাসন এবং সমাজবিজ্ঞান পরস্পর সম্পর্কযুক্ত।
৪. পৌরনীতি ও সুশাসন সমাজবিজ্ঞানের শাখা পৌরনীতি ও সুশাসন কীভাবে উত্তম শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নাগরিক জীবনকে উন্নত করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করে। আর সমাজবিজ্ঞান সমাজবদ্ধ মানুষের সার্বিক দিক নিয়ে আলোচনা করে। এ কারণে পৌরনীতি ও সুশাসনকে সমাজবিজ্ঞানের শাখা বলা যায়।
বৈসাদৃশ্য: পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে সমাজবিজ্ঞানের উপর্যুক্ত সাদৃশ্য থাকলেও এদের মধ্যে কিছু কিছু বৈসাদৃশ্য রয়েছে। যেমন-
১. উৎপত্তিগত পার্থক্য: সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি হয়েছে সমাজজীবনের শুরু থেকে। আর পৌরনীতির উৎপত্তি হয়েছে নাগরিকের রাজনৈতিক জীবনের সূত্রপাত থেকে।
২. পরিধিগত পার্থক্য সমাজবিজ্ঞান সমাজের সার্বিক দিক নিয়ে আলোচনা করে। কিন্তু পৌরনীতি ও সুশাসন কেবল নাগরিক ও নাগরিকতার সাথে জড়িত বিষয় নিয়েই আলোচনা করে। এ কারণে বলা হয় সমাজবিজ্ঞান হচ্ছে সমগ্র আর পৌরনীতি ও সুশাসন হচ্ছে এর একটি শাখা।
৩. দৃষ্টিভঙ্গিগত পার্থক্য পৌরনীতি মানুষকে রাজনৈতিক জীব হিসেবে গ্রহণ করেই আলোচনা শুরু করে। আর সমাজবিজ্ঞান মানুষ কীভাবে ও কেন সামাজিক ও রাজনৈতিক জীব তার ব্যাখ্যা দিয়ে থাকে।
৪. আলোচ্য বিষয়ের পার্থক্য পৌরনীতি ও সুশাসন এবং সমাজবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। পৌরনীতি ও সুশাসনের আলোচনায় কেবল সমাজের সচেতন ও সংগঠিত দিকই স্থান লাভ করে কিন্তু সমাজবিজ্ঞানের আলোচনায় সমাজের সংগঠিত-অসংগঠিত, সচেতন-অসচেতন উভয় দিকই স্থান লাভ করে।
উল্লিখিত পার্থক্য থাকলেও পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে সমাজবিজ্ঞানের সম্পর্ক মধুর, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নয়। এদের সম্পর্ক এতই ঘনিষ্ঠ যে, একজন পৌরবিজ্ঞানী ও একজন সমাজবিজ্ঞানী একে অপরের নিকট থেকে রাষ্ট্র ও সমাজ সম্পর্কে নানা ধরনের তত্ত্ব ও তথ্য গ্রহণ করে থাকেন। এজন্যই এরা একে অপরের সহায়ক। অধ্যাপক গিডিংস তাই বলেছেন, "যাদের সমাজবিজ্ঞানের মূল সূত্রগুলো সম্পর্কে জ্ঞান নেই, তাদের রাষ্ট্রীয় তত্ত্ব সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া নিউটনের গতিতত্ত্ব (Theory of Velocity)-এর জ্ঞানশূন্য ব্যক্তিকে জ্যোতির্বিদ্যা শিক্ষা দেওয়ার মতোই।"
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ