• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি

পৌরনীতি ও সুশাসন পরিচিতি

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

পৌরনীতি ও সুশাসন পরিচিতি

পৌরনীতি ও সুশাসন এবং নীতিশাস্ত্র (Civics, Good Governance and Ethics)

পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে নীতিশাস্ত্রের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। মানুষের আচরণের ন্যায়-অন্যায়, ভালোমন্দ, উচিত-অনুচিত নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা করাই নীতিশাস্ত্রের কাজ। অন্যদিকে, নাগরিক ও জাতীয় রাষ্ট্রে রাজনৈতিক দিক নিয়ে আলোচনা করা পৌরনীতি ও সুশাসনের কাজ। উভয়ের উদ্দেশ্যই মানবকল্যাণ। তাই পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে নীতিশাস্ত্রের সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ।

সাদৃশ্য: পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে নীতিশাস্ত্রের নিম্নলিখিত সাদৃশ্য বিদ্যমান-

১. অভিন্ন লক্ষ্য: পৌরনীতি ও সুশাসনের মূল উদ্দেশ্য নাগরিককে সুনাগরিক হওয়ার শিক্ষাদান করা। আর নীতিশাস্ত্র কোনটা সৎ, কোনটা অসৎ, কোনটা ভালো, কোনটা মন্দ প্রভৃতির শিক্ষা দান করে- যা সুনাগরিক সৃষ্টির জন্য প্রয়োজন। তাই উদ্দেশ্যগত দিক থেকে পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে নীতিশাস্ত্রের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়।

২. মূলগত সাদৃশ্য: মানব সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে রাষ্ট্র পূর্ণরূপ লাভ করে এবং অতীতের অনেক ন্যায়নীতিই আইনে পরিণত হয়। এ কারণেই মনে করা হয় আইন, রাষ্ট্র প্রভৃতির ভিত্তিমূল হচ্ছে ন্যায়নীতি। প্রাচীন পণ্ডিতগণ তাই পৌরনীতিকে নীতিশাস্ত্রের শাখা বলেই মনে করতেন।

৩. বিষয়বস্তুগত সাদৃশ্য পৌরনীতি ও সুশাসন মানুষের আচার-আচরণ, কার্যাবলি ইত্যাদি বিশ্লেষণের মাধ্যমে সুনাগরিকতা ও সুশাসনের শিক্ষা দেয়। তেমনি নীতিশাস্ত্রও মানুষের আচার-আচরণ, কাজকর্ম মূল্যবোধের মানদণ্ডে বিচার করে।

৪. পরস্পর পরিপূরক পৌরনীতি ও সুশাসন নীতিশাস্ত্র একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে। নাগরিকদের উন্নত জীবনের জন্য নীতিশাস্ত্রের শিক্ষা প্রয়োজন। অন্যদিকে নৈতিকতার মানদণ্ডে উত্তীর্ণ আদর্শ ও লক্ষ্যসমূহ আইনে পরিণত হয়। এভাবে উভয় শাস্ত্র একে অপরের পরিপূরক হিসেবে মানবকল্যাণ সাধন করে। এ ব্যাপারে ফকস যথার্থই বলেছেন, "ন্যায়নীতির দিক থেকে যা অন্যায়, রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে তা ন্যায় বা সঠিক। কতা ন্যায় হতে পারে না।" (What is morally wrong can never be politically right.)

বৈসাদৃশ্য: পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে নীতিশাস্ত্রের কিছু বৈসাদৃশ্য রয়েছে। নিচে তা উল্লেখ করা হলো:

১. পরিধিগত পার্থক্য পৌরনীতি ও সুশাসন অপেক্ষা নীতিশাস্ত্রের পরিধি ব্যাপক। কেননা নীতিশাস্ত্র মানুষের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক উভয় দিকের আচরণ বিশ্লেষণ করে। কিন্তু পৌরনীতি ও সুশাসন কোনো নাগরিকের শুধু বাহ্যিক আচরণ নিয়ে আলোচনা করে।

২. বাধ্যবাধকতার পার্থক্য: রাষ্ট্রীয় আইন মান্য করা নাগরিকের জন্য বাধ্যতামূলক (Obligatory)। কেননা এ আইন ভঙ্গ করলে শাস্তি পেতে হয়। কিন্তু নৈতিক আইন (Ethical law) বাধ্যতামূলকও নয় এবং অমান্য করলে শাস্তিও পেতে হয় না।

৩. ভিত্তির ক্ষেত্রে: পৌরনীতি ও সুশাসনের ভিত্তি হলো রাজনৈতিক। নৈতিকতার স্থান এখানে সুদৃঢ় নয়। অন্যদিকে নীতিশাস্ত্র সামাজিক সমর্থনের উপর প্রতিষ্ঠিত। পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে নীতিশাস্ত্রের উল্লিখিত পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও উভয়ের গভীর সম্পর্ককে অস্বীকার করার উপায় নেই। বর্তমানে এ দুটি শাস্ত্র আলাদা হলেও সম্পর্কহীন নয়। উভয় শাস্ত্রই মানুষকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কাজ করে।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ