- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
পৌরনীতি ও সুশাসন পরিচিতি
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
পৌরনীতি ও সুশাসন পরিচিতি
পৌরনীতি ও সুশাসন এবং ইতিহাস (Civics, Good Governance and History)
পৌরনীতি ও ইতিহাস উভয় শাস্ত্রই সামাজিক বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত। তাই এদের সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। নিচে পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে ইতিহাসের সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য আলোচনা করা হলো:
সাদৃশ্য: পৌরনীতিতে নাগরিকের জীবনকে উন্নত করার জন্য সুশাসনের যেমন প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, তেমনি ইতিহাসের আলোচনা ছাড়া রাষ্ট্রের সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। তাই পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে ইতিহাসের সম্পর্ক গভীর। নিচে এদের সাদৃশ্যগুলো দেওয়া হলো:
১. পারস্পরিক ঘনিষ্ঠতা পৌরনীতির জ্ঞান ছাড়া ইতিহাস যেমন অর্থহীন তেমনি ইতিহাসের তথ্য ছাড়া পৌরনীতির আলোচনাও অর্থহীন। এ কারণেই জন সিলি (Seely) বলেছেন, "History without political science has not fruit and political science without history has no root." অর্থাৎ, পৌরনীতি ব্যতীত ইতিহাস মূল্যহীন, আর ইতিহাস ব্যতীত পৌরনীতি ভিত্তিহীন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ডব্লিউ, এফ, উইলোবি (W. F. Willoughby)-এর মতে, "ইতিহাস রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে গভীরতা দান করে।"
২. পারস্পরিক সহযোগিতা ইতিহাস অতীতের ঘটনাবলি, আন্দোলন, বিপ্লব সম্পর্কে আলোচনা করে এবং রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের বিবর্তন (Evolution) ও তত্ত্বসমূহ আলোচনা করে। আর যখন বিভিন্ন ঘটনাবলি ও ধারণাসমূহ পৌরনীতিতে আলোচনা করা হয়, তখন তাদের ঐতিহাসিক বিকাশ ধারাও বিবেচনা করতে হয়। এ কারণে বলা হয় ইতিহাস পৌরনীতির গবেষণাগার। নাগরিকের অতীতের ঘটনাবলি যেমন বর্তমানে ইতিহাস, তেমনি বর্তমানের ঘটনাবলিও ভবিষ্যতে ইতিহাসে পরিণত হবে। ফরাসি বিপ্লব, রুশ বিপ্লব, আমেরিকার স্বাধীনতা সংগ্রাম প্রভৃতি কোন আর্থ-সামাজিক পরিবেশে সংঘটিত হয়েছে, ইতিহাস তা জানতে সাহায্য করে।
৩. পারস্পরিক নির্ভরশীলতা: ঐতিহাসিক তথ্য প্রমাণ ছাড়া যেমন পৌরনীতির আলোচনা সম্পূর্ণ হয় না, তেমনি পৌরনীতির বিষয়বস্তুর আলোকে পর্যালোচনা না হলে ইতিহাসের ঘটনা পরম্পরার সাথে যোগসূত্র আবিষ্কার করাও দুষ্কর হয়ে পড়ে। এ কারণেই লর্ড অ্যাক্টন (Lord Acton) বলেছেন, "ইতিহাসের স্রোতধারায় বালুকারাশির মধ্যে স্বর্ণ রেণুর মতো রাজনীতি বিজ্ঞান সঞ্চিত হয়ে উঠেছে।"
৪. একে অপরের পরিপূরক পৌরনীতি ও সুশাসন এবং ইতিহাস একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে। ঐতিহাসিক তথ্য ও সাক্ষ্য প্রমাণ ব্যতীত পৌরনীতি ও সুশাসনের আলোচনা সম্পূর্ণ হয় না। তেমনি রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে পর্যালোচিত না হলে ইতিহাসের আলোচনা নিরর্থক হয়ে পড়ে। তাই অধ্যাপক সিলি বলেন, "ইতিহাস ব্যতীত পৌরনীতি ভিত্তিহীন এবং পৌরনীতি ব্যতীত ইতিহাস মূল্যহীন।"
৫. একে অপরকে পূর্ণতা দান করে পৌরনীতি ও সুশাসন এবং ইতিহাস একে অপরকে পূর্ণতা দান করে। ইতিহাস প্রদত্ত তথ্য, ঘটনাবলির দ্বারা যেমন পৌরনীতি ও সুশাসন পূর্ণতা লাভ করে। ঠিক তেমনি পৌরনীতির জ্ঞান দ্বারা ইতিহাসও সমৃদ্ধি লাভ করে।
বৈসাদৃশ্য: পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে ইতিহাসের গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান থাকলেও উভয়ের মধ্যে নিম্নলিখিত পার্থক্য লক্ষ করা যায়:
১. বিষয়বস্তুগত পার্থক্য ইতিহাসের আলোচ্য বিষয়বস্তু পৌরনীতি অপেক্ষা ব্যাপক। কেননা ইতিহাস মানবজীবনের সকল দিকেরই অতীত সম্পর্কে আলোচনা করে। কিন্তু পৌরনীতি কেবল নাগরিকের জীবনকে কেন্দ্র করে যে ঘটনাবলি সেগুলোকে নিয়ে আলোচনা করে। পাশাপাশি সুশাসন কেবল একটি রাষ্ট্রের উত্তম শাসনব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করে।
২. পদ্ধতিগত পার্থক্য পৌরনীতি ও সুশাসনের আলোচনা মূলত তত্ত্ব অনুসন্ধানমূলক। এটি তুলনামূলক পদ্ধতিতে করা হয়। কিন্তু ইতিহাসের আলোচনার পদ্ধতি প্রধানত তথ্য ও বর্ণনামূলক।
৩. পৌরনীতির সবকিছুই ইতিহাসের অন্তর্ভুক্ত নয় পৌরনীতির সব আলোচনা ইতিহাসে নেই। যেমন- রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত অনেক কাল্পনিক মতবাদ ও সূত্র ইতিহাসের আলোচ্য বিষয় নয়।
৪. পরিধিগত: ইতিহাসের আলোচ্য বিষয়বস্তু পৌরনীতি ও সুশাসন অপেক্ষা ব্যাপক। অতীত ও বর্তমানের রাজনৈতিক ঘটনাবলির পাশাপাশি ঐ সময়ের শিল্প, 'সাহিত্য, সংস্কৃতি, সভ্যতা, বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি ইত্যাদি বিষয় নিয়েও আলোচনা করে। কিন্তু পৌরনীতি ও সুশাসন এত নানাবিধ বিষয় নিয়ে আলোচনা করে না।ক ও
৫. অতীত ও ভবিষ্যতের ওপর প্রাধান্য ইতিহাস অতীতের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক দিকের খুঁটিনাটি বিষয়সমূহ আলোচনা করে। অন্যদিকে, পৌরনীতির আলোচ্য বিষয় হলো নাগরিক জীবনের অতীত দিকসমূহের আলোকে ভবিষ্যৎ নাগরিক জীবনের করণীয় নিয়ে নির্দেশনা প্রদান করা এক বাতায়ন মে উপরিউক্ত পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও উভয় শাস্ত্রই পরস্পরের পরিপূরক ও সহায়ক। এরা একে অপরের সহযোগিতায় পরিপূর্ণতা লাভ করে। একটি ব্যতীত অপরটির আলোচনা মূল্যহীন।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ