• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
  • ইংরেজ উপনিবেশিক শাসন : কোম্পানি আমল
ইংরেজ উপনিবেশিক শাসন : কোম্পানি আমল

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

ইংরেজ উপনিবেশিক শাসন : কোম্পানি আমল

রেগুলেটিং অ্যাক্ট (১৭৭৩ খ্রি.) (Regulating (Regulating Act-1773 AD)

ভারতীয় উপমহাদেশে বাণিজ্য করার লক্ষ্যে ১৬০০ খ্রিষ্টাব্দে ইংল্যান্ডে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি গঠিত হয়। ২৪ জন পরিচালকের মধ্যে ইংল্যান্ডের রানি প্রথম এলিজাবেথও ছিলেন। পরবর্তীতে এই কোম্পানির প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে 'মার্চেন্টস অব লন্ডন' নামে আর একটি কোম্পানি ইংল্যান্ডে সৃষ্টি হয়। তারাও ভারতবর্ষে ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে আগমন করে। শীঘ্রই একই দেশের দুটি কোম্পানির মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিলে ১৭০২ খ্রিষ্টাব্দে দুটি কোম্পানি একত্রিত হয়ে ইউনাইটেড ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নামে পরিচিতি লাভ করে। এটাই ভারতবর্ষের বহু আলোচিত ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি।

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হওয়ায় এর শাসনকার্য পরিচালনা করত ডাইরেক্টর সভা। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে ভারতবর্ষে কোম্পানির সাম্রাজ্য বৃদ্ধি পায়। ফলে শাসন ক্ষেত্রে অনেক জটিলতা দেখা দেয়। বিশেষ করে ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের পর অবস্থা আরও প্রকট হয়। ভারতবর্ষে ব্রিটিশদের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখতে তদানীন্তন ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী লর্ড নর্থ Regulating Act-1773 (নিয়ন্ত্রক আইন) প্রণয়ন করেন। এ আইনের মেয়াদ ছিল ২০ বছর অর্থাৎ ১৭৯৩ সালে এই আইনের মেয়াদ শেষ হবে। এ আইন ভারতবর্ষে শাসনতান্ত্রিক সমস্যা সমাধানে এক অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। এ আইনের প্রধান ধারাসমূহ-

১। এ আইন বলে ব্রিটিশ ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির বোর্ড অব ডাইরেক্টরের সদস্য সংখ্যা হ্রাস করে ২৪ জন নির্ধারণ করা হয় এবং অংশীদারগণের ভোটদানের ভিত্তিতে ডাইরেক্টরগণ মাত্র চার বছরের জন্য নির্বাচিত হবেন।

২। কোম্পানির শাসন এবং রাজস্ব সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় ব্রিটিশ সরকারকে অভিহিত করতে হতো।

৩। এই অ্যাক্ট বলে গভর্নরকে গভর্নর জেনারেল আখ্যায়িত করা হয় এবং চার জন সদস্য নিয়ে তার শাসন পরিষদ গঠিত হয়। গভর্নর জেনারেল ও পরিষদের সদস্যগণ ডাইরেক্টর সভার সুপারিশক্রমে ইংল্যান্ডের রাজা বা রানি কর্তৃক নিযুক্ত হন।

৪। বোম্বাই ও মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির ওপর গভর্নর জেনারেল ও কাউন্সিলকে যুদ্ধ ঘোষণা বা শান্তি স্থাপনের ব্যাপারে ক্ষমতা দেওয়া হয়।

৫। একজন প্রধান বিচারপতি এবং অপর তিনজন সাধারণ বিচারপতি নিয়ে ফোর্ট উইলিয়ামে একটি সুপ্রিম কোর্ট প্রতিষ্ঠিত হয়।

এই নিয়ামক আইন অনুযায়ী ওয়ারেন হেস্টিংস বাংলার প্রথম গভর্নর জেনারেল নিযুক্ত হন এবং তার শাসন পরিষদের ৪ জন সদস্য নিযুক্ত হন যথাক্রমে (১) ক্লেভারিং (২) কর্নেল মনসন (৩) রিচার্ড বারওয়েল এবং (৪) স্যার ফিল্পি ফ্রান্সিস। প্রধান বিচারপতি নিযুক্ত হন হেস্টিংসের বাল্যবন্ধু স্যার এলিজা ইম্পে। ১৭৭৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রণীত রেগুলেটিং অ্যাক্ট বা নিয়ামক আইন ভারতবর্ষের শাসনতান্ত্রিক সমস্যা সমাধানে এক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। এই আইন মূলত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ও ভারতীয়দের মধ্যে একটি আপসনামা হিসেবে পরিচিত। রেগুলিটিং অ্যাক্ট দ্বারা আইন, বিচার ও কার্যনির্বাহক ক্ষমতাগুলো সুনির্দিষ্ট করা হয় এবং একটি নতুন প্রশাসনিক ব্যবস্থার ভিত্তি রচনা করা হয়।

রেগুলেটিং অ্যাক্ট-এর ত্রুটিসমূহ: ভারতবর্ষে ব্রিটিশদের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখতে ১৭৭৩ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার রেগুলেটিং অ্যাক্ট-এর প্রবর্তন করেন। এ রেগুলেটিং অ্যাক্ট ত্রুটিমুক্ত ছিল না। ১৭৭৩ খ্রিষ্টাব্দের রেগুলেটিং অ্যাক্ট-এর প্রধান ত্রুটিগুলো তুলে ধরা হলো-

১। এই আইন গভর্নর জেনারেল ও কাউন্সিলের বা সদস্যর ক্ষমতা সুনির্দিষ্ট করে দেয়নি। ফলে উভয়ের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়।

২। গভর্নর জেনারেল ও সদস্য মাদ্রাজ ও বোম্বাই প্রেসিডেন্সিদ্বয়ের ওপর কিরূপ ক্ষমতা প্রয়োগ করবে তার কোনোরূপ রেখা ছিল না।

৩। এ আইনে গভর্নর জেনারেল এবং সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির ক্ষমতা সুনির্দিষ্ট না থাকায় পরবর্তীকালে উভয়ের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব শুরু হয়।

৪। এ আইনে ভারতে ইংরেজ নাগরিকদের বিচার করার জন্য সুপ্রিম কোর্ট স্থাপিত হয়। কিন্তু পরবর্তীকালে সুপ্রিম কোর্ট দেওয়ানি ও শাসন সংক্রান্ত ও দেশীয় নাগরিকদের বিচারে হস্তক্ষেপ শুরু করলে বহু জটিলতা সৃষ্টি হয়।

এসব দোষ ত্রুটি পরবর্তীকালে ১৭৮১, ১৭৮৪ ও ১৭৮৬ খ্রিষ্টাব্দে আইনের দ্বারা সংশোধন করা হয়। ১৭৮৪ খ্রিষ্টাব্দে সংশোধিত আইন পিটের ভারত শাসন আইন নামে পরিচিত। তৎকালীন ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী উইলিয়াম পিট কর্তৃক প্রণয়নকৃত এ আইনে ব্রিটিশ মন্ত্রিসভার একজন মন্ত্রীকে ভারত নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের সভাপতি নিযুক্ত করা হয়।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ