• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
  • ইংরেজ উপনিবেশিক শাসন : কোম্পানি আমল
ইংরেজ উপনিবেশিক শাসন : কোম্পানি আমল

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

ইংরেজ উপনিবেশিক শাসন : কোম্পানি আমল

পিটের ভারত শাসন আইন-১৭৮৪ খ্রিষ্টাব্দ (Pitts Indian Government Act-1784 AD)

১৭৭৩ খ্রিষ্টাব্দে রেগুলেটিং আইনের দোষ-ত্রুটি সংশোধনের জন্য ১৭৮৪ খ্রিষ্টাব্দে ইংল্যান্ডের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী উইলিয়াম পিট ভারতীয়দের জন্য একটি আইন প্রণয়ন করেন। যা ১৭৮৪ খ্রিষ্টাব্দে পিটের ভারত শাসন আইন নামে খ্যাত। রেগুলেটিং আইন ১১ বছর বলবৎ থাকার পর উইলিয়াম পিট এই আইন প্রণয়ন করলেন। এ আইন দ্বারাই হেস্টিংসকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির গভর্নরের পথ থেকে (১৭৭২ নিয়োগ) গভর্নর জেনারেল পদে উন্নীত করা হয়। রেগুলেটিং অ্যাক্‌ট ১৭৭৩ অনুযায়ী কোম্পানির ক্ষমতা অনেক বেড়ে যায়। হেস্টিংস ভারতবর্ষে কোনো কিছু তোয়াক্কা না করে শাসনকার্য পরিচালনা করেন। যা ইংল্যান্ড পার্লামেন্ট সমর্থন করতে পারেনি। রেগুলেটিং বা নিয়ামক আইনের ত্রুটি-বিচ্যুতি ইংল্যান্ডের সচেতন জনসাধারণের চোখে পড়ে। তাছাড়া ভারতীয় উপমহাদেশে কোম্পানি প্রশাসনিক দুর্নীতির কথা হেস্টিংস নিজেই স্বীকার করেছেন। এ সকল কারণে রেগুলেটিং আইনের ত্রুটিগুলো সংশোধন করে কোম্পানির ওপর ব্রিটিশ সরকারের ক্ষমতা সুস্পষ্ট এবং সুদৃঢ় করার জন্য ১৭৮৪ খ্রিষ্টাব্দে পিটের ভারত শাসন আইন প্রণীত হয়।

পিটের ভারত শাসন আইনের ধারাসমূহ: ১৭৮৪ খ্রিষ্টাব্দে উইলিয়াম পিট কর্তৃক প্রণয়নকৃত ভারত শাসন আইনের প্রধান ধারাগুলো তুলে ধরা হলো-

১) এই আইন দ্বারা ছয়জন প্রিভি কাউন্সিলারকে নিয়ে গঠিত (বোর্ড অব কন্ট্রোল) নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের ওপর কোম্পানির সামরিক ও বেসামরিক ক্ষমতা অর্পণ করা হয়। ব্রিটিশ মন্ত্রিসভার একজন মন্ত্রীকে নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের সভাপতি নিযুক্ত করা হয়। মূলত তিনি ভারত বিষয়ক মন্ত্রীতে পরিণত হন।

২) এ আইনে কোম্পানির তিনজন ডাইরেক্টর দ্বারা গঠিত একটি সিক্রেট কমিটির মাধ্যমে বোর্ড অব কন্ট্রোলের গোপন নির্দেশ ও সিদ্ধান্ত কোম্পানির ভারতস্থিত কর্মচারীদের নিকট প্রেরণ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

৩) এ আইনের দ্বারা বোর্ড অব কন্ট্রোল ও সিক্রেট কমিটির সূক্ষ্ম সিদ্ধান্ত পরিবর্তন বা সংশোধন করার ক্ষমতা থেকে অংশীদার সভাকে বঞ্চিত করা হয়।

৪) এ ধারায় উল্লেখ করা হয়, ভারতের শাসনকার্যে গভর্নর জেনারেলকে একজন সেনাপতি ও দুজন কাউন্সিলার করবে।

৫) গভর্নর জেনারেলকে ভারতের সকল প্রেসিডেন্সির কার্যকলাপ তদারক ও নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা প্রদান করা হয়। ফলে মুম্বাই ও মাদ্রাজ সরকারের ওপর বাংলা প্রেসিডেন্সির নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হয়। কেননা গভর্নর জেনারেল ছিলেন। মূলত বাংলা প্রেসিডেন্সির প্রধান। ফলে ভারতের সকল প্রেসিডেন্সিতে একই রকম প্রশাসনিক নিয়ম-কানুন গড়ে ওঠে। ১৭৮৬ খ্রিষ্টাব্দে একটি অতিরিক্ত আইন প্রণয়ন করে বিশেষ ক্ষেত্রে কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অগ্রাহ্য করার এবং প্রধান সেনাপতির পদ গ্রহণ করার ক্ষমতা গভর্নর জেনারেলকে প্রদান করা হয়েছিল।

৬) পিটের ভারত শাসন আইনে এ ঘোষণাও বিধিবদ্ধ করা হয় যে, "রাজ্য জয় ও সাম্রাজ্য বিস্তার ইংল্যান্ডের জাতীয় মর্যাদা ও নীতির বহির্ভূত।"

১৮৫৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত পিটের ভারত শাসন আইন কার্যকর থাকে। তৎকালীন ইংল্যান্ড ও ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতির মোকাবিলায় এ আইনের কার্যকারিতা অনস্বীকার্য। এ আইনের দ্বারা রেগুলেটিং আইনের ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো সংশোধিত করে গভর্নর জেনারেলের মর্যাদা ও ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয় এবং মাদ্রাজ ও মুম্বাই প্রেসিডেন্সি দুটির ওপর কলকাতা প্রেসিডেন্সির কর্তৃত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত করা হয়। ভারতীয় সাম্রাজ্য সম্পর্কে কোম্পানির সার্বভৌম ক্ষমতার অবসান ঘটিয়ে তা ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ওপর ন্যস্ত করা হয়।

পিটের ভারত শাসন আইনের ত্রুটি: উইলিয়াম পিটের ভারত শাসন আইন একেবারে ত্রুটিমুক্ত ছিল না। এ আইনের ত্রুটির মধ্যে-প্রথমত, ভারতীয় সাম্রাজ্য পার্লামেন্টের সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী হলেও ১৮১৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত কোম্পানি তার স্বাধীন বাণিজ্য নীতি চালিয়ে যায় এবং দ্বৈতশাসন নীতি প্রবর্তিত হয়।

দ্বিতীয়ত, কোম্পানি ও বোর্ডের মধ্যে ক্ষমতার ভাগাভাগিতে কোম্পানি ভারতের শাসনকার্য পরিচালনায় উদাসীন হয়ে পড়ে।

তৃতীয়ত, ডাইরেক্টর সভাকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা বোর্ড অব কন্ট্রোলকে দেওয়া হলেও প্রকৃতপক্ষে বোর্ড ব্রিটিশ মন্ত্রিসভার নিয়ন্ত্রণে ছিল। অপরপক্ষে ভারতের শাসন সংক্রান্ত ব্যাপারে ব্রিটিশ মন্ত্রিসভার কোনো দায়িত্ব ছিল না।

পিটের ভারত শাসন আইনের গুরুত্ব ভারতীয় উপমহাদেশের ক্ষমতা কোম্পানির নিকট থেকে ব্রিটিশ সরকার গ্রহণের আগ পর্যন্ত অর্থাৎ ১৮৫৮ পর্যন্ত পিটের ভারত শাসন আইনের কার্যকারিতা ছিল। তৎকালীন ইংল্যান্ড এবং ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় পিটের ভারত শাসন আইনের ভূমিকা অপরিসীম।

প্রথমত, এ আইনের দ্বারা ১৭৭৩ খ্রিষ্টাব্দে রেগুলেটিং আইনের ত্রুটি-বিচ্যুতি সংশোধন করা হয়।

দ্বিতীয়ত, গভর্নরকে গভর্নর জেনারেল পদে উন্নীত করে মর্যাদা ও ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়।

তৃতীয়ত, মাদ্রাজ ও মুম্বাই প্রেসিডেন্সি দুটির ওপর কলকাতা প্রেসিডেন্সির কর্তৃত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত করা হয়।

চতুর্থত, ব্রিটিশ মন্ত্রিসভায় একজন মন্ত্রীকে নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের সভাপতি নিযুক্ত করা হয়। তিনিই ভারত বিষয়ক মন্ত্রীতে পরিণত হন।

পঞ্চমত, এ আইন দ্বারা পর রাজ্য গ্রাস নীতি বাতিল করা হয়। ভারতীয় সাম্রাজ্য সম্পর্কে কোম্পানির সার্বভৌম ক্ষমতার অবসান ঘটিয়ে তা ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ওপর ন্যস্ত করা হয়।

ভারতীয় সাম্রাজ্য সম্পর্কে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী হলেও ১৮১৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত কোম্পানি স্বাধীনভাবেই বাণিজ্য নীতি চালিয়ে যান। কোম্পানি ও বোর্ডের মধ্যে ক্ষমতা ভাগাভাগিতে কোম্পানি ভারতের শাসনকার্য পরিচালনায় উদাসীন হয়ে পড়ে।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ