- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
- ইংরেজ উপনিবেশিক শাসন : কোম্পানি আমল
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
ইংরেজ উপনিবেশিক শাসন : কোম্পানি আমল
হেস্টিংসের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন
মারাঠা ও মহীশূর যুদ্ধের পর থেকে হেস্টিংস দারুন অর্থনৈতিক সংকটে পরেন। এ অবস্থায় যেকোনো অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জনে হেস্টিংস আত্মনিয়োগ করেন। যার কারণে তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ওঠে। এ সকল অভিযোগের মধ্যে-
১। ব্রিটিশ সৈন্য ভাড়ায় খাটানোর অভিযোগ অযোধ্যার নবাব সুজাউদ্দৌলার সাথে ৪০ লক্ষ টাকার চুক্তিতে ১৭৭৪ খ্রিষ্টাব্দে রোহিলা যুদ্ধে হেস্টিংস ব্রিটিশ সৈন্য ভাড়ায় খাটান। অর্থের বিনিময়ে ব্রিটিশ সৈন্য ভাড়ায় খাটানোর জন্য ব্রিটিশদের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়। এ কারণে হেস্টিংসের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনয়ন করা হয়। ঐতিহাসিকদের দৃষ্টিকোণ থেকে এটা ছিল হেস্টিংস-এর বিরাট ভুল।
২। রানি ভবানীর অভিযোগ ছিয়াত্তরের মন্বন্তর এবং ১৭৭৩ খ্রিষ্টাব্দে প্লাবনে ব্যাপক প্রাণহানী এবং ফসল বিনষ্টের ফলে রানি ভবানীর খাজনা দিতে বিলম্ব হয়। এ বিলম্বের কারণে হেস্টিংস তাকে জমিদারিচ্যুত করে জনৈক দুলাল রায়কে রাজশাহীর জমিদার নিযুক্ত করেন (১৭৭৪ খ্রি.)। ১৭৭৫ খ্রিষ্টাব্দে রানি ভবানী কলকাতা কাউন্সিলে অভিযোগ দাখিল করেন। অবশ্য পরে তাকে জমিদারি ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
৩। নন্দকুমারের ফাঁসি বৈধ-অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জন এবং পরিষদের অধিকাংশ সদস্যের অসন্তুষ্টির কারণে চারদিক থেকে হেস্টিংসের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আসতে থাকে। এ সকল অভিযোগের মধ্যে ১৭৭৫ খ্রিষ্টাব্দে মহারাজ নন্দকুমার কলিকাতা কাউন্সিলে এক পত্রে হেস্টিংসের বিরুদ্ধে মীর জাফরের স্ত্রী মুন্নী বেগমের নিকট থেকে ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগ আনয়ন করেন। পরিষদের সদস্যগণ নন্দকুমার কর্তৃক আনীত অভিযোগের তদন্ত দাবি করলে হেস্টিংস তা নাকচ করে দিয়ে পরিষদ ভেঙে দেন।
হেস্টিংসও আত্মরক্ষার জন্য পাল্টা নন্দকুমারের বিরুদ্ধে মোহনপ্রসাদ নামক ব্যক্তির দ্বারা সুপ্রিম কোর্টে জালিয়াতি অভিযোগ উত্থাপন করেন। সুপ্রিম কোর্টের বিচারে নন্দকুমারের ফাঁসি হয় (১৭৭৫ খ্রি.)।
হেস্টিংস কর্তৃক নন্দকুমারের ফাঁসি ব্রিটিশ ভারতের ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সূচনা করে। নন্দকুমারের বিচার নিয়ে নানা ধরনের সমালোচনা রয়েছে। কোনো কোনো মনীষীরা বলেছেন বিচার নিরপেক্ষ হয়েছে। আবার অনেকে বলেছেন বিচার কলঙ্কজনক হয়েছে। কলঙ্কজনক হয়েছে এইদিক থেকে যে, জালিয়াতির অপরাধে অপরাধী ব্যক্তিকে ইংল্যান্ডের আইনে ফাঁসির বিধান থাকলেও ভারতীয় আইনে এরূপ কোনো বিধান ছিল না। তারপরও রেগুলেটিং আইন মোতাবেক ভারতে যে সুপ্রিম কোর্ট স্থাপিত হয়েছিল তা শুধু ইংরেজ কর্মচারী অপরাধীদের বিচার করার জন্য। কোনো ভারতীয়দের বিচার করার জন্য নয়। সেদিক থেকে বিচার করলে সুপ্রিম কোট কর্তৃক নন্দকুমারের ফাঁসি যুক্তিসঙ্গত হয়নি।
৪। চৈৎ সিংহের প্রতি অবিচারের অভিযোগ মারাঠা ও মহীশূর যুদ্ধে কোম্পানির অনেক অর্থ নষ্ট হয়। ফলে কোম্পানি অর্থ সংকটে পতিত হয়। অর্থ সংকট দূর করতে হেস্টিংস হোক সেটা বৈধ কিংবা অবৈধ যেকোনো উপায় অবলম্বন করতে দ্বিধাবোধ করেননি। তিনি এক সন্ধির মাধ্যমে অযোধ্যার নবাবের নিকট থেকে বারাণসীকে পৃথক করে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন এবং চৈৎসিংহকে বারাণসীর জমিদার নিযুক্ত করেন। তখন থেকে চৈৎসিংহ কোম্পানিকে নিয়মিত বাৎসরিক কর প্রদান করত। কিন্তু হেস্টিংস তার কাছে নানা অজুহাতে অর্থ দাবি করেন। প্রথমে ফরাসি আক্রমণের মিথ্যা অযুহাতে ৫ লক্ষ টাকা গ্রহণ করেন। ২য় বারে জোর পূর্বক ২ লক্ষ টাকা এবং ২ হাজার অশ্ব দাবি করেন। অশ্ব প্রেরণে দেরি হলে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। পরে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে চৈৎ সিংহের আত্মীয় নারায়ণকে বার্ষিক ৪০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে বারাণসীর জমিদারি অর্পণ করেন। চৈৎ সিংহের প্রতি হেস্টিংসের এরূপ নির্মম ব্যবহার ও নিষ্ঠুরতা ব্রিটিশ ভারতের ইতিহাসে হেস্টিংসের চরিত্রকে ভীষণভাবে কলঙ্কিত করেছে।
৫। অযোধ্যার বেগমদের ওপর অত্যাচার সুজাউদ্দৌলার স্ত্রী ও আসফ উদ্দৌলার মাতা অযোধ্যার বেগম নামে পরিচিত ছিলেন। হেস্টিংস অযোধ্যায় একদল সৈন্য প্রেরণ করে বেগমের ওপর অত্যাচার চালিয়ে ৭৬ লক্ষ টাকা আদায়সহ জোরপূর্বক স্বর্ণ-অলঙ্কার ছিনিয়ে নেন। ঐতিহাসিক লয়ালের মতে, হেস্টিংস কর্তৃক চরম নিষ্ঠুরতার মাধ্যমে অযোধ্যার বেগমের নিকট অর্থ সংগ্রহ করা একটি নীচ প্রকৃতির কর্ম ব্যতীত আর কিছুই নয়।
এ সকল কর্ম দ্বারা বর্বরতার দিক থেকে হেস্টিংস ব্রিটিশ ভারতের ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সূচনা করেন।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ

