• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
  • ইংরেজ উপনিবেশিক শাসন : কোম্পানি আমল
ইংরেজ উপনিবেশিক শাসন : কোম্পানি আমল

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

ইংরেজ উপনিবেশিক শাসন : কোম্পানি আমল

লর্ড ওয়েলেসলি অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি (১৭৯৮-১৮০৫ খ্রি.) Lord Wellesly: Subsidary Alliance Policy (1798-1805 AD)

জনশোরের পর লর্ড ওয়েলেসলি ভারতবর্ষের গভর্নর জেনারেল নিযুক্ত হন (১৭৯৮ খ্রিষ্টাব্দ)। তিনি ছিলেন বিদ্বান, প্রতিভাবান এবং ঘোর সাম্রাজ্যবাদী শাসক। কোম্পানি শাসনের এক চরম দুর্যোগময় মুহূর্তে যখন মহীশূরে টিপু সুলতানের উত্থান, হায়দারাবাদের নিজামের যুদ্ধ প্রস্তুতি, মালব রাজাদের ইংরেজ বিরোধী কর্মসূচি, কাবুলের জামান শাহ ও ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়নের ভারত বিজয়ের পরিকল্পনা এবং কোম্পানির অর্থনৈতিক শোচনীয় অবস্থা তখন তিনি শাসনভার গ্রহণ করেন।

সাম্রাজ্যবাদী শাসক লর্ড ওয়েলেসলির নীতি ছিল ভারতবর্ষে ইংরেজ সাম্রাজ্য বিস্ত ার। এছাড়া তিনি মনে করতেন ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শক্তি, প্রতিপত্তি ও প্রভাব বিস্তার করতে পারলেই ভারতবাসীর কল্যাণ হবে। এ কারণে পূর্ববর্তী শাসক জনশোরের নিরপেক্ষ নীতি বর্জন করে দুটি সাম্রাজ্যবাদী নীতি গ্রহণ করেন-

১। অধীনতামূলক মিত্র নীতি

২। অগ্রসর নীতি।

লর্ড ওয়েলেসলির শাসনামলে ভারতবর্ষ

লর্ড ওয়েলেসলির শাসনামলে ভারতবর্ষ

অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি (Subsidary Alliance Policy)

ওয়েলেসলি ভারতবর্ষে পদার্পণ করে বিদেশিদের সাহায্য লাভে ভারতীয়দের ব্যকুলতা লক্ষ করেই এ নীতি গ্রহণ করেন। এ নীতিতে বলা হয়-

(ক) যে সকল ভারতীয় রাজন্যবর্গ অধীনতামূলক মিত্রতা নীতিতে আবদ্ধ হবেন তারা ব্রিটিশ সরকারের অনুমতি ব্যতীত অপর কোনো রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা কিংবা সন্ধি স্থাপন করতে পারবে না।

(খ) যারা এ নীতিতে আবদ্ধ হবেন তাদের রাজ্যে একদল ইংরেজ সৈন্য পালন করবে এবং তাদের ব্যয়ভার নির্বাহের জন্য নগদ অর্থ বা রাজ্যের এক অংশ ইংরেজদেরকে ছেড়ে দেবে।

(গ) মিত্রতাবদ্ধ দেশীয় রাজ্য হতে একমাত্র ইংরেজ ব্যতীত সকল ইউরোপীয়দের বিতাড়িত করতে হবে।

উপরিউক্ত শর্তাদির বিনিময়ে অধীনতামূলক মিত্রতায় আবদ্ধ দেশসমূহের নিরাপত্তার দায়িত্ব ব্রিটিশ সরকার বহন করবে।

এই মিত্রতা নীতিতে যারা স্বাক্ষর প্রদান করেন তারা হলেন হায়দ্রাবাদের নিজাম, অযোধ্যার নবাব, মারাঠা নেতা পেশোয়া দ্বিতীয় বাজিরাও, ভোসলা, সিন্ধিয়া, তাঞ্জোর, সুরাট এবং কর্নাটকের নবাবগণ। একমাত্র মহীশূরের টিপু সুলতান এই মিত্রতা নীতি ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করেন এবং সমর প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। লর্ড ওয়েলেসলির এ মিত্রতা নীতির নিরাপত্তার বিনিময়ে দেশীয় রাজাদের স্বাধীন রাজনৈতিক সত্তা হরণ করেন। এ মিত্রতা নীতি ভারতবর্ষে ইংরেজ সাম্রাজ্য বিস্তারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। হায়দ্রাবাদের দুর্বল নিজাম সর্বপ্রথম এ নীতি গ্রহণ করে ব্রিটিশ সরকারের নিকট রাজনৈতিক স্বাধীনতা জলাঞ্জলি দেন। এ নীতি গ্রহণ করতে রাজি না হওয়ায় ইংরেজ কোম্পানির সাথে মহীশূরের ব্যঘ্র নামে খ্যাত টিপু সুলতানের যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে টিপু সুলতানকে পরাজিত ও নিহত করে মহীশূর ইংরেজ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন। মারাঠা শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠলে একইভাবে মারাঠাদের পরাজিত করে মারাঠা সাম্রাজ্য ইংরেজরা অধিকার করে। ভারতবর্ষের বেশ কিছু ছোট ছোট রাজ্য যেমন- তাঞ্জোর, সুরাট ও কর্ণাট বল প্রয়োগ করে তাদের অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি গ্রহণে বাধ্য করেন। অযোধ্যার মতো বড় রাজ্যও ওয়েলেসলির অধীনতামূলক মিত্রতা নীতির নিকট মাথানত করতে বাধ্য হয়। এভাবে লর্ড ওয়েলেসলি একের পর এক ভারতের শক্তিশালী রাজ্যগুলোকে পদানত করে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য সুপ্রতিষ্ঠিত করেন।

ওয়েলেসলির অগ্রসরনীতি

তার অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি এবং অগ্রসর নীতি কোনো পৃথক নীতি নয়। একই উদ্দেশ্যে তিনি এ নীতি দুটি প্রয়োগ করেন। মূলত তিনি বড় শক্তিগুলোর প্রতি অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি এবং দেশীয় রাজ্যগুলোর প্রতি অগ্রসর নীতি প্রয়োগ করে ব্রিটিশ প্রাধান্য স্থাপনে সচেষ্ট হন। কুশাসনের অযুহাতে তিনি অযোধ্যা দখল করেন।

লর্ড ওয়েলেসলির সংস্কার

লর্ড ওয়েলেসলি রাজ্যগ্রাসের পাশাপাশি কিছু সংস্কারমূলক কাজও করেছিলেন। নিম্নে তাঁর উল্লেখযোগ্য সংষ্কার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

(ক) কৃষি সংস্কার: কৃষির উন্নতির জন্য বিশেষ করে মালাবারের যে অংশ ইংরেজদের অধিকারে আসে সেখানে তিনি জমি জরিপ কাজে ড. ফ্রান্সিস বুকাননকে নিযুক্ত করেন। এদেশের কৃষি ব্যবস্থা সম্পর্কেও তিনি বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেছেন যার ওপর নির্ভর করে পরবর্তী সময় ভারত সরকার কৃষি সম্পর্কে একটা সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করেছিল।

(খ) বিচার সংস্কার: বিচার ব্যবস্থায় তিনি বেশ কিছু সংস্কার করেন। যেমন- (১) কোর্ট ফি পুনরায় চালু করেন (২) আপিল করার নিয়মকানুনও আগের চেয়ে কঠিন করেন এবং সহকারী জজের সংখ্যা বৃদ্ধি করেন। দেউয়ানি মামলার ভার এদের হাতে ন্যস্ত করেন। (৩) রায়েতদের উচ্ছেদ করবার ও তাদেরকে গ্রেফতার করার ক্ষমতা ফিরিয়ে দিয়ে জমিদারদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করেন।

(গ) শিক্ষা সংস্কার: লর্ড ওয়েলেসলি ভারতবর্ষে ইংরেজ কর্মচারীদের শিক্ষার জন্য কলকাতায় ফোর্ট উইলিয়ামে একটি কলেজ স্থাপনের প্রস্তাব করেন। কিন্তু বোর্ড অব ডাইরেক্টরস-এর অনুমোদন না দেওয়ায় পরে তা ভারতীয় শিক্ষা কলেজে পরিণত হয়।

লর্ড ওয়েলেসলির কৃতিত্ব বিচার

ওয়েলেসলি ছিলেন ইংল্যান্ডের অভিজাত সম্প্রদায়ের চূড়ামনি এবং উচ্চ শিক্ষিত। ভারতবর্ষ সম্পর্কে তিনি সর্বাপেক্ষা বেশি জ্ঞান রাখতেন। তিনি যখন ভারতে আসেন তখন তার বয়স ছিল ৩৭ বছর। ওয়েলেসলি ছিলেন মনে-প্রাণে সাম্রাজ্যবাদী। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, ভারতে ব্রিটিশ শাসনের বিস্তার হলে ভারতবাসীর মঙ্গল হবে। এজন্য তিনি ভারতীয় রাজাদের হয় উচ্ছেদ, নতুবা ইংরেজদের নিয়ন্ত্রণে আনার প্রচেষ্টা গ্রহণ করেন। যা তার অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি প্রমাণ বহন করে। ছলেবলে কৌশলে ভারতে ব্রিটিশ শক্তিকে সর্বাত্মক করাই ছিল তার মূলনীতি। সে জন্য বলা হয় লর্ড ক্লাইভ ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন করেন, হেস্টিংস তা ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করেন, আর ওয়েলেসলি ভারতবর্ষে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করেন। অভ্যন্তরীণ শাসন ব্যপারেও তিনি মনোযোগী ছিলেন। তিনি ইউরোপীয়দের জন্য কলকাতায় "ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ" প্রতিষ্ঠা করেন। যুদ্ধ বিগ্রহের কারণে কোম্পানির আর্থিক মন্দা দেখা দিলে তিনি কর্মচারীদের ব্যক্তিগত বাণিজ্যে উৎসাহিত করেন। ১৮০৫ খ্রিষ্টাব্দে কোম্পানির বোর্ড অব ডাইরেক্টর তার এ ব্যবস্থা অনুমোদন না করে তাঁকে স্বদেশে ডেকে পাঠান।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ