- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
- ইংরেজ উপনিবেশিক শাসন : কোম্পানি আমল
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
ইংরেজ উপনিবেশিক শাসন : কোম্পানি আমল
লর্ড কর্ণওয়ালিশ (১৭৮৬-১৭৯৩ খ্রি.) Lord Cornwallis (1786-1793 AD)
১৭৮৪ খ্রিষ্টাব্দে ওয়ারেন হেস্টিংস পদত্যাগ করে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করলে স্যার জন ম্যকফারসন এক বছরের জন্য অস্থায়ীভাবে ভারতবর্ষে গভর্নর জেনারেল পদে নিযুক্ত হন। ১৭৮৬ খ্রিষ্টাব্দে লর্ড কর্ণওয়ালিশ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এবং পার্লামেন্ট কর্তৃক বিশেষ ক্ষমা নিয়ে ভারতবর্ষে আগমন করেন। ভারতবর্ষের তদানীন্তন রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে কর্ণওয়ালিশের ন্যায় একজন অভিজ্ঞ শাসকের প্রয়োজন ছিল। সম্ভ্রান্ত বশোদ্ভূত, আমেরিকা স্বাধীনতা যুদ্ধে সফল সেনাপতি এবং পিটের অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসেবে তার সুনাম ছিল। তার (১৭৮৬-১৭৯৩) শাসনকাল রাজ্য বিস্তার অপেক্ষা সংস্কারমূলক কাজের জন্য বিখ্যাত। বর্তমান ভারতের শাসনতন্ত্রের ভিত্তি অনেকটা তারই রচনা। লর্ড কর্ণওয়ালিশের সংস্কারের প্রধান লক্ষ্য ছিল ইংল্যান্ডের অনুকরণে ভারতের শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলা। কারণ তিনি ইংল্যান্ডের আইন ও শাসনব্যবস্থাকে শ্রেষ্ঠ ও আদর্শ মনে করতেন। তার সংস্কার কার্যাবলির মধ্যে- (১) কোম্পানির কর্মচারীদের দুর্নীতি দমন (২) বিচার বিভাগ সংস্কার (৩) বাণিজ্য সংস্কার এবং (৪) ভূমি সংস্কার ছিল অন্যতম।
কর্মচারীদের দুর্নীতি দমন
ভারতবর্ষে আগমন করে তিনি কোম্পানির কর্মচারীদের স্বজনপ্রীতি এবং দুর্নীতি দেখে ব্যথিত হন। কর্মচারীগণ কোম্পানির স্বার্থ ভুলে গিয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবসায়-বাণিজ্য পরিচালনা করত এবং অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জন করত। অবৈধ উপায়ে অর্থ যাতে উপার্জন করতে না হয় সে জন্য কর্ণওয়ালিশ তাদের বেতন বৃদ্ধি করলেন, কর্মচারীদের নিজ নিজ সম্পত্তির হিসাব কোম্পানির নিকট দাখিল করতে বাধ্য করলেন। শাসনব্যবস্থায় স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার জন্য 'Cornwallis Code' বা কর্ণওয়ালিশ বিধি প্রণয়ন করেন এবং ভারতীয় সিভিল সার্ভিসের গোড়াপত্তন করেন।
বিচার বিভাগ সংস্কার
বিচার বিভাগের সংস্কার কর্ণওয়ালিশের উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। তিনি বিচার বিভাগকে রাজস্ব বিভাগ থেকে পৃথক করেন। সদর নিজামৎ তত্ত্বাবধানে তিনি ৪টি (কলকাতা, মুর্শিদাবাদ, পাটনা ও ঢাকায়) ভ্রামাণ্য বিচারালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এসব বিচারালয়ে ফৌজদারি বিচারকার্য সম্পন্ন করা হতো। নিষ্ঠুর দণ্ডাদেশ বিলুপ্ত করলেও নরহত্যার অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তির উপযুক্ত শাস্তির বিধান রাখা হয়। ঐতিহাসিক পি.ই রবার্টস বলেন, "দেওয়ানি ও ফৌজদারি সংক্রান্ত বিচার সম্পর্কে হেস্টিংস যে সকল ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন কর্ণওয়ালিশ তা সম্পন্ন করেন"। কর্ণওয়ালিশ প্রদেশগুলোকে জেলায় এবং জেলাগুলোকে থানায় রূপান্তর করেন। প্রত্যেক থানায় একজন দারোগা নিযুক্ত করেন। জেলার সর্বময় কর্তা ছিলেন জেলা প্রশাসক। জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে পুলিশ বিভাগের ওপর কর্তৃত্ব করার ক্ষমতা অর্পণ করেন। ফলে ইতঃপূর্বে স্থানীয় জমিদারের ওপর শান্তি শৃঙ্খলার যে দায়িত্ব ছিল তা খর্ব হয়। তিনি ভারতে আধুনিক পুলিশ ব্যবস্থার গোড়াপত্তন করেন।
বাণিজ্য সংস্কার
বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে দুর্নীতি প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে কর্ণওয়ালিশ কালেক্টরগণকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ব্যবসায়-বাণিজ্যের অংশ গ্রহণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। কোম্পানির কালেক্টর ব্যতিরেকে কর্ণওয়ালিশ সরাসরি দেশীয় বণিকদের নিকট থেকে মালামাল সংগ্রহের ব্যবস্থা চালু করেন এবং দেশীয় বণিকদের ওপর যেকোনো অত্যাচারের প্রতি তিনি কড়া নজর রাখেন।
কর্ণওয়ালিশের কৃতিত্ব
লর্ড কর্ণওয়ালিশের চরিত্র বিশ্লেষণ করতে গিয়ে ঐতিহাসিক টনসন ও গ্যারেট বলেছেন, "কর্ণওয়ালিশ ছিলেন ভারতের সর্বপ্রথম সৎ ও সততার অটল গভর্নর। তিনি যে আদর্শ স্থাপন করে গেছেন তার ফলে পরবর্তীকালে অপর কোনো গভর্নর সেই সততার আদর্শ চ্যুত হতে সাহসী হননি।" তিনি আত্মপ্রত্যয়, কর্তব্যনিষ্ঠা, নম্রতা, ধৈর্য, অধ্যবসায়, উদারতা ও মিত্র সুলভ ব্যবহার প্রভৃতি গুণের অধিকারী ছিলেন। তিনি এদেশে ইংলিশ আইন-কানুন প্রবর্তন করেছিলেন। ঐতিহাসিক ডি.ডি মহাজন বলেছেন, "ওয়ারেন হেস্টিংস কর্তৃক যদি ভারতবর্ষে বেসামরিক শাসনব্যবস্থার গোড়াপত্তন করা হয়ে থাকে তাহলে লর্ড কর্ণওয়ালিশ কর্তৃক তার সৌধ নির্মিত হয়েছিল।"
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ

