- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
- ইংরেজ উপনিবেশিক শাসন: ব্রিটিশ আমল
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
ইংরেজ উপনিবেশিক শাসন: ব্রিটিশ আমল
লর্ড রিপন (১৮৮০-১৮৮৪ খ্রি.) Lord Ripon (1880-1884 AD.)
ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক প্রেরিত ভাইসরয়ের তালিকার মধ্যে লর্ড রিপন এবং লর্ড কার্জনের নাম ভারতবর্ষের ইতিহাসে এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে। ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী গ্লাডস্টোনের উদারনৈতিক দলের সদস্য লর্ড রিপন ১৮৮০ খ্রিষ্টাব্দে ভারতের ভাইসরয় নিযুক্ত হন। শান্তি, স্বাতন্ত্র্যবাদ ও স্বায়ত্তশাসনে বিশ্বাসী লর্ড রিপন ভারতবাসীর রাজনৈতিক আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। সাম্রাজ্যবাদী নীতির ঘোরবিরোধী লর্ড রিপন বেশ কিছু সংস্কারের জন্য ভারতীয় ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছেন। তাঁর সংস্কারগুলো হলো-
রাজনৈতিক সংস্কার: বেন্টিষ্কের সময় যে মহীশূর ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত হয়েছিল তা ১৮৮১ খ্রিষ্টাব্দে লর্ড রিপন পুনরায় মহীশূর রাজবংশের হাতে ছেড়ে দিয়ে উদারতার পরিচয় দেন এবং দ্বিতীয় আফগান যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটান।
সংবাদপত্রের স্বাধীনতা প্রদান: পূর্ববর্তী ভাইসরয় লর্ড লিটন কর্তৃক প্রবর্তিত সংবাদপত্র আইন (Vernacular Press Act) রদ করে দেশীয় ভাষায় সংবাদপত্র প্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা দেন।
শিক্ষা সংস্কার: শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নকল্পে তিনি 'হান্টার কমিশন' নিয়োগ করেন। এই কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থা সংস্কার করেন।
স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন আইন প্রণয়ন: লর্ড রিপনের আমলে অবিস্মরণীয় ঘটনা হলো Bengla Municipal Act নামক স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন আইন প্রণয়ন। এ আইন দ্বারা স্থানীয় জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত প্রতিনিধিরা স্থানীয় সরকার বিষয়ক দপ্তরগুলো পরিচালনার ক্ষমতা লাভ করেন।
প্রজাস্বত্ব আইনের ভিত্তি স্থাপন: তিনি বঙ্গ ও অযোধ্যার রায়তদের অবস্থার উন্নতিকল্পে প্রজাস্বত্ব আইনের পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন। পরবর্তীকালে এই আইনটি "Bengal Tenancy Act" নামে পাস হয়।
ফ্যাক্টরি আইন পাস: লর্ড রিপন শ্রমিকদের কল্যাণের জন্য ১৮৮১ খ্রিষ্টাব্দে ফ্যাক্টরি আইন পাস করে বিশেষ খ্যাতি অর্জন:: করেন। এই আইন দ্বারা শিল্প-শ্রমিকদের দিয়ে দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজ করার নিয়ম চালু হয়।
অবাধ বাণিজ্য নীতির প্রবর্তন: প্রজাসাধারণের উপকারার্থে তিনি লবণ ও অন্যান্য বাণিজ্য দ্রব্যের ওপর শুল্ক হ্রাস করেন এবং আয়কর রহিত করে অবাধ বাণিজ্য নীতির প্রবর্তন করেন। বেন্টিংকের সময় যে মহীশূর ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত হয়েছিল তা তিনি ১৮৮১ খ্রিষ্টাব্দে মহীশূর রাজবংশের হাতে ফিরিয়ে দেন।
ইলবার্ট বিল: ইতঃপূর্বে কোনো ভারতীয় ম্যাজিস্ট্রেট ইউরোপীয়দের বিচার করতে পারতেন না। বিচারক্ষেত্রে এ বৈষম্য। দূর করার লক্ষ্যে লর্ড রিপন আইন সদস্য মি. ইলবার্টকে একটি বিল প্রণয়ন করতে বলেন। ইলবার্ট যথারীতি একটি বিল প্রণয়ন করেন এবং বিলটি ১৮৮৩ খ্রিষ্টাব্দে পাস হয়। মি. ইলবার্টের নাম অনুযায়ী বিলটির নাম রাখা হয় 'ইলবার্ট বিল'। ইলবার্ট বিল প্রণয়ন করে ভারতীয় বিচারকদের ইউরোপীয় অপরাধীদের বিচার করার ক্ষমতা প্রদান করেন। অবশ্য পরে এই আইন কিছুটা সংশোধন করে ইউরোপীয় জুরি গ্রহণের ব্যবস্থা রাখা হয়।
গণতন্ত্রের পথপ্রদর্শক: লর্ড রিপন ইংল্যান্ডের রক্ষণশীল পরিবারের সদস্য হওয়া সত্ত্বেও তিনি গণতন্ত্রের প্রতি আস্থাশীল ছিলেন। তিনি ভারতীয় জনসাধারণের রাজনৈতিক আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতি পূর্ণ সহানুভূতিশীল ছিলেন। স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনে জনগণকে অংশগ্রহণে উৎসাহিত করে তিনি গণতন্ত্রের পথপ্রদর্শক হিসেবে ভারতীয়দের হৃদয়ে চির অম্লান হয়ে আছেন। তার শাসনামলে বিভিন্ন উন্নয়ন এবং সংস্কারমূলক কাজের জন্য তিনি আজও ভারতীয়দের কাছে স্মরণীয় হয়ে আছেন।
ভারতবর্ষের ইতিহাসে কোম্পানির শাসনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যেসব ব্রিটিশ শাসকগণ উন্নয়ন এবং সংস্কারমূলক কাজের জন্য ভারতীয় উপমহাদেশে স্মরণীয় হয়ে আছেন তাদের মধ্যে লর্ড রিপন অন্যতম।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ

