- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
- ইংরেজ উপনিবেশিক শাসন: ব্রিটিশ আমল
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
ইংরেজ উপনিবেশিক শাসন: ব্রিটিশ আমল
বঙ্গভঙ্গের কারণ
১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দের বঙ্গভঙ্গের পেছনে ব্রিটিশদের প্রশাসনিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণ বিদ্যমান ছিল। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
প্রশাসনিক কারণ: ১৮৫৪ খ্রিষ্টাব্দে বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা ও আসামের কিছু অংশ নিয়ে বাংলা প্রেসিডেন্ট গঠিত হয়েছিল; যার আয়তন ছিল ২ লক্ষ ৪৭ হাজার ৫ শত ৮৪ বর্গমাইল এবং লোকসংখ্যা ছিল ৮ কোটি ৫০ লক্ষ। এই বিশাল এলাকা এবং জনগোষ্ঠী একটি কেন্দ্র সুদূর কলকাতা থেকে একজন লে. গভর্নরের পক্ষে সুষ্ঠুভাবে শাসন করা সম্ভব নয়। তা স্পষ্ট হয়েছিল ১৮৬৬ খ্রিষ্টাব্দে উড়িষ্যার দুর্ভিক্ষে। প্রশাসনিক অসুবিধার কারণে সেখানে সুষ্ঠু ত্রাণ সাহায্য পাঠানো সম্ভব হয়নি। এখানে উল্লেখ্য যে, শাসন কার্যের সুবিধার জন্য ১৮৫৩ সালে চার্লস গ্রান্ট বাংলা প্রদেশের আয়তন হ্রাসের সুপারিশ করেছিল। তার ফলেই ১৮৭৪ খ্রিষ্টাব্দে বাংলা প্রেসিডেন্সি থেকে আসামকে বিচ্ছিন্ন করা হয়। এটা ছিল বঙ্গভঙ্গের প্রাথমিক পদক্ষেপ।
প্রশাসনিক সুবিধার যুক্তি দেখানো হলেও এর পেছনে আরও কারণ ছিল-
অর্থনৈতিক কারণ: ব্রিটিশ শাসনের গোড়া থেকেই পূর্ব বাংলা ছিল অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে অনুন্নত ও অবহেলিত। এ অঞ্চলে শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনৈতিক বিকাশ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার কোনো উন্নতি পূর্বে হয়নি। অন্যদিকে, কলকাতা ছিল ব্রিটিশ প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা উন্নয়নের মূল কেন্দ্র। বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান কলকাতাই সর্বদা প্রাধান্য লাভ করে। কৃষি ছিল পূর্ব বাংলার প্রধান অর্থনৈতিক ভিত্তি। কিন্তু এখানের কৃষি ও কৃষকদের উন্নতির জন্য কোনো সরকারি প্রচেষ্টা গৃহীত হয়নি। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি না হওয়ায় অর্থনৈতিক দুরবস্থা চিরস্থায়ী হবার উপক্রম হয়। শিক্ষা, যোগাযোগ, সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভৃতি ক্ষেত্রে পূর্ব ও পশ্চিম বাংলার মধ্যে পার্থক্য ব্রিটিশ সরকারের জানা ছিল। সে কারণে তারা বঙ্গভঙ্গের মাধ্যমে পূর্ব বাংলার উন্নতিসাধনের পক্ষে মত প্রকাশ করেন।
রাজনৈতিক কারণ: বঙ্গভঙ্গের মাধ্যমে রাজনৈতিক স্বার্থ সিদ্ধির জন্যই লর্ড কার্জন বাংলা ভাগ করেছিলেন। লর্ড কার্জন লক্ষ করেছিলেন যে, বাঙালি মধ্যবিত্ত ও বুদ্ধিজীবীরা ক্রমশ জাতীয়তাবাদ ও রাজনৈতিক সচেতন হয়ে উঠেছে। একথা ইতিহাস সম্মত যে, ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের পুরোভাগে ছিল বাংলা ও বাঙালি জাতি। এ সময় চরমপন্থী নেতাদের প্রভাবে বাংলায় ব্রিটিশ শাসনের চরম অবস্থা। সেক্ষেত্রে লর্ড কার্জন 'বিভেদ ও শাসন নীতি' প্রয়োগ করে বাংলাকে বিভক্ত করতে চাইলেন। কেননা বাংলাকে ভাগ করা হলে বাঙালিরা দুর্বল হয়ে পড়বে এবং কলকাতা হতে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্র সরে যাবে। অন্যদিকে, ঐক্যবদ্ধ বাংলা ছিল এক বিরাট শক্তি এবং সেক্ষেত্রে বাংলার হিন্দু-মুসলমান মিলিত ও ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ব্রিটিশ শাসনের জন্য নিরাপদ নয়। বঙ্গ বিভাগ হলে পূর্ব বাংলার মুসলমান ব্রিটিশদের প্রতি আনুগত্য হবে এবং ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন দুর্বল হবে।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ

