• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
  • ইংরেজ উপনিবেশিক শাসন: ব্রিটিশ আমল
ইংরেজ উপনিবেশিক শাসন: ব্রিটিশ আমল

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

ইংরেজ উপনিবেশিক শাসন: ব্রিটিশ আমল

স্বদেশি ও বয়কট আন্দোলন Swadeshi and Boycott Movement

বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাস থেকে 'বয়কট ও স্বদেশী' কর্মপন্থা নিয়ে পূর্ব বাংলায় যে আন্দোলন গড়ে ওঠে তাই স্বদেশী আন্দোলন নামে পরিচিত। এ আন্দোলন চারটি পর্যায়ে বিভক্ত ছিল। প্রথম পর্যায়, সভা-সমিতিতে বক্তৃতা ও প্রস্তাবের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানানো। দ্বিতীয় পর্যায়, বিলাতি পণ্যদ্রব্য বয়কট বা বর্জন। তৃতীয় পর্যায়, স্বদেশী পণ্যের উৎপাদন ও ব্যবহার। চতুর্থ পর্যায়, বিপ্লববাদ বা সন্ত্রাসবাদের মাধ্যমে দাবি মেনে নিতে বাধ্য করা।

বয়কট আন্দোলনের প্রধান লক্ষ্য ছিল- (১) বিলাতি পণ্য ও শিক্ষা বর্জন। (২) স্বদেশী পণ্য ব্যবহার ও স্বদেশী শিক্ষা গ্রহণ। কংগ্রেসের নেতৃত্বে পরিচালিত এ আন্দোলনে শুধু বিলাতি সামগ্রী বয়কটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রইল না, শহর ও গ্রাম-গঞ্জে প্রকাশ্যে বিলাতি দ্রব্য পুড়িয়ে ফেলা হয়। ইংরেজদের খাবার তৈরিতে উড়িষ্যার পাচকরা অস্বীকৃতি জানায়। এমনকি বিলাতি বস্ত্র, লবণ, চিনি প্রভৃতি সামগ্রী কোনো পূজা-পার্বণে ব্যবহার করলে পুরোহিতরা পূজা করতে অসম্মত হয়। এভাবে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশাজীবীদের অংশগ্রহণে বয়কট আন্দোলন বেগবান হয়। ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে সরকারি এক বিবরণে দেখা যায় যে, বিলাতি সাবান, লবণ, সুতি কাপড় ও সিগারেট আমদানি হ্রাস পায়। পাশাপাশি দেশীয় শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠে। স্বদেশী আন্দোলন শিক্ষা ক্ষেত্রে জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের রূপ নেয়। এ আন্দোলনে ছাত্রদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। বিলাতি পণ্য সংগ্রহ করে তা পুড়িয়ে ফেলা, দোকানে দোকানে পিকেটিং করে বিলাতি পণ্য ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ করা ইত্যাদি কর্মকাণ্ডে ছাত্ররা অংশগ্রহণ করে। বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে বহু ছাত্রকে বহিষ্কার করলে জাতীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা জরুরি হয়ে পড়ে। এ লক্ষ্যে রংপুর, দিনাজপুর, ময়মনসিংহ ও বরিশালে জাতীয় বিদ্যালয় স্থাপিত হয়।

১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে অরবিন্দ ঘোষকে অধ্যক্ষ করে জাতীয় কলেজ স্থাপিত করা হয়। স্বদেশী শিল্পের পুনরুজ্জীবন, নতুন শিল্প স্থাপন, কাপড়ের কল, ব্যাংক, বিমা, চিনি, লবণ ও ঔষধসহ বিভিন্ন কারখানা গড়ে ওঠে। ফলে বাংলায় এক ধুনিক শিল্পপতি শ্রেণির জন্ম হয়। এরা অধিকাংশ ছিল হিন্দু সম্প্রদায়। নব্য শিল্পপতিরা স্বদেশী আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যায়। ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দে মহাত্মা গান্ধী লিখেছেন, 'বঙ্গ-ভঙ্গের পরেই ভারতে প্রকৃত নবজাগরণ ঘটেছে'। এ আন্দোলনে জনমত সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন জেলায় সমিতি গঠন করা হয়। এসব সমিতির মধ্যে বরিশালের 'স্বদেশ বান্ধব', ফরিদপুরে 'ব্রতী', ময়মনসিংহে 'সাধনা' এবং ঢাকায় 'অনুশীলন' উল্লেখযোগ্য। কবি-সাহিত্যিকরাও এগিয়ে আসেন। এদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দ্বিজেন্দ্র লাল রায়, রজনীকান্ত উল্লেখযোগ্য। বরিশালের চারণ কবি মুকুন্দ দাস বাংলার গ্রামে গ্রামে ঘুরে 'পরোনা রেশমী চুড়ি, বঙ্গনারী, কভু হাতে আর পরো না'; রবীঠাকুর 'আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি' (পরবর্তীতে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত) প্রভৃতি কবিতা, গান গেয়ে জনগণের মধ্যে স্বদেশী আন্দোলনের পক্ষে তীব্র আবেগ সৃষ্টি করে। বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের শক্তিশালী সমর্থক ছিলেন বাংলার জমিদার শ্রেণি। তবে শেষ পর্যন্ত স্বদেশী আন্দোলন ব্যর্থ হয়। এর কারণ ছিল-

(ক) মুসলমানরা অংশগ্রহণ না করায় এ আন্দোলন জাতীয়রূপ লাভ করেনি

(খ) সরকারি দমন নীতি

(গ) বাংলার ব্যবসায়ী শ্রেণি অংশগ্রহণ না করা এবং

(ঘ) সন্ত্রাসবাদের পথ অনুসরণ করার ফলে এ আন্দোলন থেমে যায়।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ