• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
  • ইংরেজ উপনিবেশিক শাসন: ব্রিটিশ আমল
ইংরেজ উপনিবেশিক শাসন: ব্রিটিশ আমল

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

ইংরেজ উপনিবেশিক শাসন: ব্রিটিশ আমল

খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলন (১৯২০-১৯২৪ খ্রি.) The Khilafat and the Non Co-operation Movement (1920-1924 AD.)

খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলন ব্রিটিশ ভারতের রাজনৈতিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। যুগপৎ এ আন্দোলনে ভারতের সর্বস্তরের জনসাধারণ বিদেশি শাসনের বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সৃষ্টি করেছিল। নানাবিধ কারণে এ আন্দোলন ব্যর্থ হয়, তথাপিও এ আন্দোলন পরবর্তীকালে ভারতে হিন্দু ও মুসলমানদের এক বৃহত্তর সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত করেছিল।

খিলাফত আন্দোলন (Khilafat movement)

তুরস্কের খিলাফত রক্ষার জন্য (১৯২০-১৯২৪ খ্রি.) ভারতবর্ষের মুসলমানদের নেতৃত্বে যে আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল তাই ইতিহাসে খিলাফত আন্দোলন নামে পরিচিত। খোলাফায়ে রাশেদীনের খলিফাগণ, উমাইয়া এবং আব্বাসীয় শাসকবর্গ ১২৫৮ পর্যন্ত খিলাফত বজায় রাখেন। ১৫১৭ খ্রিষ্টাব্দে তুর্কি সুলতান প্রথম সেলিম মামলুক বংশ ধ্বংস করে আব্বাসীয় খলিফা আল মুতাওয়াক্কিলকে তুরস্কে নিয়ে এসে খিলাফতের সমস্ত ক্ষমতা ও মর্যাদা সেলিম গ্রহণ করেন। ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দে কামাল আতাতুর্ক কর্তৃক খিলাফত উচ্ছেদ পর্যন্ত তা বজায় ছিল। ভারতের মুসলমান সম্প্রদায় তুরস্কের সুলতানকে 'খলিফা' বা ধর্মগুরু বলে শ্রদ্ধা করতেন। তাকে ইসলামের রক্ষক মনে করতেন। ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তুরস্কের সুলতান জার্মানির পক্ষ অবলম্বন করলে ভারতের মুসলমানদের মধ্যে দারুণ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। কারণ একদিকে তারা তুরস্কের সুলতানের প্রতি ধর্মীয়ভাবে অনুগত ছিল, অন্যদিকে রাজনৈতিক কারণে ব্রিটিশ সরকারের প্রতি অনুগত ছিল।

ব্রিটিশ সরকারের প্রতিশ্রুতিতে শেষ পর্যন্ত ভারতের মুসলমানরা ব্রিটিশদের সহযোগিতা করতে থাকে। কিন্তু যুদ্ধাবসানে তুরস্ক জার্মানির পক্ষ অবলম্বন করার অপরাধে ব্রিটিশ তথা মিত্র শক্তি 'সেভার্সের সন্ধি-১৯২০' দ্বারা তুরস্ককে খণ্ড-বিখণ্ড করে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়। ফলে মুসলমানদের মধ্যে বিদ্রোহের আগুন ছড়িয়ে পড়ে। তারা খিলাফতের সম্মান ও অস্তিত্ব রক্ষার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন। 'খিলাফত' আন্দোলনের কারণ হিসেবে 'রম্যা রল্যা' মন্তব্য করেছেন যে, ভারতীয় মুসলমানরা বিবেকের একটি কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হন। এমতাবস্থায় ব্রিটিশ সরকার তুরস্কের সুলতান বা খলিফার স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ রাখার প্রতিশ্রুতি দিলে, ভারতীয় মুসলমানগণ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে। কিন্তু বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটেন এ প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করায় খিলাফত আন্দোলন শুরু হয় যাকে রম্যা রল্যা "খিলাফত বিদ্রোহ' বলে অভিহিত করেন।

মহাত্মা গান্ধীর পরিচালিত সত্যাগ্রহ আন্দোলনের সময় হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে সুসম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছিল। ঐ সময় হিন্দু নেতাগণ মসজিদে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য আমন্ত্রিতও হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় হিন্দু-মুসলিম ঐক্যে বিশ্বাসী মহাত্মা গান্ধী খিলাফত আন্দোলনকে সমর্থন করেন এবং আন্দোলনে সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসেন। জুডিথ ব্রাউনের মতে, ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দের মাঝামাঝি হতে গান্ধীজী প্রত্যক্ষভাবে খিলাফত আন্দোলনের সমর্থনে সোচ্চার হয়ে ওঠেন। ভারতীয় মুসলমানরাও গান্ধীজীর সমর্থনকে শ্রদ্ধার সাথে স্বীকার করে। ২৩ নভেম্বর ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত সর্বভারতীয় খিলাফত-সম্মেলনে মুসলমানরা গান্ধীজীকে সভাপতি নির্বাচিত করে। এ সম্মেলনে প্রস্তাব গৃহীত হয় যে, তুরস্কের প্রশ্নে মুসলমানদের পক্ষে সন্তোষজনক না হলে ব্রিটেনের বিরুদ্ধে বয়কট ও অসহযোগিতার অস্ত্র প্রয়োগ করা হবে।

১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে মুসলিম লীগ ও কংগ্রেসের নেতৃবৃন্দ ভাইসরয়ের সাথে সাক্ষাৎ করে মুসলমানদের অভিযোগগুলো তুলে ধরেন। কিন্তু ভাইসরয় তাদের স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন যে, জার্মানির পক্ষে অস্ত্র ধারণ করার জন্য তুরস্ককে ফলভোগ করতেই হবে। এ অবস্থায় মার্চ মাসে গান্ধীজী অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের এক ফতোয়া জারি করেন। ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে তুরস্কের সাথে মিত্রপক্ষের সেভার্সের শান্তি চুক্তি নামে কঠোর শর্তগুলো তুরস্কের ওপর চাপিয়ে দিলে মুসলমানদের মধ্যে দারুণ বিক্ষোভের সঞ্চার হয়। কেন্দ্রীয় খিলাফত কমিটি মুসলমানদের দাবির পুনরাবৃত্তি করে অহিংস-অসহযোগ আন্দোলনের প্রস্তাব গ্রহণ করে। জুন মাসে অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা হয়-(১) সরকারি খেতাব ও অবৈতনিক পদ বর্জন করা (২) সরকারের বে-সামরিক পদগুলো হতে ইস্তফা দেওয়া (৩) পুলিশ ও সেনাবাহিনী হতে পদত্যাগ করা (৪) খাজনা বন্ধ করা।

মাওলানা মোহাম্মদ আলী, মাওলানা শওকত আলী, মাওলানা আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে খিলাফত আন্দোলন চলতে থাকে। ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ অক্টোবর খিলাফত দিবস পালিত হয়। ভারতবর্ষে এ খিলাফত আন্দোলন জাতীয় আন্দোলনের সাথে মিলিত হয়ে দেশব্যাপী এক দুর্বার ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামের সূত্রপাত ঘটায়। তুরস্কের মুসলিম জাহানের খিলাফত মর্যাদা রক্ষার জন্য এ আন্দোলন হয়েছিল বলে এটি খিলাফত আন্দোলন নামে পরিচিত।

খিলাফত আন্দোলনে ৪টি দাবি ছিল- (১) তুরস্কের অখণ্ডতা বজায় রাখা (২) ইসলাম ধর্মের স্বার্থ রক্ষা করা (৩) আরবীয় দ্বীপের উপর মুসলমানদের নিয়ন্ত্রণ ও (৪) পূর্বের ন্যায় খলিফারাই পবিত্র স্থানগুলো তদারকি করবে।

খিলাফত আন্দোলনের গুরুত্ব: বিভিন্ন কারণে খিলাফত আন্দোলন ব্যর্থ হলেও ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে খিলাফত আন্দোলন এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।

প্রথমত, এ আন্দোলন সর্বপ্রথম ভারতে হিন্দু-মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে শামিল হতে প্রস্তুত করে।

দ্বিতীয়ত, ইংরেজ সরকারের 'ভাগ কর ও শাসন কর' নীতির বিরুদ্ধে ভারতবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়।

তৃতীয়ত, মধ্যবিত্ত ও বুদ্ধিজীবী মুসলমানদের মধ্যে ব্রিটিশ বিরোধী রাজনৈতিক চেতনার সৃষ্টি হয়।

চতুর্থত, এ আন্দোলনই পরবর্তীতে ভারতের মুসলমানদের স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সহায়ক হয়।

পঞ্চমত, এ আন্দোলন নগরের শিক্ষিত মুসলিম যুব সম্প্রদায়ের ওপর গভীর প্রভাব বিস্তার করে যা তাদের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করে।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ