• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
  • ইংরেজ উপনিবেশিক শাসন: ব্রিটিশ আমল
ইংরেজ উপনিবেশিক শাসন: ব্রিটিশ আমল

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

ইংরেজ উপনিবেশিক শাসন: ব্রিটিশ আমল

জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার কারণ

ব্রিটিশদের কাছ থেকে ভারতীয়দের দাবি-দাওয়া আদায়ের ক্ষেত্রে প্রথম রাজনৈতিক দল হচ্ছে জাতীয় কংগ্রেস। ১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দে জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার প্রধান কারণ হলো-

প্রথমত, ভারতবর্ষে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য বিদ্রোহ নিয়ন্ত্রণ করা। আই.সি.এস কর্মকর্তা থাকা অবস্থায় হিউম তার অভিজ্ঞতা দ্বারা উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছেন যে, ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ভারতে এক বড় ধরনের বিদ্রোহ আসন্ন। সুতরাং তিনি ভারতীয়দের অসন্তোষ প্রশমিত করার লক্ষ্যে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটদের নিকট লিখিত এক পত্রে একটি স্থায়ী সংস্থা গঠনের উপদেশ দেন।

দ্বিতীয়ত, ১৮৮২ খ্রিষ্টাব্দে অবসর গ্রহণের পর তিনি ভারতীয়দের স্বার্থ আদায়ের সংগ্রামে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে আগ্রহী হন।

তৃতীয়ত, সর্বোপরি তদানীন্তন ভারতের বড় লাট লর্ড ডাফরিনও এ সময় ভারত সরকারের সমালোচনার জন্য একটি বিরোধী রাজনৈতিক গোষ্ঠী গঠনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন।

এভাবে ডাফরিন ও হিউম-এর যৌথ পরিকল্পনা ও প্রচেষ্টায় ১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ ডিসেম্বর মুম্বাই শহরে জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হয়। 

জাতীয় কংগ্রেসের উদ্দেশ্য

মুম্বাইয়ে অনুষ্ঠিত কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন কলকাতার খ্যাতনামা ব্যারিস্টার উমেশ চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি কংগ্রেসের ৪টি মূল উদ্দেশ্যের কথা ঘোষণা করেন-

১। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসরত ভারতীয়দের মধ্যে যোগসূত্র এবং সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করা।

২। পারস্পরিক যোগাযোগের মাধ্যমে জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও প্রাদেশিকতার সংকীর্ণতা দূর করে জাতীয় ঐক্যের পথ প্রশস্ত করা।

৩। শিক্ষিত ব্যক্তিবর্গের মধ্যে আলাপ-আলোচনার দ্বারা সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যাবলি চিহ্নিত করে তার সমাধানের পথ নির্ধারণ করা। এবং

৪-। আগামী এক বছরের মধ্যে রাজনৈতিক অগ্রগতির জন্য কর্মসূচি গ্রহণ করা।

জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ছিল মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের সংগঠন। দাদাভাই নওরোজী, গোপালকৃষ্ণ, সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, বদরউদ্দীন তৈয়াবজী প্রমুখ ছিলেন উল্লেখযোগ্য নেতৃবৃন্দ। ১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দে দাদাভাই নওরোজীর সভাপতিত্বে দ্বিতীয় এবং ১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দে বদরউদ্দীন তৈয়াবজীর সভাপতিত্বে তৃতীয় অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ শান্তিপূর্ণ ও সাংবিধানিক উপায়ে ব্রিটিশ সরকারের নিকট দাবি-দাওয়া উত্থাপনের পক্ষপাতী ছিলেন। কিন্তু পরবর্তীকালে এ প্রতিষ্ঠান ভারতীয় অ্যাকটের বিলুপ্তিসাধন এবং কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সভাগুলোতে সংস্কার ও সম্প্রসারণ দাবি সর্বোপরি কংগ্রেসের জনপ্রিয়তায় ব্রিটিশ সরকার প্রতিষ্ঠানটির প্রতি বিরূপ মনোভাব গ্রহণ করেন। পর্যায়ক্রমে এতে চরমপন্থিদের অনুপ্রবেশ ঘটলে এ সংগঠন বিপ্লবী নীতি গ্রহণ করে। বিপিন চন্দ্র পাল, মতিলাল ঘোষ, বালগঙ্গাধর তিলক, লাল লাজপক্ষ রাও প্রমুখ নেতৃবৃন্দ ভারতীয় উপমহাদেশে হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে বিভোর হয়ে উঠলে মুসলমান নেতৃবৃন্দ হতাশ হয়ে পড়েন। কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার ২০ বছরের মধ্যে মুসলমানদের দাবি উপেক্ষিত বলে এতদিনে মুসলমানদের ঘুম ভাঙে। তারা অনুভব করল যে, কংগ্রেস মুসলমানদের সংগঠন নয় ও মুসলমানদের দাবির প্রতিও কংগ্রেসের নেতৃস্থানীয় লোকেরা শ্রদ্ধাশীল নয়। কংগ্রেসের কার্যক্রমে ব্রিটিশ সরকারও সন্তুষ্ট নয়। এখানে তারা ভেদাভেদনীতির সূত্র আবিষ্কার করে। মূলত কংগ্রেস নেতাদের কার্যকলাপে শঙ্কিত হয়ে কংগ্রেস আন্দোলনের মূলোচ্ছেদ করতে ব্রিটিশ সরকার সচেষ্ট হয়। যার বহিঃপ্রকাশ ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দের মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ