• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
  • ইংরেজ উপনিবেশিক শাসন: ব্রিটিশ আমল
ইংরেজ উপনিবেশিক শাসন: ব্রিটিশ আমল

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

ইংরেজ উপনিবেশিক শাসন: ব্রিটিশ আমল

লর্ড কার্জন (১৮৯৯-১৯০৫ খ্রি.) Lord Curzon (1899-1905 AD.)

লর্ড ডালহৌসির রাজনৈতিক শিষ্য নামে অভিহিত লর্ড কার্জন ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দে ৪০ বছর বয়সে ভারতের ভাইসরয় নিযুক্ত হন। ভাইসরয়ের তালিকায় তিনি ছিলেন সবচেয়ে কম বয়সী এবং সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। তিনি অপরিসীম কর্মশক্তি, বিদ্যা, বুদ্ধি, অদম্য উৎসাহ ও গভীর আত্মবিশ্বাসের সাথে এদেশের কল্যাণ সাধনে আত্মত্মনিয়োগ করেন। শত কর্মব্যস্ত তার মধ্যেও তিনি ৩টি বিখ্যাত গ্রন্থ প্রণয়ন করেন। ঐতিহাসিক পি. ই. রবার্টস বলেছেন, "ভালো বা মন্দ যাই হোক, লর্ড ডালহৌসির পর কোনো রাজপ্রতিনিধি তাঁর ন্যায় সমগ্র ভারতীয় শাসনব্যবস্থায় এতদূর প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি।"

ভারতবর্ষে ব্রিটিশ স্বার্থ ও অধিকার রক্ষাই ছিল তার বৈদেশিক নীতির অন্যতম লক্ষ্য। ঐতিহাসিক পি. ই. রবার্টস-এর মতে, "লর্ড কার্জনের বৈদেশিক নীতি প্রধানত উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের উপজাতি, আফগানিস্তান, পারস্য ও তিব্বত সমস্যার সাথে সম্পৃক্ত ছিল।" তিনি ভারতবর্ষে শান্তি স্থাপন এবং উন্নয়নের লক্ষ্যে নিম্নবর্ণিত বেশকিছু পদক্ষেপ
গ্রহণ করেন-

কৃষি সংস্কার: দেশের মেরুদণ্ড কৃষির উন্নয়নের জন্য লর্ড কার্জন সর্বপ্রথম 'সমবায় ঋণদান সমিতি' স্থাপন করেন। ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মহাজনদের হাত হতে কৃষকদের রক্ষা করার মহান উদ্দেশ্যে 'পাঞ্জাব ভূমি হস্তান্তর আইন' বিধিবদ্ধ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দে 'বিশ্ববিদ্যালয় আইন' পাস করে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সরকারি নিয়ন্ত্রণাধীনে আনেন। এ আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্য ছিল উচ্চশিক্ষার সম্প্রসারণ। অবশ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওপর সরকারি কর্তৃত্ব বৃদ্ধি পাওয়ায় স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় এর ঘোর বিরোধিতা করেন। 'কার্জন হল' (বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিজ্ঞান অনুষদ) তাঁর স্মৃতি বহন করছে। তিনি প্রাচীন কীর্তিসমূহ সংরক্ষণের জন্য 'প্রাচীন কীর্তি রক্ষা আইন' প্রবর্তন করে একটি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ স্থাপন করেন। কলকাতার বিখ্যাত ইম্পিরিয়াল লাইব্রেরি (ন্যাশনাল লাইব্রেরি) তার একটি স্মরণীয় কীর্তি।

শিল্প-বাণিজ্যের উন্নতি: দেশীয় শিল্প-বাণিজ্যের উন্নতির জন্য লর্ড কার্জন একটি সরকারি শিল্প বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন। দরিদ্র জনসাধারণের সুবিধার জন্য তিনি 'লবণ কর' এবং মধ্যবিত্তদের জন্য 'আয়কর' হ্রাস করেন।

সামরিক ও পুলিশ বিভাগের সংস্কার ড. আর সি মজুমদার বলেছেন, "লর্ড কার্জনের ভাইসরয় থাকাকালীন সময় সামরিক বিভাগে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটেছিল।

উত্তর ভারত সীমান্ত নীতি: লর্ড কার্জন একজন বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ ছিলেন। ভারতের শাসনভার গ্রহণ করেই তিনি উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত সমস্যা সমাধানে আত্মনিয়োগ করেন। তিনি পূর্ববর্তী শাসকদের 'অগ্রসর নীতি' পরিহার করে সীমান্ত এলাকা থেকে সৈন্য 'প্রত্যাহার নীতি' গ্রহণ করেন। তিনি উপজাতিদের দ্বারা গঠিত সৈন্যবাহিনী সীমান্ত এলাকায় মোতায়েন করার ব্যবস্থা করেন। তিনি ব্রিটিশ সৈন্যসংখ্যা বৃদ্ধি করেন। সীমান্ত এলাকায় দ্রুত শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে রেল লাইন নির্মাণ করেন। তিনি পেশোয়ারে রাজধানী স্থাপন করে একটি নতুন প্রদেশ গঠন করেন।

প্রশাসনিক সংস্কার: তিনি প্রশাসনের দক্ষতা বাড়ানোর ওপর বেশ গুরুত্ব আরোপ করেন। প্রশাসনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি আলাদা আলাদা কমিশন গঠন করেন। তার প্রশাসনিক সংস্কারের মধ্যে আর্থিক সংস্কারও অন্তর্ভুক্ত ছিল। বাস্তববাদী লর্ড কার্জন বুঝতে পেরেছিলেন, আর্থিক ভিত্তি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে ভারতে প্রশাসনিক কর্তৃত্ব টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। তিনি দুর্ভিক্ষ, ভূমি, রাজস্ব, সেচ ব্যবস্থা, কৃষি, রেলপথ, কর ইত্যাদি বিষয়ে আইন পাস করেন। ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দের দুর্ভিক্ষে তিনি ত্রাণ তৎপরতা জোরদার করেছিলেন। সেচ ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য তিনি ঝিলাম খাল খননসহ বেশ কতগুলো উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

ভূমি সংস্কার: ভূমি ব্যবস্থাপনায় লর্ড কার্জনের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তিনি লক্ষ করেছিলেন যে, সরকারি মালিকানাধীন খাস জমি চাষকারী কৃষকদের দেওয়া খাজনার পরিমাণ জমিদারির অধীন কৃষকদের দেওয়া খাজনার তুলনায় অনেক বেশি। এজন্য তিনি খাস জমির খাজনার পরিমাণ হ্রাস করেন। ভূমি ব্যবস্থায় তাঁর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান 'পাঞ্জাব ল্যান্ড এলিয়েনেশন অ্যাক্ট' আইনের লক্ষ্য ছিল- (১) ঋণের দায়ে কৃষককে জমি থেকে উৎখাত হওয়া থেকে রক্ষা করা। (২) অকৃষিজীবী মানুষকে জমি গ্রহণ থেকে বিরত রাখা। (৩) কৃষি ব্যবস্থার উন্নতির জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক একটি কৃষি বিভাগ সৃষ্টি এবং কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা। এভাবে তিনি উন্নয়নমূলক বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে ভারতীয়দের মন জয় করেছিলেন।

প্রত্নতত্ত বিভাগ, গ্রন্থগার ও ক্যাডেট কোর প্রতিষ্ঠা: লর্ড কার্জন ভারতের প্রাচীন ঐতিহাসিক কীর্তিসমূহ আবিষ্কার, সংরক্ষণ এবং ব্যাপক ঐতিহাসিক গবেষণা চালানোর জন্য একটি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন। যা ঐতিহাসিকদের জন্য একটি গুরুত্ব প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচ্য। তিনি কলকাতায় ভারতের বৃহত্তর গ্রন্থাগার ইম্পেরিয়াল লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করেন। দেশীয় রাজন্যবর্গের পুত্রদের সামরিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য তিনি ইম্পেরিয়াল ক্যাডেট কোর প্রতিষ্ঠা করে সুনাম অর্জন করেন।

লর্ড কার্জনের ভারতীয়দের প্রতি সহানুভূতিশীল চিন্তা-ভাবনা এবং বিশাল কর্মপ্রবাহ এটাই প্রমাণ করে, লর্ড ডালহৌসির পর লর্ড কার্জনই ভারতের শ্রেষ্ঠ রাজপ্রতিনিধি। লর্ড কার্জনের শাসনামল অভ্যন্তরীণ সংস্কারের জন্য ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে বিখ্যাত।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ