• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
  • ইংরেজ উপনিবেশিক শাসন: ব্রিটিশ আমল
ইংরেজ উপনিবেশিক শাসন: ব্রিটিশ আমল

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

ইংরেজ উপনিবেশিক শাসন: ব্রিটিশ আমল

স্যার সৈয়দ আহমদ খান ও আলীগড় আন্দোলন (১৮১৭-১৮৯৮ খ্রি.) Sir Syed Ahmed Khan and Aligarh Movement (1817-1898 AD.)

ব্রিটিশ শাসিত ভারতে যেসব মনীষী ও সমাজ সংস্কারক অধঃপতিত পশ্চাৎপদ মুসলমানদের অজ্ঞতা, অশিক্ষা, সামাজিক শোষণ, রাজনৈতিক বঞ্চনা ও অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন, তাদের মধ্যে স্যার সৈয়দ আহমদ খান অন্যতম। ১৮১৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ অক্টোবর দিল্লির এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে তার জন্ম। লেখাপড়ায় তিনি বেশিদূর এগোতে পারেননি। তিনি কোনো ইংরেজি শিক্ষা লাভও করেননি। মাদ্রাসায় পড়াশুনা করেছেন। ১৮৩৭ খ্রিষ্টাব্দে পড়াশুনা ত্যাগ করে কোম্পানির চাকরি গ্রহণ করেন। ১৮৪১-১৮৫৪ খ্রিষ্টাব্দে ফতেপুর সিক্রির মুন্সেফ বা সাব জজ পদে নিয়োগ পান। এই আট বছর তিনি ব্যাপক পড়াশুনা করেন। কর্মময় জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, উপমহাদেশে মুসলমানদের অধঃপতনের হাত থেকে মুক্ত করার জন্য পাশ্চাত্য শিক্ষার বিকল্প নেই। এ কারণেই তিনি আলীগড়কে কেন্দ্র করে সংস্কারমূলক আন্দোলন শুরু করেন।

স্যার সৈয়দ আহমদ খান একান্তভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে, মুসলমানদের দুর্দশার প্রধান কারণ দুটি। (১) পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রতি ঘৃণা ও (২) মুসলমানদের ধর্মীয় গোঁড়ামি। ইংরেজরা মোগল তথা মুসলমানদের কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছিল সে কারণে মুসলমানরা ব্রিটিশদের প্রতি রুষ্ট। ইংরেজদের ধারণাও ছিল, ব্রিটিশ বিরোধী সকল আন্দোলন বিশেষ করে ওহাবি, ফরায়েজি এবং ১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দে মহাবিদ্রোহের ইন্দনদাতা হচ্ছে মুসলমানরা। অপরদিকে মুসলমানদেরও ধর্মীয় কারণে ইংরেজদের পাশ্চাত্য শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রতি ঘৃণা ও বিতৃষ্ণার ভাব ছিল। এর ফলে ব্রিটিশরা হিন্দু তোষণনীতি গ্রহণ করে। মুসলমানদের সকল সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে। এই সুযোগে হিন্দুরা ইংরেজদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করে শিক্ষা-দীক্ষায় এগিয়ে যায়। প্রশাসনের উচ্চ পদগুলোতে হিন্দুরা চাকরি গ্রহণ করে উন্নত জীবনের অধিকারী হয়। রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক সকল ক্ষেত্রেই হিন্দুরা এগিয়ে যায় আর মুসলমানরা থাকে পিছিয়ে। মুসলমানদের এরূপ চরম দুর্দিনে ত্রাণকর্তারূপে স্যার সৈয়দ আহমদ খানের আবির্ভাব।

স্যার সৈয়দ আহমদ খানের কর্মকাণ্ড মুসলমানদের অজ্ঞতা দূরীভূত করতে প্রথমে তিনি মুসলমানদের শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি মুসলমানদের ইংরেজি শিক্ষা গ্রহণ ও ইংরেজ শাসকদের সাথে সহযোগিতা করার উপদেশ দেন। সিপাহি বিপ্লবে মুসলমানরা দায়ী ইংরেজদের এরূপ বদ্ধমূল ধারণা থেকে বের করে নিয়ে আসতে তিনি দুখানা বই লিখেন- (১) সিপাহী বিদ্রোহের কারণ (২) ভারতের রাজভক্ত মুসলমান।

ইংরেজি শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে তিনি ১৮৬৪ খ্রিষ্টাব্দে উত্তর ভারতের গাজীপুরে একটি ইংরেজি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। ইংরেজি বই অনুবাদ করার জন্য তিনি 'বিজ্ঞান সমিতি' নামে একটি সংস্থা গড়ে তোলেন। পাশ্চাত্যের ভাবাদর্শ ও শিক্ষা ব্যবস্থা স্বচক্ষে দেখার জন্য তিনি বিলেতে ভ্রমণ করেন এবং দেশে ফিরে ১৮৭০ খ্রিষ্টাব্দে 'তাহজীবুল আখলাক' নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। পত্রিকা প্রকাশের পাশাপাশি তিনি 'ভারতীয় মুসলমানদের শিক্ষা উন্নয়ন সমিতি' নামে একটি সংস্থা গঠন করেন। তিনি কংগ্রেসী আন্দোলনকে 'অস্ত্রহীন গৃহযুদ্ধ' বলে বর্ণনা করে মুসলমানদের কংগ্রেস থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দেন। তার কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ব্রিটিশ সরকার ১৮৮৮ ৮ খ্রিষ্টাব্দে খ্রিষ্টাব্দে তাকে 'নাইট' উপাধিতে ভূষিত করেন। ১৮৯৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পরলোকগমন করেন।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ