- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
- ইংরেজ উপনিবেশিক শাসন: ব্রিটিশ আমল
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
ইংরেজ উপনিবেশিক শাসন: ব্রিটিশ আমল
আলীগড় আন্দোলন (Aligarh movement)
১৭৫৭ সালে পলাশীর প্রান্তে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমি অস্তমিত হলে পাক-ভারতের মুসলমানদের জীবনে নেমে আসে দুর্যোগের ঘনঘটা। ব্রিটিশ শাসিত ভারতীয় মুসলমানদের সামাজিক শোষণ, রাজনৈতিক বঞ্চনা এবং অর্থনৈতিক দুর্দশা মোকাবিলা করে অধঃপতিত মুসলমানদের মর্যাদা সহকারে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে স্যার সৈয়দ আহমদ খান আলীগড়কে কেন্দ্র করে যে সংস্কারমূলক আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন তাই ইতিহাসে 'আলীগড় আন্দোলন' নামে পরিচিত। স্যার সৈয়দ আহমদ খান সকল কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন আলীগড়কে কেন্দ্র করে।
ইংরেজরা মুসলমানদের নিকট থেকে শাসন ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছিল। তাই ইংরেজরা মুসলমানদের শাসন ক্ষমতার প্রতিদ্বন্দ্বী ও দাবিদার মনে করত। অন্যদিকে, মুসলমানরাও ইংরেজদের শত্রু মনে করত। ফলে উভয়ের মধ্যে অসহযোগিতা চলতে থাকে। এ সুযোগে হিন্দুরা ইংরেজদের সহযোগিতায় এগিয়ে যেতে থাকে। স্যার সৈয়দ আহমদ খান বাস্তব দৃষ্টিতে উপলব্ধি করলেন ইংরেজ-মুসলিম সু-সম্পর্ক স্থাপনই অধঃপতিত মুসলমানদের উন্নতির অন্যতম পূর্বশর্ত।
আলীগড় আন্দোলনের লক্ষ্য অধঃপতিত মুসলমানদের মর্যাদা সুপ্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে ব্রিটিশ শাসকদের সঙ্গে সহযোগিতা ও ভালো সম্পর্ক স্থাপনের নের মাধ্যমে আলীগড় আন্দোলন নিম্নবর্ণিত সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করে:
১। ধর্মীয় গোঁড়ামি, কুসংস্কার, অশিক্ষা, অজ্ঞতা এবং অধঃপতনের হাত থেকে মুসলমানদের রক্ষা করা।
২। মুসলমানদের প্রতি ব্রিটিশদের সকল ভুল বোঝাবুঝির অবসান করা।
৩। মুসলমানদের মধ্যে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রচলন করা।
৪। শিক্ষা, সংস্কৃতি, রাজনীতি ও অর্থনৈতিক দিক থেকে মুসলমানদের হিন্দুদের সমকক্ষ করে তোলা।
৫। মুসলমানদের ব্রিটিশ প্রশাসনের সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধানের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা।
উপরিউক্ত লক্ষ্যার্জনের জন্য আলীগড় আন্দোলনের সূচনালগ্ন থেকে স্যার সৈয়দ আহমদ খান বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেন। নিম্নে এসকল কর্মসূচির সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রদান করা হলো-
১। তিনি The Loyal Mohammadans of India এবং The Causes of India Mutiny নামক গ্রন্থ প্রকাশ করে ইংরেজ ও মুসলমানদের মধ্যকার ভুল বুঝাবুঝির অবসানের চেষ্টা করেন এবং সিপাহি বিপ্লবের প্রকৃত কারণ ব্যাখ্যা করে মুসলমানদের প্রতি ইংরেজদের আক্রোশ ও বিদ্বেষভাব দূর করার চেষ্টা করেন।
২। ১৮৬৪ সালে তিনি Scientific Society বা বিজ্ঞান সমিতি প্রতিষ্ঠা করে ইতিহাস, বিজ্ঞান ও সাহিত্যের শ্রেষ্ঠতম গ্রন্থাবলি অনুবাদের ব্যবস্থা করেন; যা পরবর্তীতে Literary and Scientific Society নামে পরিচিত হয়। এটি মুসলমানদের মধ্যে পাশ্চাত্যের শিক্ষা ও জ্ঞান-বিজ্ঞান প্রচারের প্রধান কেন্দ্র ছিল।
৩। মুসলমানদের সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে তিনি 'তাহযিব উল আখলাক' পত্রিকা প্রকাশ করেন (Publication of the Tahzib-Ul-Akhlaov)। মুসলমানদের ধর্মীয় ও সামাজিক কুসংস্কার, নারী শিক্ষার উদাসীনতা প্রভৃতির কঠোর সমালোচনা পত্রিকার মাধ্যমে করা হয়।
৪। তিনি মুসলমানদের মধ্যে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে 'ভারতীয় মুসলিম শিক্ষা উন্নয়ন সমিতি' (Society of Educational Progress of Indian Muslims) প্রতিষ্ঠা করেন। এই সমিতির মাধ্যমেই ১৮৭৫ সালের মে মাসে 'Mohammadan Anglo Oriental College' স্থাপিত হয়। ১৮৭৭ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি আলীগড় কলেজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরে এটি 'আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে' উপনীত হয়। ব্রিটিশ শাসিত ভারতবর্ষে মুসলমানদের উচ্চ শিক্ষা তথা পাশ্চাত্য শিক্ষা লাভের ক্ষেত্রে এ সমিতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৫। মুসলমানদের মধ্যে উন্নত চিন্তাধারা, ইংরেজি শিক্ষার গুরুত্ব উপলব্ধি এবং গোঁড়ামি দূর করার লক্ষ্যে তিনি ১৮৮৬ সালে 'মুসলিম সাহিত্য সমাজ' (Mohammadan Literary Society) গঠন করেন। এর মাধ্যমে বিভিন্ন সভা-সমিতি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে পাশ্চাত্য শিক্ষার সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি এবং প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করে তোলা হয়।
উল্লিখিত কার্যাবলি ছাড়াও আলীগড় আন্দোলন কয়েকটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করে। এ সকল পত্রিকার মধ্যে "ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান এসোসিয়েশন" এবং "আলীগড় ইনস্টিটিউট গেজেট" অন্যতম। এ সকল পত্রিকা একই সাথে উর্দু ও ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত হওয়ায় ব্রিটিশদের শাসন সম্পর্কে এদেশবাসী জানার সুযোগ লাভ করে।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ

