• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
  • ইংরেজ উপনিবেশিক শাসন: ব্রিটিশ আমল
ইংরেজ উপনিবেশিক শাসন: ব্রিটিশ আমল

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

ইংরেজ উপনিবেশিক শাসন: ব্রিটিশ আমল

ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস The Indian National Congress

"১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার ফলে ভারতের রাজনৈতিক জীবনে একটি নতুন যুগের সূচনা হয়"- আর সি মজুমদার।

কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার পটভূমি

ব্রিটিশ শাসননীতির বিরুদ্ধে শিক্ষিত ভারতবাসীর মধ্যে ক্রমশ ক্ষোভ ও অসন্তোষ দানা বেঁধে উঠতে থাকে, যা ক্রমশ জাতীয় চেতনায় রূপ নেয়। আর এ চেতনা থেকে ১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দে এর পূর্বে ও পরে ছোটখাটো অনেক রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে ওঠে। ভারতীয় উপমহাদেশের জনগণের ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য জনমত গঠনের লক্ষ্যে ১৮৪৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় 'ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি'। ১৮৫১ খ্রিষ্টাব্দে স্যার সৈয়দ আহমদ খান কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয় 'ব্রিটিশ ইন্ডিয়া অ্যাসোসিয়েশন'। এই অ্যাসোসিয়েশনকে জাতীয় কংগ্রেসের পূর্বসূরী হিসেবে গণ্য করা হয়। এসকল সমিতি শিক্ষিত অভিজাত ও জমিদার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতো বিধায় মধ্যবিত্ত বা সাধারণ জনগণ এর ধারেকাছে যেতে পারত না। যার ফলে এসকল সমিতির সাথে সাধারণ মানুষের সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। তবে ব্রিটিশ ইন্ডিয়া অ্যাসোসিয়েশনের অনুকরণে মুম্বাইয়েও সংগঠন গড়ে ওঠে। ১৮৭৬ খ্রিষ্টাব্দে বাংলার নেতা সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জীর নেতৃত্বে তৃত্বে 'ইন্ডিয়া অ্যাসোসিয়েশন' বা ভারত সভা নামে আর একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়। এ সংগঠনটি শিক্ষিত মধ্যবিত্তদের সংগঠনে পরিণত হয়। এ সংগঠনের মাধ্যমে শিক্ষিত মধ্যবিত্তদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়, রাজনৈতিক সচেতনতার সৃষ্টি হয় এবং চাকরিসহ বিভিন্ন দাবি-দাওয়া আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলনের সূত্রপাত হয়।

১৮৭৭ খ্রিষ্টাব্দে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার বয়সসীমা একুশ থেকে নামিয়ে উনিশে আনা হলে সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জীর নেতৃত্বে আগ্রা, দিল্লি, আলীগড়, লাহোর, কানপুর, বেনারস ও অমৃতসরসহ ভারতে বিভিন্ন প্রদেশের গুরুত্বপূর্ণ শহরে প্রতিবাদ সভা হয়। এ আন্দোলন যখন চলমান তখন ১৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার 'ভার্নাকুলার প্রেস অ্যাক্ট' জারি করে দেশীয় সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণের চেষ্টা করলে এর বিরুদ্ধেও আন্দোলন শুরু হয়। এসব অসন্তোষের ক্ষত শুকাতে না শুকাতেই ইলবার্ট বিল নিয়ে শুরু হয় আর এক বিতর্ক। ১৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দে এক আইন বলে ভারতীয় বিচারকরা ইউরোপীয় কোনো নাগরিকদের বিচার করতে পারত না। এ বৈষম্য দূর করার জন্য লর্ড লিটন ভারতের ভাইসরয় নিযুক্ত হয়ে (১৮৭৬-১৮৮০) আইন সদস্য মি. ইলবার্টের মাধ্যমে একটি বিল তৈরি করেন। যে বিলে ইউরোপীয় নাগরিকদের বিচার করার এখতিয়ার ভারতীয় বিচারকদের দেওয়া হয়। এই বিলের বিরুদ্ধে ভারতবর্ষে অবস্থানরত ইউরোপীয় নাগরিকরা ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু করে।

বিক্ষোভের মুখে এ বিলের কিছুটা সংস্কার করে বিচারকার্যে জুরির ব্যবস্থা রাখা হয়, যাতে অর্ধেক বিচারক ইউরোপীয় থাকবে। ভারতবর্ষের মাটিতে ইউরোপীয়দের বিক্ষোভভারতীয়দের মর্যাদায় আঘাত হানে। এমতাবস্থায় ভারতবাসী সর্বভারতীয় একটি সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা একান্তভাবে উপলব্ধি করে। পূর্বের আন্দোলনের সাথে এ উপলব্ধি নতুন করে যুক্ত হওয়ায় ব্রিটিশ সরকার কিছুটা চাপের মুখে পড়ে। এজন্য ভারতীয়দের দাবি ও আন্দোলনকে নিয়মতান্ত্রিক পথে পরিচালিত করা এবং ভারতীয়দের মধ্যে সৃষ্ট উত্তেজনা প্রশমিত করার জন্য মনোযোগী হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ভারতীয় সিভিল সার্ভিসের অবসরপ্রাপ্ত অফিসার অ্যালান অক্টাভিয়ান হিউম-এর উদ্যোগে এবং ভারতের ভাইসরয় লর্ড ডাফরিনের সহযোগিতায় ১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ ডিসেম্বর মুম্বাই শহরে 'ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস' (ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস) প্রতিষ্ঠিত হয়।

তবে একথাও সত্য যে, ১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতায় সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় কর্তৃক আহুত ভারতীয় জাতীয় সম্মেলনে জাতীয় কংগ্রেস গঠনের পরিকল্পনা করা হয়। ভারতীয় শিক্ষিত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির চিন্তা-চেতনা ও রাজনৈতিক আশা-আকাঙ্ক্ষাকে শাসনতান্ত্রিক পথে পরিচালনা করার জন্য ইংরেজ আমলা অ্যালান অক্টাভিয়ান হিউম একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন। তিনি ছিলেন ভারতের একজন জবরদস্ত ইন্ডিয়ান সিভিল সার্জন (আই.সি.এস কর্মকর্তা)। তিনি ১৮৮২ খ্রিষ্টাব্দে অবসর গ্রহণ করেন। কংগ্রেসের প্রথম সভাপতি নিযুক্ত হন ব্যারিস্টার উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হন অ্যালান অক্টাভিয়ান হিউম। তিনি একনাগাড়ে ২৫ বছর সম্পাদকের পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ