• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
  • ইংরেজ উপনিবেশিক শাসন: ব্রিটিশ আমল
ইংরেজ উপনিবেশিক শাসন: ব্রিটিশ আমল

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

ইংরেজ উপনিবেশিক শাসন: ব্রিটিশ আমল

মুসলিম লীগ-১৯০৬ The Muslim League-1906

মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার পটভূমি

১৮৯২ খ্রিষ্টাব্দে প্রবর্তিত ভারতীয় কাউন্সিল অ্যাক্ট মুসলমানদের সন্তুষ্ট করতে পারেনি। এমতাবস্থায় বঙ্গভঙ্গ বিরোধীয় হিন্দু সম্প্রদায়কে সন্তুষ্ট করার জন্য ভারত সচিব লর্ড মর্লি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এক বক্তৃতায় ভারতের আইন পরিষদে আরও প্রতিনিধি বৃদ্ধির ইঙ্গিত প্রদান করেন। এতে মুসলমানরা বিচলিত হয়ে পড়ে। অতঃপর আলীগড়পস্থি মুসলিম নেতা মহসিন উল-মূলকের নেতৃত্বে বড়লাটের সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য একটি প্রতিনিধি দল গঠন করেন এবং একটি স্মারকলিপি প্রণয়ন করেন। মহামান্য আগাখানের নেতৃত্বে ৩৫ সদস্যের প্রতিনিধি দলটি ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দের ১ অক্টোবর ভারতের ভাইসরয় বড় লাট মিন্টোর সাথে সিমলায় সাক্ষাৎ করে মুসলমানদের স্বার্থ সংবলিত স্মারকলিপিটি পেশ করেন। এরই প্রেক্ষিতে বড়লাট আশ্বাস দিয়ে বলেন, ভারত শাসন সংস্কার প্রবর্তিত হলে মুসলমানদের রাজনৈতিক স্বার্থরক্ষা করা হবে। এ ঘটনা ইতিহাসে বিখ্যাত সিমলা ডেপুটেশন নামে পরিচিত। সিমলা ডেপুটেশনের অন্যতম দাবি ছিল,

(১) কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক আইন পরিষদে এবং লোকাল বোর্ড, মিউনিসিপ্যালিটি, জেলা বোর্ড ইত্যাদিতে মুসলমানদের স্বতন্ত্র আসন সংরক্ষণ

(২) স্বতন্ত্র নির্বাচন প্রথার প্রবর্তন

(৩) স্বতন্ত্র মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা।

বড়লাট মুসলমানদের দাবিগুলো সহানুভূতির সাথে বিবেচনার আশ্বাস দেন। এতে মুসলমানদের নেতৃবৃন্দ ভীষণভাবে উৎসাহিত হন। হিন্দু নেতৃবৃন্দ এ ডেপুটেশনের তীব্র নিন্দা করে (১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে মর্লি-মিন্টো সংস্কার আইনে পৃথক নির্বাচনের দাবি স্বীকৃত হলে সিমলা ডেপুটেশনের সফলতা বাস্তবে পরিণত হয়)।

হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের স্বার্থ ও অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে ১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে কংগ্রেসের কিছু সংখ্যক নেতার সাম্প্রদায়িক কর্মকাণ্ড বিশেষ করে বালগঙ্গাধর তিলকের উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদী ধ্যান-ধারণায় মুসলমানরা হতাশ হয়। তারা উপলব্ধি করতে থাকে, কংগ্রেসের মাধ্যমে মুসলমানদের স্বার্থরক্ষা হবে না। ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দের বঙ্গভঙ্গ রদের জন্য হিন্দু সম্প্রদায়ের গণআন্দোলন ও মুসলমানদের জন্য পৃথক সংগঠনের প্রয়োজন একান্তভাবে অনুভব হয়। সর্বোপরি সিমলা ডেপুটেশনে লর্ড মিন্টোর আশ্বাসে মুসলমানরা উৎসাহিত হন। এ পরিস্থিতিতে ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ ডিসেম্বর নবাব স্যার সলিমুল্লাহ ঢাকায় 'নিখিল ভারত মুসলিম এডুকেশন কনফারেন্স' আহ্বান করেন। উক্ত কনফারেন্সে উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রতিনিধিরা যোগদান করেন। কনফারেন্সে নবাব স্যার সলিমুল্লাহ প্রস্তাব করেন যে, যেহেতু ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানদের নিজস্ব রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন, সেহেতু এ সভায় নিখিল ভারত মুসলিম সম্মেলন নামে একটি স্থায়ী প্রতিষ্ঠান গঠন সম্পর্কে বিবেচনা করা হোক।

মহসিন-উল-মূলক, এ.কে. ফজলুল হক, হাকিম আজমল, মওলানা মুহম্মদ আলি, মিয়া মোহাম্মদ সফি প্রমুখ বিশিষ্ট নেতৃবর্গ নবাব স্যার সলিমুল্লাহর প্রস্তাব সমর্থন করেন। তদনুযায়ী ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ ডিসেম্বর ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানদের নিজস্ব স্থায়ী রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে এবং এর নামকরণ হয় 'অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগ' যা সাধারণত মুসলিম লীগ নামেই পরিচিত।

মুসলিম লীগের উদ্দেশ্য

মুসলিম লীগের গঠনতন্ত্রে ৩টি উদ্দেশ্যের কথা বলা হয়-

১। ব্রিটিশ সরকারের প্রতি ভারতের মুসলমানদের আনুগত্যবোধ গড়ে তোলা এবং সরকার ও মুসলমানদের মধ্যে সকল ভুল বোঝাবুঝির অবসান করা।

২। মুসলমানদের রাজনৈতিক অধিকার ও স্বার্থ রক্ষা করা এবং সরকারের নিকট তা ব্যক্ত করা।

৩। এসব উদ্দেশ্য কোনো মতে ক্ষুণ্ণ না করে ভারতের অন্যান্য সম্প্রদায়ের সাথে বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্ক বজায় রাখা।

'সর্বভারতীয় মুসলিম লীগের' প্রথম সভাপতি নির্বাচিত হন মহামান্য আগাখান এবং যুগ্ম সম্পাদক হন যথাক্রমে নওয়াব মহসিন-উল-মূলক ও নওয়াব ভিখার-উল-মূলক।

বঙ্গভঙ্গ রদে হিন্দুদের অনমনীয়তা মুসলিম লীগকে মর্যাদার লড়াইয়ে অবতীর্ণ করে। বঙ্গভঙ্গ রদ রোধ করতে ১৯১০ এর পূর্বে মুসলিম লীগ ৪টি অধিবেশনে মুসলমানদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তন্মধ্যে আদালতসমূহে বিচারক নিয়োগ, চাকরিতে ন্যায্য অধিকার ও কেন্দ্রীয় প্রাদেশিক আইন পরিষদসহ বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে মুসলমানদের জনসংখ্যানুপাতে আসন এবং তা মুসলমানদের দ্বারা স্বতন্ত্র নির্বাচনের মাধ্যমে পূরণের ব্যবস্থাসহ মুসলমানদের ন্যায্য প্রতিনিধিত্ব দিয়ে মুসলমানদের শিক্ষা অর্জনের অধিকার ও স্বার্থ সংরক্ষণের কথা বলা হয়।

সিদ্ধান্ত আকারে গৃহীত সকল বিষয়াদি কার্যসূচির আওতায় নিয়ে এসে মুসলিম লীগ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে অচিরেই সংখ্যালঘু মুসলমানদের প্রাণের সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। মুসলিম লীগ মুসলমানদের স্বার্থ সংরক্ষণে ইংরেজদের সঙ্গে দরকষাকষি করে। ফলে ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তান রাষ্ট্র জন্মলাভ করে।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ